উপাত্ত সুরক্ষা আইনের আলোচনায় থাকতে পারবে বিদেশি কোম্পানিও

“তারা বলেছেন, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকের সময়ে আন্তর্জাতিক কোম্পানির প্রতিনিধিরা থাকতে পারবে কিনা। আমি বলেছি, থাকতে পারবে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2023, 11:00 AM
Updated : 9 March 2023, 11:00 AM

ডেটা বা উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে অংশীজনদের আলোচনায় বিদেশি কোম্পানির প্রতিনিধিরাও থাকতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

প্রস্তাবিত ওই আইন নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে আইনমন্ত্রী বরাবরের মতই বলেন, “ডেটা প্রটেকশন আইন উপাত্ত নিয়ন্ত্রণের জন্য করা হচ্ছে না, এটি করা হচ্ছে উপাত্ত সুরক্ষার জন্য।

“আলোচনার মধ্যে তারা বলেছেন যে, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকের সময়ে আন্তর্জাতিক কোম্পানির প্রতিনিধিরা থাকতে পারবে কিনা। আমি বলেছি, আন্তর্জাতিক কোম্পানির প্রতিনিধিরা থাকতে পারবে।”

‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২২' শীর্ষক আইন করার উদ্যোগ নেওয়ার পর এটির খসড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সবার মতামত নেয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত ২৬ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে এ আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করার খবর দিয়ে অল্প দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সভায় আইনটি তোলার কথা জানিয়েছিলেন।

একই অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, কাউকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নয়; ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের তথ্য সুরক্ষায় উপাত্ত সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই তা করা হবে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও সেই কথা জানান তিনি।

ডেটা সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে সরকারের কাছে ইতোমধ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। পাশাপাশি উদ্বেগ রয়েছে ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ওভার-দ্য-টপ প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য প্রণয়ন করা প্রবিধানগুলো নিয়েও।

ডেটা সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে উদ্বেগের জায়গা ব্যাখ্যা করে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছিলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন যে, যদি ডেটা স্থানীয়করণের শর্তকে কঠোরভাবে আরোপের মাধ্যমে ডেটা সুরক্ষা আইন পাস করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন কিছু আমেরিকান কোম্পানি বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে।

“একইভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারকারীদের তৈরি করা কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর কারণে অপরাধের দায় নিয়ে ফৌজদারি আইনের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে এখানকার ব্যবসায় তারা বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকবে।”

রাষ্ট্রদূতের এমন আশঙ্কার মধ্যে ইউরোপীয় দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিদেশি কোম্পানির প্রতিনিধিদের মতামত নেওয়ার কথা জানালেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে ইতোমধ্যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে। আরেকটি বৈঠক করা হবে, যেখানে থাকবেন বহুজাতিক কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

তবে কোন কোন কোম্পানির প্রতিনিধিরা ওই বৈঠকে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে এবং সেই বৈঠক কবে হবে, তা স্পষ্ট করেননি মন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইলির পাশাপাশি ফ্রান্স, ইটালি, স্পেন, সুইডেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড এবং জার্মানির রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।

আনিসুল হক জানান, বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, উপাত্ত সুরক্ষা আইন, অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন আইন এবং সুশীল সমাজের কার্যক্রম নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।

“অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন আইন নিয়ে তারা সাধুবাদ জানিয়েছে এবং জানতে চেয়েছে এটি কবে পাস হবে। আমি তাদেরকে বলেছি, মাঝখানে জাতীয় সংসদের একটি সেশন হবে, কিন্তু সেখানে বিল পাস করার মত সময় হবে না। আমার মনে হয়, এটি বাজেট সেশনের সময়ে পাস হবে।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কাছ থেকে একটি টেকনিক্যাল নোট পেয়েছি। সেটি আমরা পর্যালোচনা করছি এবং পরে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

“আমি তাদেরকে জানিয়েছি, আগামী ১৪ মার্চ সুশীল সমাজের ১০ জন প্রতিনিধির সঙ্গে এই আইন নিয়ে বৈঠক করব।”

আইনমন্ত্রী বলেন, “ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বিষয়ে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এটি সাইবার অপরাধ বন্ধ করার জন্য করা হয়েছে এবং সাইবার অপরাধ বন্ধ করার জন্য এটি থাকবে।

“আমরা টেকনিক্যাল নোট পেয়েছি এবং সবদিক পর্যালোচনা করে যদি দেখা যায় কিছু জায়গায় স্পষ্টতার জন্য কিছু করার দরকার হয়, তাহলে সংশোধন বা পরিবর্তন করতে আমরা রাজি আছি।”

নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায় ইইউ, আপত্তি নেই সরকারের

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউরোপী ইউনিয়ন থেকে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেন, “যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে আগামী সংসদ নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই, সেটি তিনি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন।

“এখন নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে কতজনকে আনবে এবং কতজনকে আনবে না। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনও দ্বিমত করবে না।”

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থানের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আমরা চাই। সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, সেটা আমরা চাই।

“আমি বলতে পারি আসন্ন নির্বাচনে সু্ষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। কিন্তু সংবিধানের বাইরে আমরা যাব না। সংবিধানে যা বলা হয়েছে, সেভাবে নির্বাচন হবে। আমরা চাই বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কিন্তু কে করবে এবং কে করবে না সেটি রাজনৈতিক দলের বিষয়।”

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনায় সরকারের অবস্থানকে ইউরোপীয় দেশের রাষ্ট্রদূতেরা ‘সাধুবাদ’ জানিয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।

তার কথায়, “আমরা অত্যন্ত তাড়াতাড়ি এটি বন্ধ করতে পেরেছি।”