“পুড়ে যাওয়া মোটিফ নতুন করে নির্মাণ করতে পারলে, তা শোভাযাত্রায় থাকবে; আর করা না গেলে হয়তো এটি ছাড়াই শোভাযাত্রা হবে,” বলছেন অধ্যাপক আজহারুল।
Published : 13 Apr 2025, 11:40 AM
আগুনে পোড়ানোর ঘটনার পর একদিনের মধ্যে ‘ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি’ মোটিফ বানিয়ে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য় স্থান দেওয়া যাবে কি না- তা নিয়ে সন্দিহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম।
বাংলা নববর্ষের আগের দিন রোববার সকালে তিনি বলছেন, হয়তো এটি সম্ভব হবে না। তবুও চেষ্টা চলছে।
শনিবার ভোরের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আগুনে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার’ জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ এবং ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ পুড়ে যায়।
এ ঘটনাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে বর্ণনা করছে পুলিশ।
অন্যদিকে মোটিফ পোড়ার পেছনে ‘ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দোসরদের’ হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তিনি ফেইসবুকে পোস্টে বলেছেন, চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ পুড়িয়েছে ‘হাসিনার দোসররা’।
ওই প্রতিকৃতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম রোববার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগুনে পুড়ে যাওয়া মোটিফ নতুন করে বানানোর কাজ শুরু করেছি। তবে একদিনের মধ্যে তো বানানো সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। এখন দেখা যাক, কতটুকু কী করা যায়।"
মোটিফ পুড়ে যাওয়ায় শোভাযাত্রার পরিকল্পনায় কি পরিবর্তন আসবে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “শোভাযাত্রা আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে। পুড়ে যাওয়া মোটিফ নতুন করে নির্মাণ করতে পারলে তা থাকবে।
“আর করা না গেলে হয়তো এটি ছাড়াই শোভাযাত্রা হবে। আমাদের অন্যান্য মোটিফ এবং শিল্পকর্ম তো আছেই। সেগুলো নিয়েই হবে।"
আয়োজন সংশ্লিষ্টরা শুক্রবার বলেছিলেন, শোভাযাত্রায় এবার বড়, মাঝারি ও ছোট মোটিফ থাকবে।
এর মধ্যে বড় মোটিফ থাকবে ৬টি। সবার সামনে থাকবে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’। নারীর দাঁতাল এই মুখাবয়বে মাথায় খাড়া দুটো শিং রয়েছে।
আগুনের ঘটনার সিসিটিভি ভিডিও দেখে চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ইসরাফিল রতন বলেন, এক যুবক মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন লাগিয়ে একইভাবে চলে যান।
“আমরা সিসিটিভি ফুটেজে একজনকে দেখেছি। আমাদের দুই-তিনটা ক্যামেরাতে ধরা পড়েছে। যার পরনে ছিল কালো রঙের টিশার্ট এবং মুখে মাস্ক ছিল।”
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনা পরিকল্পিত বলে দাবি করেছে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “আপাতদৃষ্টিতে দেখে যেটা মনে হচ্ছে- এটা এক্সিডেন্টাল না, কেউ ইনটেনশনালি এটা করছে। এটুকু আমরা নিশ্চিত।”
এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নাম না জানা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শনিবার বিকালে শাহবাগ থানায় মামলাটি করা হয় বলে জানিয়েছেন থানার ওসি মো. খালিদ মনসুর।
তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাওয়া সন্দেহভাজন যুবককে শনাক্ত করতে আমরা কাজ করছি।”
রোববার রমনা বটমূলে ছায়নটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রস্তুতি দেখতে এসে র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, আনন্দ শোভাযাত্রার মোটিফ পোড়ানোর ঘটনায় নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।