এ ঘটনায় অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী-সাংবাদিক আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নেন।
Published : 25 Aug 2024, 11:43 PM
জাতীয়করণের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান করা আনসারদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় পিছু হটেছেন আন্দোলনরত আনসাররা। পরে সচিবালয়ে অবরুদ্ধদের কয়েক ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়।
রোববার রাতে সচিবালয়ের সামনে কয়েক দফা ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আনসার ও শিক্ষার্থী সংঘর্ষ বাঁধে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে আরও শিক্ষার্থী এসে ধাওয়া দিলে আনসাররা ছত্রভঙ্গ হয়ে সচিবালয় থেকে সরে যায়। এসময় সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চাকরি জাতীয়করণ করা নিয়ে সচিবালয়ের বাইরে আনসারদের অবস্থানের মধ্যে এদিন রাত ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে একদল শিক্ষার্থী সচিবালয়ের সামনে এসে আনসারদের ধাওয়া করেন।
তখন সচিবালয়ের সামনে থাকা শত শত আনসার শিক্ষার্থীদের পাল্টা ধাওয়া করেন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পিছু হটে শিক্ষা চত্বরের সামনে অবস্থান নেন।
অপরদিকে আনসাররা বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে আটকে মারধর করেন।
পরে স্বল্প সময়ের মধ্যে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে আবার আনসারদের ধাওয়া করেন। ধাওয়া -পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে আনসাররা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যান।
পরে রাত ১০ টা ২০ মিনিটে সচিবালয়ের ভেতরে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বেরিয়ে আসেন। পর্যায়ক্রমে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামসহ সচিবালয়ের অবরুদ্ধ কর্মকর্তারাও বেরিয়ে আসেন।
এদিকে আনসারদের মারধরে অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী-সাংবাদিক আহত হন।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ (২৫)। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভর্তি আরও দুইজন হলেন- আব্দুর রহমান (৩০) ও আব্দুল কাদের (২৪)।
আহত শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার।
তিনি বলেন, দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা যেখানে ত্রাণ সংগ্রহ করছে, সেখানে আনসাররা সচিবালয়ে অরাজকতা শুরু করেছে।
" আজকে দিনভর আমাদের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক সারজিস ও হাসনাতসহ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। এখবর পেয়ে আমরা শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে মিছিল নিয়ে এসেছি। আমরা আনসারদের গায়েও হাত তুলিনি। কিন্তু তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে পিটিয়েছে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মাহি বলেন, সাংবাদিক সমিতির সদস্য এবং প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার আসিফ হিমাদ্রীকে মারধর করে আনসার সদস্যরা। তারা বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঢাকা মেডিকেল প্রতিবেদক জানান, সচিবালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় আনসার সদস্য, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ আহত অন্তত ৪০ জন ঢাকা মেডিকেলের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঢাবি'র এক শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ বাকী বলেন, “আমরা আনসারদের বোঝাতে চেয়েছি দেশে বন্যার পরিস্থিতিতে আপনারা এখানে হৈচৈ করছেন। এছাড়াও আপনাদের দাবি দাওয়া তো মেনে নিয়েছে। আপনারা এখন চলে যান। এই বলতেই তারা আমাদের উপর হামলা চালায়।”
এতে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ে পেশাজীবীদের বিভিন্ন পক্ষের আন্দোলনের মধ্যে বুধবার মাঠে নামে আনসার সদস্যরা।
তারা দৈনিক ভাতার ভিত্তিতে কাজ করতে রাজি নন; চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সেদিন থেকেই প্রতিদিন তারা রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন।
এর অংশ হিসেবে রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করেন আনসার সদস্যরা। তাদের সমাবেশের কারণে তোপখানা রোড থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
এই সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসেন আনসার সদস্যরা। এক পর্যায়ে তারা ছড়িয়ে পড়েন পুরো এলাকায়।
আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা কয়েকবার বিদ্যুৎ ভবনের পাশের গেইট দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে বিকাল ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরে যান।
সচিবালয়ের সামনে আনসার ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ
ওই বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আনসার থেকে ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
“একই সাথে অন্যান্য দাবি-দাওয়া নিয়ে একটি কমিটি করা হবে৷ এই কমিটি সব কিছু পর্যালোচনা করে আমাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবে৷ সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নেব৷”
সচিবালয়ের এই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বৈঠকে ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত হলেও তাতে আশ্বস্ত না হয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন আনসার সদস্যরা। এ অবস্থায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, অফিস শেষের পর সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশিরভাগই সেখান থেকে বের হতে পারেননি।
এই অবস্থায় রাত পৌনে ৮টার দিকে সচিবালয়ে পাঁচ জন উপদেষ্টার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আনসার বাহিনীর ১০ জন প্রতিনিধিও সেখানে যোগ দেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে রোববার এ বৈঠক শুরু হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্য, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব, ক্রীড়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়াও সেখানে ছিলেন।
ওই বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই রাত পৌনে ১০টার দিকে সচিবালয়ের বাইরে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এ ঘটনায় আহত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন-রিয়াজ (২৫), শফিকুল (২৫), রাসেল (৩২), রায়হান (২৫), তন্ময় (২০), আঃ কাদের (২৪), উজ্জ্বল (২৫), তাজিলুর রহমান (২৫), তুহিন (২৪), বিক্রম (২৫), তাসিন (২০), জাকির (২৫), আসিফ (২৪), শফিক শাহরিয়ার (২৫), রাকিব (২৩), রবিন (১৮), বকুল (২৮), মিনারুল (২৭), শাকিল (২১), সাইম (২১), শান্ত (২৩) এবং আনছার সদস্য খলিলুর রহমান (২৫), শিউলী (২৪), প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসিফ হাওলাদার (২৪)।