উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়ার সাজা যাবজ্জীবন থেকে কমিয়ে ১৪ বছরের কারাদণ্ড করা হয়েছে।
Published : 14 Jan 2025, 04:42 PM
বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র আইনের মামলাতেও খালাস পেয়েছেন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর।
একই ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি খালাস পাওয়ায় এখন আর তার মুক্তিতে ‘বাধা নেই’ বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী শিশির মনির।
তিনি বলেন, “আমি আশা করি, আজকেই এ অর্ডার কমিউনিকেট হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি জেল থেকে মুক্তি পাবেন।
“তিনি কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন, কেরাণীগঞ্জ কারাগারে আদেশ যথানিয়মে পৌঁছানোর পর তার স্বজন, আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহীরা যারা আছে- আমি আশা করব, সকলেই শান্তভাবে আইনকানুন মেনে তাকে জেল থেকে বের করে যথাসম্মানে তাকে বাসায় পৌঁছে দেবেন।”
ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়ার সাজা যাবজ্জীবন থেকে কমিয়ে ১৪ বছরের কারাদণ্ড করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।
আসামির পক্ষের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “এ মামলায় ১৪ জনের সাজা হয়েছিল। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে আদালত বেকসুর খালাস দিয়েছেন। পাঁচজনের সাজা কমিয়ে দিয়েছেন। চারজনের সাজা মৃত্যুজনিত কারণে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “যে পাঁচজন সাজা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে পরেশ বড়ুয়ার সাজা রয়েছে ১৪ বছর। আকবর, লিয়াকত, হাফিজ এবং সাহাবুদ্দিন এ চারজনকে ১০ বছর করে সাজা দেওয়া হয়েছে।
“১০ বছর করে সাজা হলেও তারা দীর্ঘদিন ধরে জেলে আছেন। বিচারক বলেছেন, ইতোমধ্যে তারা যে সময়টুকু তারা খেটেছেন, এ সময়টি তাদের জেল খাটার পরিপূর্ণ মেয়াদ থেকে বাতিল হবে।”
খালাস পেয়েছেন: লুৎফুজ্জামান বাবার, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন তালুকদার, সিইউএফএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এ কে এম এনামুল হক এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব নুরুল আমীন।
১৪ বছর কারাদণ্ড: পরেশ বড়ুয়ার সাজা কমিয়ে ১৪ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
১০ বছর করে কারাদণ্ড: এনএসআইয়ের সাবেক উপপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, এনএসআইয়ের সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, ‘চোরাকারবারি’ হাফিজুর রহমান।
** মৃত্যুজনিত কারণে মতিউর রহমান নিজামী, দীন মোহাম্মদ, আব্দুর রহিম ও আব্দুস সোবহানের আপিল বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল ঘাট থেকে জব্দ করা হয় ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে বন্দরনগরীর কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা করা হয়।
পরে তদন্তে দেখা যায়, চীনের তৈরি এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সমুদ্রপথে আনা হয় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘উলফা’র জন্য। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওই চালান ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এ মামলার রায় দেয়। অস্ত্র আইনের মামলায় আসামিদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আর বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
গত ১৮ ডিসেম্বর হাই কোর্টের রায়ে এ মামলায় বাবরসহ সাতজন খালাস পান। পরেশ বড়ুয়ার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে দেওয়া হয় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং চারজনকে দেওয়া হয় ১০ বছর করে কারাদণ্ড। এছাড়া মতিউর রহমান নিজামী ও আব্দুর রহিম মারা যাওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে মামলা অকার্যকর হয়ে যায়।
আরও পড়ুন