“ওরা যে হোটেলটাতে নিয়ে গেল একদমই ভালো না। এটা বিজনেস বা ইকোনমি ক্লাসের বিষয় না। এটা একটা ভালো হোটেলের বিষয়। ওটা খুবই শ্যাবি জায়গা,” বলেন এক যাত্রীর স্বামী।
Published : 22 Mar 2025, 12:16 AM
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট লন্ডনের উদ্দেশে উড়াল দিয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে আসার পর যাত্রীদের রাখা হয়েছে ঢাকার কয়েকটি হোটেলে, যার মান নিয়ে আপত্তি তুলেছেন কয়েকজন যাত্রী।
একই এলাকায় আরও ভালো মানের হোটেল থাকতেও ‘নিম্নমানের’ হোটেলে নেওয়া হয় বলে যাত্রীরা অভিযোগ তুলেছেন। তবে বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, একসঙ্গে অনেক যাত্রী থাকায় মাঝেমধ্যে ভালো হোটেল পেতে সমস্যা হয়। যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়টি তারা খতিয়ে ‘দেখবেন’।
বড় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে শুক্রবার সারা দিন বন্ধ থাকে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর। তাতে আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইটের সূচি ওলটপালট হয়ে যায়। অনেক ফ্লাইট লন্ডনের পথে উড়াল দিয়েও পরে ফিরে আসে কিংবা আশেপাশের অন্য কোনো বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই এদিন বিমানের ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা রুটের উড়োজাহাজটি সকাল ৮টা ৪২ মিনিটে যাত্রা শুরু করে বলে জানান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “সকাল ৯টা ৬ মিনিটে ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে রওনা হয় লন্ডনের উদ্দেশে। কিন্তু হিথ্রো বিমানবন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় সেটি দুপুর পৌনে ২টায় শাহজালাল বিমানবন্দরে ফেরত আসে।”
ওই ফ্লাইটটিতে পাইলট ও কেবিন ক্রুসহ ২৬৭ জন আরোহী ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী যাত্রীদের বিমানের খরচে কয়েকটি হোটেলে রাখা হয়।
এসব হোটেলের মান নিয়ে আপত্তি তোলা এক যাত্রীর যুক্তরাজ্য প্রবাসী স্বামী এ এফ এম এ হ্যারিস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ওয়াইফ বিজনেস ক্লাসের যাত্রী। কিন্তু ফ্লাইটটা ফিরে আসার পর তারা যে হোটেলে নিয়ে গেল, সেটা খুবই শ্যাবি (নিম্নমানের)। আমার ওয়াইফ তখন আর ওপরেই যায়নি। সে বলেছে, ওখানে থাকবে না। পরে আমার কিছু বন্ধু যারা বিমানের কাজ করে, তাদের ইন্টারভেনশনে তাকে একটু ভালো হোটেলে শিফট করা হয়।”
হ্যারিস বলেন, “আমাদের অনেক বন্ধুরা ঢাকায় আছে। তারা আমার ওয়াইফকে বাসায় নিয়ে যেতেও চেয়েছিল। হোটেলে থাকা বা না থাকাটা আমাদের জন্য ইস্যু না। কিন্তু অন্য সব যাত্রীদের জন্য আমি কথা বলছি। আমাদের চাহিদাও খুব বেশি না। ওই এলাকাতেই অনেক মোটামুটি মানসম্মত হোটেল আছে। বিমান কী এর চেয়ে ভালো হোটেল চেনে না? ওরা যে হোটেলটাতে নিয়ে গেল একদমই ভালো না। এটা বিজনেস বা ইকোনমি ক্লাসের বিষয় না। এটা একটা ভালো হোটেলের বিষয়। ওটা খুবই শ্যাবি জায়গা।
“বিজনেস ক্লাস প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে ইয়াং একটা মেয়ে ছিল, সিলেটি। তাকেও আরেকজন লেডি প্যাসেঞ্জারের সঙ্গে একটা রুম শেয়ার করতে দিয়েছে। ‘মাই ওয়াইফ রিফিউজড টু গো’। বলেছে, আমি এই হোটেলে থাকবে না। যেহেতু আমার কিছু স্বজন আছে। তারা কমপ্লেইন করে তাকে বদলে দিয়েছে।”
বিমান কীভাবে যাত্রীদের সঙ্গে ‘সদরঘাট-বরগুনা রুটের লঞ্চের ডেকের যাত্রীর’ মত আচরণ করতে পার, সেই প্রশ্নও তিনি তোলেন।
হ্যারিস বলেন, “ট্রিপ অ্যাডভাইজার সাইটগুলোতে গিয়ে দেখুন কতটা বাজে হোটেল। এখানে বিমানের কোনো লোকজনের স্বার্থ আছে কিনা, সেটাও দেখার বিষয়।”
তিনি যে হোটেলটির কথা বলছেন, সেটি উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরের ‘গার্ডেন রেসিডেন্টস’ হোটেল। মেইক মাই ট্রিপ ও বুকিং ডটকমের ওয়েবসাইটে গিয়ে হোটেলটি সম্পর্কে দুই রকমের চিত্র পাওয়া যায়।
‘ট্রিপ অ্যাডভাইজারে’ হোটেলটির কোনো রিভিউ নেই। মেইক মাই ট্রিপে হোটেলের রেটিং ৩ দশমিক ৪ (ভালো) এবং বুকিং ডটকমে রেটিং ৭ (ভালো)। তবে হোটেলের অতিথিরা এই দুটি ওয়েবসাইটে হোটেলের যে রিভিউ দিয়েছেন, তাতে তারা হোটেলে মশার উৎপাত ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। যদিও হোটেল কর্মীদের সেবা ও খাবার নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় গার্ডেন রেসিডেন্টস হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, সেটির অবস্থান আবাসিক এলাকার মধ্যে। স্থানীয় কয়েকজন বলেন, হোটেলটি একসময় ফ্ল্যাট বাড়ি ছিল। পরে হোটেলে রূপান্তরিত করা হয়।
হোটেলটির ব্যবস্থাপক মো. জুয়েল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেখানে বিমানের ৪৫ যাত্রী রয়েছেন। মোট ৪৮ জনকে সেখানে নেওয়া হয়েছিল। তবে তিনজন আপত্তি তোলায় তাদের অন্য একটি হোটেলে পাঠানো হয়।
জুয়েল বলেন, “এখানে আসার পর তিনজন বলেন, তারা এখানে থাকতে চান না। পরে আমরা বলেছি, তাহলে আমরা বিমানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দেখছি কী করা যায়। কথা বলার পর বিমানের লোকজন এসে ওই তিনজনকে ঢাকা রিজেন্সিতে (হোটেল) নিয়ে যায়।”
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, ফ্লাইট ছাড়ার নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরেও যদি দীর্ঘসময় যাত্রীদের অপেক্ষমাণ রাখতে হয় এবং তখন যদি লাঞ্চ বা ডিনারের সময় হয় তবে যাত্রীদের বিনামূল্যে খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থা করতে হয়।
বিলম্বকাল যদি এমন হয় যে যাত্রীদের সারারাত অপেক্ষমান রাখতে হয় তাহলে এয়ারলাইন্স তাদের জন্য বিনামূল্যে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করবে। যাত্রী কোন মানের হোটেল পাবেন তা নির্ভর করবে তার টিকেট বিজনেস না ইকনোমি ক্লাসের তারওপর।
যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাকে ওরা (বিমানের সংশ্লিষ্ট দপ্তর) বলেছে, বিমান তার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী হোটেল নির্বাচন করে। তবে একসঙ্গে অনেক যাত্রী হওয়ায় কখনও কখনও ভালো হোটেল পাওয়াও একটু কঠিন হয়ে পড়ে।
“তবে যে যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাদের অন্য হোটেলে নেওয়া হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিমান অবশ্যই এটা খতিয়ে দেখবে।”
আরও পড়ুন-