“ছাত্ররা যখন ঘোষণা দেবেন তখন আমরা দেখব তারা কী ঘোষণা দিল। যতক্ষণ পর্যন্ত এ ঘোষণাটা না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিষয়টা আমাদের কাছে স্পষ্ট না।”
Published : 29 Dec 2024, 08:01 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আগামী ৩১ ডিসেম্বর জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দেওয়ার যে কথা বলেছে, তার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এটা একটা বেসরকারি উদ্যোগ। এটাকে বেসরকারি উদ্যোগ হিসেবেই দেখছি। এটার সঙ্গে সরকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ রোববার বাংলামোটরে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ ডিসেম্বর জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে।
এরই মধ্যে ঘোষণাপত্রের খসড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’র মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ‘নাৎসি বাহিনীর’ মত ‘অপ্রাসঙ্গিক’ ঘোষণা এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘কবর’ রচনা করার ঘোষণাও দিয়েছেন হাসনাত।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, “এটা একান্তই শিক্ষার্থীদের বিষয়। এ বিষয়ে সরকার অবগত নয়।”
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ছাত্ররা যখন ঘোষণা দেবেন তখন আমরা দেখব তারা কী ঘোষণা দিল। যতক্ষণ পর্যন্ত এ ঘোষণাটা না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিষয়টা আমাদের কাছে স্পষ্ট না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেট্রোরেলের পিলারে আঁকা শেখ হাসিনার গ্রাফিতি মুছে ফেলা বিষয়ে এক প্রশ্নে আজাদ মজুমদার বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জানিয়েছে, শেখ হাসিনার গ্রাফিতি ভুল বোঝাবুঝির কারণে মুছে ফেলা হয়েছে।
অস্থায়ী পাস নিয়ে সোমবার থেকে সচিবালয়ে ঢুকতে পারবেন সাংবাদিকরা
“ঢাবি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় আইন বলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মারক সংরক্ষণ করবে। শেখ হাসিনার গ্রাফিতিটি ঘৃণাস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।”
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ অগাস্টে সরকার পতনের পর পিলারে আঁকা শেখ হাসিনার ওই ছবি লাল রঙের ছোপ দিয়ে তাতে জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ছবিটি জনতার ক্ষোভ ও ঘৃণার প্রতীক হয়ে ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, শনিবার রাত ২টার দিকে কয়েকজন লোক মেট্রোরেলের পিলারে শেখ হাসিনার ছবি মুছতে গেলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেন। এসময় একটি পিলারে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পূর্ণ ছবি, অন্যটিতে শেখ হাসিনার ছবির মুখের অংশ মুছে ফেলা হয়।
পরে শিক্ষার্থীরা বাধা দিয়ে মোছা বন্ধ করেন এবং পুনরায় সেখানে শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। এরপর তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।
এ ঘটনায় পরে দুঃখপ্রকাশ করে প্রক্টর কার্যালয় জানিয়েছে সেই পিলারটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ড: তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর সোমবার
সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া হবে বলে জানান আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
তিনি বলেন, “তদন্ত কমিটি থেকে আমাদের জানানো হয়েছে তারা ইতিমধ্যে বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে কিছু আলামত দেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে এবং তারা যদি প্রয়োজন মনে করেন, কিছু আলামত বিদেশেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন।”
হাসিনার গ্রাফিতির পিলার পাচ্ছে 'ঘৃণাস্তম্ভ'র স্বীকৃতি
বুধবার রাত ২টার দিকে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট সেখানে যায়। প্রায় দশ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়।
আগুনে সাত নম্বর ভবনের ৬, ৭, ৮, ৯ এই চারটি তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি, সেখানকার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সদস্য সচিব করে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে কি না জানতে চাইলে আজাদ মজুমদার বলেন, এটা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে ৷ প্রকাশ করার বিষয়ে তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।
তদন্ত কতদিনের মধ্যে শেষ হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “তদন্তকারী দল নির্ধারিত (তিন দিন) সময়ের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেবেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে ঠিক করবেন তদন্তটা সম্পন্ন করতে কতদিন সময় লাগবে। এটা এখনো নিশ্চিত নয়।”
অগ্নিকাণ্ডের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ সীমিত করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে আজাদ মজুমদার বলেন, “অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তির কোথাও বলা হয়নি যে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল হয়েছে। কেউ যদি ধরে নিই অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল হয়েছে তা তার নিজস্ব অজ্ঞতা হিসেবেই ধরব।”
বিষয়টি আলোচনার মধ্যে রোববার তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, অস্থায়ী পাস নিয়ে ‘নির্দিষ্ট সংখ্যক’ সাংবাদিক সোমবার থেকে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
আজাদ মজুমদার বলেন, “একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামীকাল থেকেই অস্থায়ী পাস নিয়ে সাংবাদিকরা সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে ২০০ সাংবাদিককে অস্থায়ী পাস দেওয়ার। সচিবালয়ে বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠনের ১৬০ জনের মত সদস্য রয়েছে। তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের ৪০ জন ক্যামেরাম্যানকে অস্থায়ী পাস দেওয়া হবে।
“এই পাস ছাড়াও আরও কোনো সাংবাদিক, মনে করেন তাদের সচিবালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন আছে, তারা প্রয়োজনমাফিক অস্থায়ী পাস নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। এজন্য ডিএমপির একটি সেল গঠন করা হয়েছে। সাধারণ নাগরিকরাও যাদের বিভিন্ন কারণে সচিবালয়ে যাওয়া প্রয়োজন তারও এই সেল থেকে পাস পাবেন।”
বিদ্যমান অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডগুলো বিদ্যমান আছে বলে জানান উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার।
'ঘৃণার প্রতীক' হাসিনার ছবি মোছায় ঢাবিতে ক্ষোভ
'জুলাই ঘোষণাপত্র' দিয়ে আওয়ামী লীগকে 'অপ্রাসঙ্গিক' করা হবে : হাসনাত
“কোনো কার্ড বাতিল করা হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন কার্ড ইস্যু করা হবে ততক্ষণ এই কার্ডগুলোর ভ্যালিডিটি থাকবে। আর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই কার্ডগুলো রিভিউ করা হবে। এর কারণ হচ্ছে- বিভিন্ন সময়ে ৭ হাজার ৮৬৬টি অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৯০০টির মত গত সরকার বিভিন্ন অজুহাতে বাতিলও করেছে। ২৯০০ এর মত এখন বিদ্যমান আছে। সরকার এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয় কারা এই কার্ডগুলো বহন করছেন।
“তবে ধারণা করা হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকদের বাইরেও আরো অনেক ব্যক্তি আছেন যারা এই কার্ড ব্যবহার করে সচিবালয়ে লবিংসহ নানা ধরনের তৎপরতা চালান এবং অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মী আছে তাদের কাছে এই কার্ড রয়েছে। এজন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা রিভিউ করে প্রকৃত সাংবাদিকদের নামে কার্ড ইস্যু করার। আমরা ভালো সাংবাদিকতাকে প্রমোট করতে চাই। সাংবাদিক নামধারী অন্য ব্যক্তি, যারা সাংবাদিকতার পরিচয় ব্যবহার করে তাদের একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”