“উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা কাজ শুরু করব”, বলেন তিনি।
Published : 07 Sep 2024, 07:44 PM
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিনলিপির পাশাপাশি আগের সরকারের ১৬ বছরের নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র সংরক্ষণ করতেই গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ বানানোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
শনিবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবন পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা।
শিল্প, গণপূর্ত ও গৃহায়ন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াসহ তারা তিনজন এদিন গণভবন পরিদর্শন করেন।
পরে নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এখানে প্রথমত ৩৬ দিনের পুরো সময়ের স্মৃতির দিনলিপি থাকবে। যারা নিহত হয়েছেন, তাদের তালিকা থাকবে, স্মৃতি থাকবে। এই আন্দোলন ছাড়াও গত ১৬ বছরের লড়াইয়ের একটি মুহূর্ত আমরা ৫ অগাস্ট পেয়েছিলাম। এই ১৬ বছরে যে নিপীড়ন হয়েছে, যারা গুম হয়েছেন, তাদের তালিকা থাকবে।
”যারা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন, এসব বিষয়ের একটি উপস্থাপনা থাকবে। এমনকি এখানে যে স্থাপনা এখন ভাঙা অবস্থায় রয়েছে, সেটিকে সেই অবস্থায় রেখে এখানে জাদুঘর করা হবে।”
বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনাপ্রবাহ ধরে রাখতে জাদুঘর স্থাপন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শনিবার সকালে তিন উপদেষ্টা গণভবনে আসেন। গণভবনের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখার পর তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘গণভবনে আমরা দেখেছি, প্রচুর দেয়াল লিখন রয়েছে, গ্রাফিতি রয়েছে। মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ পুরো ভবনের চারপাশে। এখানে যেসব আসবাব লুট হয়েছে, পরে যেগুলো মানুষ রেখে গেছেন-সব কটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব সেগুলোকে রেখেই কার্যক্রম শুরু করতে।
‘‘উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা কাজ শুরু করব। দ্রুত কাজ শেষ করে যেন উদ্বোধন করা যায়, তা বলা হয়েছে। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি থাকবে। দেশ-বিদেশের শিল্পী ও জাদুঘর বিশেষজ্ঞ এবং অভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর করার অভিজ্ঞতা রয়েছে-তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।”
তিনি বলেন. ‘‘গণপূর্ত ও স্থাপত্য বিভাগের যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকে প্রাথমিক পরামর্শ নিয়েছি, আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো বলেছি-আমরা কীভাবে দেখতে চাই। পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক কমিটি করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এ জাদুঘরে ৩৬ দিনের অভ্যুত্থানের সামগ্রিক স্মৃতি ও দিনলিপি, আন্দোলনে শহীদদের তালিকা ও স্মৃতি এবং গত ১৬ বছরের নিপীড়ন-গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যার চিত্র তুলে ধরা হবে বলেও জানান তথ্য উপদেষ্টা।
‘যেভাবে আছে তা ঠিক থাকবে’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘যে স্থাপত্য ভগ্নাবশেষ অবস্থায় আছে, সেটিকে সেই অবস্থায় রেখেই জাদুঘর করা হবে। এখানে কিছু ডিজিটাল রিপ্রেজেন্টেশনও থাকবে। গত ১৬ বছরের একটি চিত্র আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করব।
”আমরা পৃথিবীর বুকে একটি নিদর্শন রাখতে চাই, যে কোনো স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট, খুনি রাষ্ট্র নায়কদের কী পরিণতি হয়, জনগণই যে আসল ক্ষমতার মালিক সেটি নিদর্শন হিসেবে পৃথিবীর বুকে রাখার জন্য আমরা গণভবনকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি সরকারের পক্ষ থেকে।”
‘শহীদদের তালিকা তৈরি শেষ দিকে’
আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের তালিকা ও চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমাদের শহীদ পরিবারের তালিকা শেষের দিকে। এসব পরিবার নিয়ে আমরা এ মাসে স্মরণসভার আয়োজন করব। সেখানেই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
‘‘আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতিসহ অন্যান্য প্রতিশ্রুতি ও হতাহতের তালিকা আমরা সেখানে ঘোষণা করব। সেটিও এ মাসেই হবে।”
‘গণভবন জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে’
গণভবনে তো বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীরা ছিলেন, তাদের স্মৃতি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘‘এক টাকা দিয়ে মালিকানা নিয়ে নেওয়া হয়েছিল, না? এক টাকা দিয়ে। জনগণের ছিল কতখানি? আমরা জনগণের জন্য সেটাকে উন্মুক্ত করার চিন্তা করছি।”
‘প্রধান উপদেষ্টা যুমনাতেই থাকবেন’
পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কোথায় হবে সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বিষয়ে পরবর্তীতে আলোচনা হবে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যমুনাতেই থাকছেন, থাকবেন।”