‘বুদ্ধের অহিংসা আনবে শান্তি’

সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্বলাভের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়। তার আবির্ভাব, বোধি লাভ ও নির্বাণ- তিন ঘটনাই বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে ঘটেছিল বলে একে বলা হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2023, 03:37 AM
Updated : 4 May 2023, 03:37 AM

গৌতম বুদ্ধের অহিংসার বাণী আর শান্তির বারতা নিয়ে উদযাপিত হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা।

দিনটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।

বৌদ্ধদের বিশ্বাস, খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দের এ দিনে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন, ৫৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এ দিনে তিনি বোধিলাভ করেন এবং ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এ দিনে তিনি নির্বাণ লাভ করেন।

সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্বলাভের মধ্য দিয়েই বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়। তার আবির্ভাব, বোধি লাভ ও নির্বাণ- তিন ঘটনাই বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে ঘটেছিল বলে একে বলা হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’।

রাজধানীতে বুদ্ধ পূর্ণিমার মূল আয়োজন হয়েছে সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহার ও মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে।

সকালে সংগীতের মধ্য দিয়ে বুদ্ধ বন্দনার পর আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। এরপর ভক্তরা আসতে শুরু করেন বিহারে। স্নান শেষে শুচিবস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত হন তারা।

সকালের কর্মসূচির মধ্যে আরও ছিল জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ, মঙ্গলসূত্র পাঠ, বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশীল, ও অষ্টাঙ্গ উপসথশীল গ্রহণ, মহাসংঘদান, ভিক্ষুসংঘকে পিণ্ডদান, ত্রিপিটক পাঠ, প্রদীপ পূজা এবং জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, গৌতম বৌদ্ধ বিশ্বের মানুষের দুঃখ-বেদনাকে নিজের দুঃখ বলে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন। মানব জীবনের দুঃখ দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তিনি সম্পদ, ঐশ্বর্য- তথা সংসারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন এবং জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু- এ চারটির কারণ উদঘাটনের পাশাপাশি মানুষের শান্তি ও মুক্তির পথ খুঁজতে ব্রতী হন। এক সময় রাজপ্রাসাদের বিত্ত-বৈভব, সুখ ও স্বজনের মায়া ত্যাগ করে সিদ্ধিলাভের অন্বেষণে বেরিয়ে পড়েন অজানার পথে। দীর্ঘ সময় সাধনার পর বোধিপ্রাপ্ত হন, পরিণত হন গৌতম বুদ্ধে।

বুদ্ধের শিক্ষা- মানুষ কর্মের অধীন, জগতে কর্মই সব। যার যেমন কর্ম, তিনি ফলও পাবেন তেমন। বৌদ্ধ দর্শনের মূলমন্ত্র- ‘সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু’, অর্থাৎ জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।

বুদ্ধ পূর্ণিমার প্রার্থনা শেষে বৌদ্ধ ধর্মবলম্বীরা পাত্রে জল ঢেলে মৃত স্বজনদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে নানা উপচারে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। পরে বিহারের বোধিবৃক্ষে পত্র-পুস্প-জলে পূজা দেওয়া হয় গৌতম বুদ্ধকে।

বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “মহামতি বুদ্ধ একটি সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় আজীবন সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করে গেছেন। আজকের এই অশান্ত ও অসহিষ্ণু বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত হানাহানি রোধসহ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহামতি বুদ্ধের দর্শন ও জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমি মনে করি।”

গৌতম বুদ্ধের আদর্শ ধারণ ও লালন করে বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সবাই ভূমিকা রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এক বাণীতে তিনি বলে, “হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আমরা বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সমানভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেন।”

বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় বঙ্গভবনে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য এক সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।