দুর্নীতি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০২০ সালে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল সুধাংশু শেখর ভদ্রকে।
Published : 20 Aug 2024, 02:50 PM
একটি প্রকল্পের আওতায় ১৫ কোটি টাকার সার্ভার ও ইউপিএস কেনার অর্থ নয়-ছয় করার অভিযোগে ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
দুদকের সহকারী পরিচারক মো. আবুল কালাম আজাদ মঙ্গলবার ঢাকায় কমিশনের সম্বনিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা দায়ের করেন বলে দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান।
দুর্নীতি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০২০ সালে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল সুধাংশু শেখর ভদ্রকে। এ মামলায় তার সঙ্গে ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মোস্তাক আহমেদকে আসামি করা হয়েছে। যে প্রকল্পের সার্ভার ও ইউপিএস কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ আনা হচ্ছে, তার সহকারী প্রকল্প পরিচালক ছিলেন তিনি।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ‘অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, 'পোস্ট-ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১৫ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিফোন শিল্প সংস্থা থেকে ৫০০টি এইচপি সার্ভার এবং উইনার ইউপিএসসহ অন্যান্য ইলেট্রেনিক সামগ্রী কেনা হয়। পরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডাকঘরগুলোতে বিতরণ করা হয় সেসব সরঞ্জাম।
ওই প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা অপচয় এবং আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে, যা তদন্তের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মো. মুহিবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়।
তদন্ত দল দৈবচয়নের ভিত্তিতে কিছু ডাকঘর পরিদর্শন করে। সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর স্টক রেজিস্টার পরীক্ষা করে তারা দেখেন, ২০১৭ সালের জুন মাসে ওই প্রকল্প শেষ হলেও সরবরাহ করা চালানের কোনো কোনো মালামাল পৌঁছেছে প্রকল্প সমাপ্তির প্রায় দুই বছর পর।
টেশিসের সরবরাহকৃত সার্ভার, ইউপিএসসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি অফিসে অব্যবহৃত অবস্থায় পায় তদন্ত দল। সংশ্লিষ্ট পোস্টমাস্টারসহ উপস্থিত কর্মচারীরা তাদের বলেন, ওইসব যন্ত্রপাতি চালানোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ না পাওয়ায় সেগুলো তারা ব্যবহার করেন না। অব্যবহৃত অবস্থায় সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে।
এজাহারে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় সংগৃহীত এসসব যন্ত্রের কোনটিই ব্যবহারের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেশিন ও যন্ত্রাংশ প্যাকেটজাত অবস্থাতেই পড়ে ছিল। এসব মেশিন কী কাজে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নির্দেশনা প্রকল্প কর্তৃপক্ষ না দেওয়ায় যন্ত্রগুলো কোনো কাজে আসেনি।
প্রকল্পের প্রশিক্ষণ খাতে ৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এসব যন্ত্র ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোনো তথ্য তদন্ত দল পায়নি। প্রকল্পের আওতায় ক্রয় পরিকল্পনা অনুসারে কেনাকাটা সারা হলেও কেনা সামগ্রী কার্যক্ষম করার জন্য পরবর্তী কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয়নি।
এসব কারণে সুধাংশ ও মোস্তাকের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৯ এর ২৩ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি তারা সরকারি অর্থের অপব্যবহার করে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।