গতবারের তুলনায় ঢাকা মহানগরে মণ্ডপের সংখ্যা বাড়লেও, সারা দেশে এই সংখ্যা কমেছে।
Published : 08 Oct 2024, 04:34 PM
দুদিন পরেই শুরু হতে যাওয়া বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা ঘিরে দেবী আরাধনায় প্রস্তুত হচ্ছে দেশের মণ্ডপ ও মন্দির।
পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, গতবারের তুলনায় ঢাকা মহানগরে মণ্ডপের সংখ্যা বাড়লেও, সারা দেশে এই সংখ্যা কমেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে পরিষদ জানায়, দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে এবার পূজা হবে। গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি ।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, "প্রস্তুতি নিতে অপারগ হওয়ায় ও বন্যার কারণেও দুর্গত এলাকায় কোথাও কোথাও পূজার্থীরা এবার পূজার আয়োজন করতে পারেননি।"
তবে ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, গত বছর হয়েছিল ২৪৮টিতে।সে হিসেবে মহানগরে পূজামণ্ডপ চারটি বেড়েছে।
রীতি অনুযায়ী শারদীয় দুর্গাপূজার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে এই মতবিনিময় করা হয় বলে সভায় জানানো হয়।
গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
মঙ্গলবার হবে বোধন। বুধবার ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী। ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাঅষ্টমী ও ১২ অক্টোবর মহানবমী।
পঞ্জিকা মতে এবার মহানবমী পূজার পরই দশমী বিহিত পূজা হবে। ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমী উদযাপন হবে এবং ওইদিন বিকালে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বিজয়ার শোভাযাত্রা বের করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।
নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা
এবার সারাদেশে ১৮টি পূজামণ্ডপে প্রতিমা ভাঙা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সন্তোষ শর্মা।
তিনি বলেন, “সারাদেশের পূজা মণ্ডপ এবং আইনশৃংখলাবাহিনীর কাছ থেকে আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে এবারও ১৮টি জায়গায় প্রতিমা ভাঙা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি মামলা হয়েছে এবং ১২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।"
অতীতেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর ‘হামলা হয়েছে, কিন্তু ন্যায়বিচায় হয়নি’ মন্তব্য করে সন্তোষ শর্মা বলেন, "এবার নতুন সরকারের কাছে আমরা ন্যায়বিচার চেয়েছি, তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এই প্রথমবার সেনাবাহিনী প্রধান আমাদের মন্দিরে এসে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশে সবার সহযোগিতা নিয়ে ভালোমত পূজা উদযাপন করতে পারব বলেই আশা রাখি।"
ঢাকার ধামরাই, কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলা, নড়াইল সদর উপজেলা, রংপুর সদরে লাহিড়ীহাট, নরসিংদীর পলাশ, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, কুমিল্লার চকবাজার, টাঙ্গাইলে দাইনা ইউনিয়ন, ময়মনসিংহের গৌরিপুর, লক্ষীপুরের রামগঞ্জ, বরগুনার গলাচিপা চন্ডিপুর, ফরিদপুরের ভাঙা, শেরপুরের শ্রীপুর, লালমনিরহাটের আদিতমারি, পাবনার সুজানগর, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড় ভিটা, বরিশালের বাখেরগঞ্জ ও চাপাইনবাবগঞ্জের বটতলা থেকে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে সভায় জানান হয়।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, "জানতে পেরেছি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পূজার মধ্যে আমরা এসব হামলা দেখতে চাই না।
“শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ নয়, রাষ্ট্রের আলোকিত চেতনা ও সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে এই সহিংসতার অবসান ঘটাতে হবে।"
তিনি বলেন, কেবল পূজার পাঁচদিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবলে হবে না, বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়তে চাইলে ৩৬৫ দিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে।
শারদীয় দুর্গাপূজা সামনে রেখে এবার ‘সুদূরপ্রসারী এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে’ মন্তব্য করে জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, "এবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজজামান ছুটে এসেছেন শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে, ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে। তার আগে নবম ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল মঈন এসেছেন। সুন্দরভাবে পূজার আয়োজন নিয়ে তাদের আগ্রহ আমাদের সাহস জুগিয়েছে।"
তাছাড়া পুলিশ বাহিনী, সরকার, রাজনৈতিক দলগুলোও আয়োজনে ‘সাহস জোগাচ্ছে’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় আট দফা দাবি তুলে ধরা হয় সভায়।
১. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন।
২. জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন।
৩. অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখল ভুক্তভোগীদের বরাবরে আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রত্যর্পণ।
৪. জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সরকার, সংসদ, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সকল সংস্থায় অংশীদারিত্ব ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
৫. দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন (ইতোমধ্যে খসড়া বিল চূড়ান্তকৃত)।
৬. বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন (ইতোমধ্যে খসড়া বিল চূড়ান্তকৃত)।
৭. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন যথাযথভাবে কার্যকর করা এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন।
৮. হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দূর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী– ৩ দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় ১ দিন ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডে'তে ১ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা।
অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর সভায় বক্তব্য দেন। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পালও উপস্থিত ছিলেন।