একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথমে সবার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিলেও শেষ মুহূর্তে সাংবাদিকদের মোটরসাইকেলে ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
Published : 06 Apr 2023, 11:40 AM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের দিন সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের কাজ গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন; তবে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের কাজে মোটর সাইকেল ব্যবহার করা যাবে কি না, তার মীমাংসা এখনও হয়নি।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, অনুমোদিত কার্ডধারীরা ভোটকেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে কী করতে পারবেন, কী পারবেন না- সেসব বিষয় আগের মতই থাকছে। তবে ভোটের দিন মোটর সাইকেল ব্যবহারে ‘কড়াকড়ি’ আরোপের প্রস্তাব নিয়ে আরও পর্যালোচনা চলছে।
জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, “মঙ্গলবারের কমিশন সভায় ‘নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক বা গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য নীতিমালা’র প্রস্তাবগুলো যাচাই বাছাই হয়েছে। অধিকাংশ প্রস্তাবই গত সংসদ নির্বাচনে যেমন ছিল তেমন থাকছে। তবে কয়েকটি বিষয় আরও পর্যালোচনা করে ইসি চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।”
তিনি জানান, ভোটের দিন পর্যাবেক্ষক ও সাংবাদিকরা ইসির অনুমোদিত স্টিকার লাগানো যানবাহন ব্যবহার করতে পারেন। শহর এলাকায় জনসাধারণের মোটর সাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছিল গতবার। এবারও সেই ছাড় থাকবে কিনা, তা পর্যালোচনা করবে কমিশন।
“নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়নি। অনেকগুলো সুপারিশ রয়েছে। ভোটের দিন নানা বিষয় পর্যালোচনা করে কোনো কিছুর যেন অপব্যবহার না হয়, কমিশন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে,” বলেন অশোক কুমার।
ভোটের সময় সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিলে শাস্তি আরোপের বিধান করার একটি প্রস্তাবও কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন করেছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংস্কারের যে প্রস্তাব মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, কেউ যদি গণমাধ্যমকর্মী এবং পর্যবেক্ষকদের আইনানুগ কাজে বাধা প্রদান করে, সেক্ষেত্রে ২ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ২৮ মার্চ সাংবাদিকদের খসড়া সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন নিয়ে আলোচনায় বলেন, “গণমাধ্যমের বিপক্ষে কখনোই আমাদের অবস্থান নয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা, সার্বিক কর্মকাণ্ডকে জনস্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হয়, সেটা আমরা দেখব। আমরা আপনাদের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করব।”
গতবার যা হয়েছিল
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে একডজন নির্দেশনাসহ সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা করা হয়। তাতে ইসির বৈধ কার্ডধারীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে জানানো, তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা, ভিডিও ধারণের কথা বলা হয়। ভোটকক্ষের গোপন কক্ষে ছবি নিতে বারণ করা হয়।
নির্বাচনী আইন-বিধি অনুযায়ী নির্বিঘ্ন তথ্য সংগ্রহ ও প্রচারের বিষয়গুলোও ছিল নির্বাচন কমিশনের ওই নীতিমালায়। তবে ভোটের দিন সাংবাদিকদের মোটর সাইকেল ব্যবহারের জন্য স্টিকার বরাদ্দের কোনো বিষয় সেখানে ছিল না।
তৎকালীন ইসি সচিব বলেছিলেন, ভোটের দিন মহানগর ও শহর এলাকায় মোটর সাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। মোটর সাইকেল ব্যবহার করে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হওয়ার শঙ্কা থেকে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই এ সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনে নিরবচ্ছিন্ন সংবাদ সংগ্রহ করতে জেলা পর্যায়ে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাংবাদিকরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন। সেজন্য সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মোটর সাইকেল ব্যবহারের অনুমতি নিতে হবে সাংবাদিকদের।
বিষয়টি সে সময় সাংবাদিকদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দেয়। পরে সংসদ নির্বাচনের দুই দিন আগে কড়াকড়ি শিথিল করে জানানো হয়, এ নিষেধাজ্ঞা ইসির ‘সাংবাদিক’ লেখা স্টিকারযুক্ত মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
আরও পড়ুন:
ভোটে সাংবাদিকদেরও মোটরসাইকেল চড়তে মানা
ভোটে পর্যবেক্ষক-সাংবাদিকদের বাধা দিলে সাজার বিধান আসছে
ইসির স্টিকার থাকলে ছাড় পাবে সাংবাদিকের বাইক