স্কুলছাত্রী জেসিকা হত্যার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

ঢাকার ওয়ারী থেকে শনিবার রাতে বিজয় রহমান নামের ২২ বছর বয়সী ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2023, 10:29 AM
Updated : 5 Feb 2023, 10:29 AM

মুন্সীগঞ্জের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জেসিকা মাহমুদ জেসি হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

ঢাকার ওয়ারী থেকে শনিবার রাতে বিজয় রহমান নামের ২২ বছর বয়সী ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ৩ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ওই জেসিকার ‘রহস্যজনক’ মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই হত্যা মামলা করলে তদন্তে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বিজয়কে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে আল মঈন বলেন, ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া আদিবা আক্তার নামে এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় বিজয়। এদিকে সম্পর্ক চলাকালে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে জেসিকার সঙ্গেও তার প্রেমের সম্পর্ক হয়।

“দুজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রেখেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদিবাকে গোপনে বিয়ে করে বিজয়। জেসিকা বিয়ের বিষয়টি জেনে গেলে বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রিনশর্ট আদিবার মেসেঞ্জারে পাঠায়।”

এ নিয়ে বিজয় ও আদিবার মধ্যে বিভিন্ন সময় কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া-বিবাদ হত, তাতে দুজনের সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়।

মঈন জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জেসিকাকে ‘উচিৎ শিক্ষা’ দিতে আদিবার সঙ্গে আলোচনা করেন বিজয়।

“পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৩ জানুয়ারি বিকালে আদিবা জেসিকার সঙ্গে দেখা করেন। জেসিকা তখন বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন সময়ের কথোপকথোনের স্ক্রিনশর্ট দেখায়। বিষয়টি মীমাংসার কথা বলে আদিবা তখন জেসিকাকে বিজয়দের বাসার ছাদে নিয়ে যায়। পরে আদিবা ফোন করে বিজয়কে ছাদে আসতে বলে।

“সেখানে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির একপর্যায়ে বিজয় ও আদিবা জেসিকার গলাটিপে ধরলে সে (জেসিকা) অজ্ঞান হয়ে পড়ে। নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে তখন তারা ‘জেসিকার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার নাটক সাজায়। অজ্ঞান অবস্থায় জেসিকাকে ছাদ থেকে নামিয়ে এনে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার ভেতরে চলে যায়।”

পরে পাশের বাসায় থাকা বিজয়ের চাচা জেসিকাকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করেন; এ সময় বিজয় ও তার পরিবারের সদস্যরা বাসা থেকে নিচে নেমে আসে।

মঈন বলেন, একপর্যায়ে বিজয় ও তার বাবাসহ স্থানীয়রা জেসিকাকে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে বিজয়ই ফোন করে জেসিকার ভাইকে হাসপাতালে যেতে বলে। জেসিকার ভাই হাসপাতালে পৌঁছালে চিকিৎসক জেসিকে মৃত ঘোষণা করেন।

জেসিকার মৃত্যুর কথা শুনে বিজয় ও আদিবা সেখান থেকে পালিয়ে যান। ময়নাতদন্তে জেসিকাকে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি ওঠে আসে। তখন জেসিকার ভাই মুন্সীগঞ্জ থানায় বিজয় ও আদিবার নামে উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় গত ৪ জানুয়ারি আদিবাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে গ্রেপ্তার করা হয় বিজয়কে।

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, মুন্সীগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেন বিজয়। হত্যাকাণ্ডের পর মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় এক বন্ধুর বাড়িতে চারদিন আত্মগোপনে থাকেন তিনি।

“পরে ফরিদপুরের একটি মাজারে আরও ২২ দিন সে আত্মগোপনে থাকে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।”

১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ওয়ারীতে এসে আরেক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনের চেষ্টা করলে সেখান থেকে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে বলে জানান মঈন।

আরও পড়ুন

Also Read: মুন্সীগঞ্জে প্রতিবেশীর বাসায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা