“যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞায় যে অভিযোগগুলো দিয়েছে, সেগুলো আলজাজিরার ওই ডকুমেন্টারিতে ছিল,” বলেন তিনি।
Published : 21 May 2024, 06:10 PM
দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির যে অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেসব অভিযোগই ‘অসত্য’ বলে দাবি করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
তিনি এও বলেছেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান হিসেবে বা সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি কোনো দুর্নীতি করেছেন- এমন প্রমাণ করতে পারলে ‘যে কোনো পরিণতি’ তিনি মেনে নেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মঙ্গলবার যমুনা টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন।
সাবেক সেনাপ্রধানের ভাষ্য, তিন বছর আগে কাতারভিত্তিক আলজাজিরায় প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে তথ্যচিত্রের সঙ্গে এ নিষেধাজ্ঞার সম্পর্ক রয়েছে।
ওই তথ্যচিত্রকে ‘নাটক’ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদ।
তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন।
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ একাত্তর টিভিকে বলেছেন, “আমার যাওয়ার ব্যাপারে রেস্ট্রিকশন দিয়েছে, মানে আমি যেতে পারব না। ঠিক আছে, গেলাম না। আমেরিকা যেতেই হবে এমন কোনো কথা আছে?
“বাট, সত্যিকার অর্থে এটা এম্বারাসিং - আমেরিকা কেন করল, কী করল আই ডু নট নো। দিস ইজ ভেরি আনফরচুনেট।”
২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর বাংলাদেশের চিফ অব আর্মি স্টাফ ছিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তার আগে ২০১২ সাল থেকে চার বছর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির নেতৃত্ব দেন।
সেনাপ্রধান হিসেবে মেয়াদের শেষ সময়ে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ তোলা হলে সরকার এবং সেনাসদর সে সময় প্রতিবাদ জানিয়েছিল। আজিজ আহমেদও অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আজিজ আহমেদ নিজের ভাইকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেন এবং এর মধ্য দিয়ে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হন। তাছাড়া অন্যায়ভাবে সেনাবাহিনীর কাজ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন।”
মঙ্গলবার যমুনা টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আজিজ আহমেদ বলেন, “প্রথমে এক কথায় বলব, সত্যি আমি অবাক হয়েছি। আমার এক বন্ধু আমাকে কপিটা (নিষেধাজ্ঞার বিবৃতি) পাঠিয়েছে। প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে একটা বিষয় জানতে চাচ্ছি, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ আলজাজিরাতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল।
“যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞায় যে অভিযোগগুলো দিয়েছে, সেগুলো আলজাজিরার ওই ডকুমেন্টারিতে ছিল। আমি দেখতে পাচ্ছি ওই অনুষ্ঠানে যে অভিযোগ দুটো আনা হয়েছিল সেটার সাথে সম্পৃক্ত। একচুয়ালি সেই জিনিসটাই, যদিও এখানে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। কিন্তু অভিযোগ দুইটা একই।”
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ বলেন, “প্রথম অভিযোগ হচ্ছে, আমার ভাই অপরাধ কর্মকাণ্ড করে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন যেন এড়িয়ে চলতে পারে, সেজন্য আমি সহযোগিতা করেছি।
“প্রথমটার উত্তর হচ্ছে, আমার সেই ভাই আমি জেনারেল হওয়ার অনেক আগে থেকেই বিদেশে। নিশ্চয় সে বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই গিয়েছে। সেখানে তার দেশ থেকে চলে যাওয়ার বা দেশের প্রচলিত আইন ফাঁকি দেওয়ার বিষয়ে আমি আমার পদ-পদবি ব্যবহার করেছি, এই অভিযোগ আমি মেনে নিতে পারি না। এটা সঠিক নয়।”
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তিখণ্ডন করতে গিয়ে তিনি বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় অভিযোগ হচ্ছে, সেনাপ্রধান হিসেবে আমার ভাইকে একটা সামরিক কন্ট্রাক্ট দিয়ে আমি ঘুষ নিয়েছি, আমি দুর্নীতি করেছি।
“আমি ৪ বছর ডিজি বিজিবি থাকাকালে কিংবা তিন বছর সেনাপ্রধান থাকাকালে আমি আমার কোনো ভাইকে বা কোনো আত্মীয়কে কোনো কন্ট্রাক্ট দিয়েছি- এমন যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, আমি যে কোনো পরিণতি মেনে নিতে প্রস্তুত আছি।”
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ বলেন, “আপনারা গিয়ে খোঁজ নেন, আমার ভাইদের কারও বিজিবি বা সেনাবাহিনীতে ঠিকাদারি করার মত কোনো লাইসেন্স আছে কি না। আমার ভাইদেরকে কন্ট্রাক্ট দিয়েছি এ অভিযোগের তারা তথ্যপ্রমাণ দিক, আমি মেনে নেব। তারা এসে আমাকে বলুক, আপনার এই ভাইকে এই কন্ট্রাক্টটা দিয়েছি।”
এ বিষয়ে আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে আজিজ আহমেদ বলেন, “আমি সেরকম মনে করছি না। এটা খুবই আনফরচুনেট। আমি নিশ্চিত, এটা লোকজন বুঝবে।”
মার্কিন দূতাবাসকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “কেন? না, আমার জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই।”
নিষেধাজ্ঞার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না– সময় টিভির এমন প্রশ্নে আজিজ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে কোনো ধারণা তার নেই।
“আমি মনে করি, আমি সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এমন কোনো কাজ করিনি, এমন কোনো কাজ করিনি, আবারও জোর দিয়ে বলছি, যেটার জন্য আমার এ ধরনের একটা নিষেধাজ্ঞা পেতে হবে। আমি এমন কোনো কাজ করিনি, আমি আবারও জোর দিয়ে বলছি।”