“অনেক শিশুর সঙ্গে আমার বাচ্চারা দৌড়ঝাপ করল, বিভিন্ন রাইডে চড়ল। সবকিছু মিলিয়ে বাচ্চারা অনেক খুশি,” বলেন সাইফুজ্জামান।
Published : 01 Apr 2025, 10:24 PM
পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া আরমান শরীফ ছোটভাইকে সঙ্গে নিয়ে ‘স্কাই নেট বাম্পার কারের’ সামনে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছিল। ঈদ উপলক্ষে বাবা-মার সঙ্গে সাভার থেকে ঘুরতে আসা আরমান কয়েকটা রাইডের পর বিরতি নিচ্ছিল। হাতের আইসক্রিমটা শেষ করেই ছোটভাইকে নিয়ে উঠে পড়েবে বাম্পার কারে।
আরমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিল, “এখানে খুব ভালো লাগছে। চারটা রাইডে চড়ছি, এখন গাড়ি চালাব।”
শুধু আরমান ও তার ভাই নয়, ঢাকার শ্যামলীতে শিশু মেলার ‘ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ডে’ মঙ্গলবার এমন ঈদ আনন্দে মেতে উঠে হাজারো শিশু।
বাবা-মা বা পরিবারের বড়জনদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে এসে এখানকার নানান রাইডে চড়ে শিশুরা যেমন উচ্ছ্বাসিত, তেমনি শিশুদের নিয়ে ভালো সময় কাটিয়ে আনন্দিত অভিভাবকরাও।
ঈদের পরদিন ডিএনসিসির ওয়ান্ডারল্যান্ডে প্রবেশের জন্য শিশু-কিশোরদের সঙ্গে বাবা মায়ের টিকিট কাটার হিড়িক দেখে বিষয়টি টের পাওয়া যায় সহজেই।
শিশু-কিশোরদের বিনোদনের এই জায়গায় স্বল্প পরিসরের হলেও নানান রকমের রাইড থাকায় এটি নিয়ে তাদের আগ্রহের কমতি নেই। ঈদের ছুটিতে এটি পরিণত হয়েছে হাজারো শিশু-কিশোরের মিলনমেলায়।
এই বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশের জন্য সকলের জন্য নির্ধারিত ফি একশত টাকা। দুই বছরের কম বয়সীদের জন্য অভিভাবকের সঙ্গে বিনা টিকিটে প্রবেশের সুযোগ থাকছে। আর ভেতরে প্রত্যেকটি রাইডের জন্য আলাদা ৬০ টাকা করে টিকেট কাটতে হয়।
খবর নিয়ে জানা গেল, শিশু-কিশোরদের জন্য ২২টি রাইড রয়েছে সেখানে। এরমধ্যে মেরি গো রাউন্ড, ওয়ান্ডার হুইল, হানি সুইং, থ্রিডি গ্যালারি, ভাইকিং বোট, পেন্ডুলাম, প্যারাট্রুপার, ক্রেজি কার, স্পিড এয়ারক্রাফট, থ্রি ডি অ্যাডভেঞ্চার অন্যতম।
বেশিরভাগ রাইডেই শিশুদের সঙ্গে আসা অভিভাবকরাও অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকায় বিনোদনকেন্দ্রটি যেন হয়ে উঠেছে সকল বয়সের মানুষের মিলনমেলায়।
ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ডের ভেতরে রাইডসহ রয়েছে বিভিন্ন খেলনা ও খাবারের দোকান। ঘোরাফেরার পাশাপাশি সেসব দোকানগুলোতেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।
ওয়ান্ডার হুইল পরিচালনাকারীদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা শহরে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত পার্ক নেই বললেই চলে। সারা বছরই বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে এখানে শিশুদের নিয়ে আসেন মা-বাবারা। ঈদে আশেপাশের এলাকাসহ অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও শিশুদের নিয়ে আসেন অভিভাবকরা। যে কারণে ঈদে প্রচুর ভিড় হয়।”
চাচাতো তিন ভাই মিলে মা-বাবার সঙ্গে বাড্ডা থেকে ঘুরতে আসা চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান আফরীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “ট্রেনে চড়েছি, থ্রি ডি মুভি দেখেছি, ঘোরাফেরা শেষ। এখন বাসায় চলে যাব।”
মিরপুরের মাটিকাটা এলাকা থেকে দুই ও পাঁচ বছরের দুই সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন সাইফুজ্জামান। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদে বাচ্চাদের নিয়ে কোথাও না কোথাও বের হতেই হয়। গতকাল (সোমবার) আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় গিয়েছি। আজ বাচ্চাদের নিয়ে বের হলাম।
“এখানে আসার পর অনেক শিশুর সঙ্গে আমার বাচ্চারা দৌড়ঝাপ করল, বিভিন্ন রাইডে চড়ল। সবকিছু মিলিয়ে বাচ্চারা অনেক খুশি। খুব ভালো লাগছে এখানে এসে।”
মিরপুর এক নম্বর এলাকা থেকে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন পেশায় ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন। ওয়ান্ডারল্যান্ডের কৃত্রিম পাহাড়ের সামনে দুই মেয়েকে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলছিলেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেয়েদের নিয়ে আসলাম। তারা ঘুরেফিরে দেখছে। পরে তাদের ইচ্ছা হলে হয়তো কোনো রাইডে চড়বে।”
পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে নয়নকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন ঠিকাদারির কাজ করা নারায়ণ বর্মন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদে ছেলের ছুটি, আমারও কাজ নেই। তাছাড়া তার বন্ধু-বান্ধবরা ঘুরতে বের হয় ঈদে, সকাল থেকে বলছিল ঘুরতে আসবে। সেজন্য নিয়ে এলাম।”
ঢাকার মোহাম্মদপুরের এই বাসিন্দা বলেন, “এখানে এসে ছেলে খুবই খুশি, কয়েকটা রাইডে উঠেছে। ঘোরাফেরা করলো, আরেকটু ঘুরে ফিরে বাসায় চলে যাবো।”