ডিএসসিসির দেয়ালে দেয়ালে আশিকুরের ‘দুর্নীতির শ্বেতপত্র’ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
Published : 16 Aug 2024, 12:27 AM
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আবেদন করলেও সেটি নাকচ করে দিয়ে তাকে শেষপর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত করল স্থানীয় সরকার বিভাগ।
ক্ষমতার পালাবদলে পরিবর্তনের হাওয়ায় আশিকুরের অপসারণ চেয়ে গত কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছিলেন ডিএসসিসির প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার সিটি মেয়র বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন তিনি।
বিষয়টি মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছিলেন সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মিজানুর রহমান।
বুধবার স্থানীয় সরকার বিভাগ ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেওয়া ফিরতি চিঠিতে ডিএসসিসির চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী আশিকুরকে সাময়িক বরখাস্তের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। অর্থাৎ তার পদত্যাগ গ্রহণ করেনি স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এরপর বৃহস্পতিবার এক অফিস আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে ডিএসসিসি।
পদত্যাগপত্রে আশিকুর রহমান বলেছিলেন, “সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৪৪ ধারা অনুসারে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আমি অবসর গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম। প্রযোজ্য আইন অনুসারে আমার ঐচ্ছিক অবসর সময়মতো সদয় বিবেচনার জন্য বিনীত অনুরোধ করলাম।”
৫ অগাস্ট গণআন্দোলন ও জনরোষের মুখে দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় আওয়ামী লীগপন্থি বা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া বা পদায়ন হওয়া কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত এবং স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার ঘটনা বেড়েছে।
আশিকুরের পদত্যাগের দাবিতে গত রোববার ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত দাবি করেন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের একটি অংশ। নগর ভবনের বিভিন্ন দেয়ালে সচেতন নাগরিকের ব্যানারে পোস্টারও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধান প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তরের দরজায় লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘প্রবেশ নিষেধ’ পোস্টার।
৫ জুন সরকার পতনের পর থেকে আশিকুর এবং খায়রুল কার্যালয়ে আসছেন না। এর মধ্যে ডিএসসিসির দেয়ালে দেয়ালে আশিকুরের ‘দুর্নীতির শ্বেতপত্র’ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শ্বেতপত্রে অভিযোগ আনা হয়েছে, আশিকুর রহমান মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় আটশ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২শ কোটি টাকা করেছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগে ওয়ান-ইলেভেনের পর তিনি পালিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। সিটি করপোরেশনের নানা প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট, প্লটসহ নানা ধরনের সম্পদ গড়ে তুলেছেন তিনি।
২০২৩ সালে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পান আশিকুর।
ডিএসসিসির একজন নির্বাহী প্রকৌশলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিএসসিসির অনেক উন্নয়নকাজ আশিকুর রহমানের জন্য আটকে গেছে। প্রকৌশলী, কর্মীরা তার কাছে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
“মূল দাবি, আমরা সবাই নির্যাতিত তার কাছে। যেসব কর্মচারী ছিল, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমাদের প্রকৌশলীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও তাদের নির্যাতন করতেন তিনি। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।”
আগে তাকে অপসারণের দাবি তোলেননি কেন, জানতে চাইলে ওই প্রকৌশলী বলেন, “আমরা এর আগেও অনেকবার মেয়র মহোদয়, সিইও স্যারকে বলেছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি, তার (আশিকুর) যোগাযোগ অনেক বেশি। কিন্তু এখনকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন, এ জন্য আমরা দাবিটি আবার জানিয়েছি। আমাদের দাবির সঙ্গে দুজন বাদে সব প্রকৌশলী একাত্মতা জানিয়েছেন।”
আরও পড়ুন