হাসপাতালের পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, "হাসপাতালের পরিস্থিতি ভালো নয়।"
Published : 01 Sep 2024, 11:53 AM
এক শিক্ষার্থী এবং কিডনি রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধর এবং একটি ওয়ার্ডে ঢুকে দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপের মারামারির ঘটনায় কর্মবিরতি শুরু করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা।
তাদের এই কর্মসূচিতে অন্য চিকিৎসকরা সংহতি জানানোয় রোববার সকাল থেকে হাসপাতালের সব বিভাগে সেবা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। ফলে নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "শুরুতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। এরপর অন্য চিকিৎসকরাও এতে সংহতি জানিয়েছেন।
“এর ফলে জরুরি বিভাগ, ইনডোর, আউটডোরসহ সব জায়গায় চিকিৎসা দেওয়া বন্ধ আছে।"
সদ্য বিলুপ্ত ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সহসভাপতি সোহেল রানা রনি জানিয়েছেন, তাদের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে শনিবার রাত থেকে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রনি বলেন, “হাসপাতালে যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের দাবি, যারা এ ঘটনায় জড়িত, সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।"
ঢাকা মেডিকেলে শুক্রবার রাতে ভর্তি হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয় শনিবার সকালে। ওই ঘটনায় ওই রোগীর স্বজনরা দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধর করে।
হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “ওই ছাত্র মারা যাওয়ার পর তার স্বজনরা একজন চিকিৎসককে মারতে মারতে পরিচালকের ঘর পর্যন্ত নিয়ে যায়। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে ইন্টার্ন চিকিৎসকের কর্মবিরতি আমরা সমর্থন করছি, আমরা তাদের সঙ্গে আছি।”
চিকিৎসক রনি বলেন, শনিবার ইউরোলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন এক কিডনি রোগী মারা গেলে তার স্বজনরাও ইন্টার্ন চিকিৎকদের মরধর করে।
“এছাড়া রোববার মধ্যরাতে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপ নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্তত ২০০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক রোগীদের সেবা দেন। তারা কাজ বন্ধ রাখায় শনিবার রাতেই অনেক বিভাগে সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অন্য চিকিৎসকরা সংহতি জানালে রোববার সকাল থেকে সব বিভাগের চিকিৎসা সেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে দায়িত্বরত একজন নার্স বলেন, "আমরা তো আছি, উনারা (ডাক্তার) যে নাই সেটা তো দেখতেছেনই।"
এদিকে হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আশরাফুল ইসলামকে সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর কোনো চিকিৎসা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা রিপন মিয়া।
তিনি বিডিনিউজ টোয়ন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ভোরবেলা ছেলেটা ট্রাক্টর নিয়ে বের হইছে, একটি বাইক বাঁচাতে গিয়া ছেলেটা বাড়ি খাইছে। মাথায় অনেক আঘাত পাইছে, রক্ত পড়তেছে। তিন ঘণ্টা ধইরা বইসা আছি কোনো ডাক্তার নাই।"
গাছ থেকে পড়ে মেরদণ্ডের হাড় ভেঙেছে মুন্সিগঞ্জের গাজরিয়ার ফিরোজ মিয়ার। ঢাকা মেডিকেলের মুল বিল্ডিংয়ের নিচ তলার ১০০ নং ওয়ার্ডের ২৬ নং বেডে ভর্তি আছেন তিনি।
ফিরোজের স্ত্রী বলেন, "সকাল থেকে কোন ডাক্তার আসে নাই, কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না।"
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "হাসপাতালের পরিস্থিতি ভালো না।"