"আমরা রাতে শহীদ মিনারেই অবস্থান করেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।"
Published : 09 Jan 2025, 01:19 PM
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার ‘নিরপরাধ জওয়ানদের’ মুক্তি ও পুনঃ তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পরিবারের সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা আবারো শাহবাগ অভিমুখে পদযাত্রা করার ঘোষণা দিয়েছেন।
কারাবন্দি বিডিআর সদস্য মোল্লা সাঈদ হাসানের বাবা মোল্লা নাবিউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "৮২৪ জন কারাবন্দি আছেন। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন। চাকরিচ্যুত হয়েছেন অনেকে। আমরা বন্দিদের মুক্তি, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল ও পুনর্বাসন দাবি করছি।"
অবস্থান কর্মসূচিতে তিন দফা দাবি জানানো হচ্ছে। দাবিগুলো হল– পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার সব বিডিআর সদস্যের মুক্তি, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলা বাতিল, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল ও পুনর্বাসন এবং পিলখানা হত্যা মামলায় পুনঃতদন্ত ও ন্যয়বিচার।
শহীদ মিনারে অবস্থানরতদের ছাত্র-প্রতিনিধি নাইমুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা বেলা ১টায় শাহবাগের দিকে পদযাত্রা শুরু করব।"
গ্রেপ্তার বিডিআর সদস্যদের স্বজনদের এই কর্মসূচি শুরু হয় বুধবার সকাল থেকে। সেখানে মানববন্ধন করে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহাল এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের 'অবিলম্বে' মুক্তির দাবি জানানো হয়। পরে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিতে তার রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন তারা।
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার পর তারা শাহবাগ মোড়ে এলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে একটি প্রতিনিধিদলকে স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
জেলবন্দি এক বিডিআর সদস্যের ভাই রিয়াজুদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, " আমাদের ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকারের নেতৃত্বে স্মারকলিপি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যান। অন্যদের মধ্যে একটি অংশ শাহবাগ থানা সংশ্লিষ্ট সড়কে অবস্থান নেয়, আরেকটি অংশ শহীদ মিনারে ফিরে যায়।
"আমরা রাতে শহীদ মিনারেই অবস্থান করেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।"
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
বিডিআর বিদ্রোহ: 'নিরপরাধ জওয়ানদের' মুক্তির দাবিতে পদযাত্রায় পুলিশ
এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি ওঠে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
পনের বছর আগে এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।