পুলিশের বাধা পেয়ে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিতে যায়।
Published : 08 Jan 2025, 04:59 PM
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার জওয়ানদের 'নিরপরাধ' দাবি করে তাদের মুক্তির দাবিতে স্বজনদের পদযাত্রা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় পৌঁছাতে পারেনি পুলিশের বাধায়।
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া এ পদযাত্রাটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ আটকে দেয়।
বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত তারা শাহবাগ জাদুঘরের সামনে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর।
তিনি বলেন, কারাগারে থাকা ও চাকরিচ্যুত বিডিআর জওয়ানদের পরিবারের সদস্যরা এসে শাহবাগে অবস্থান নেওয়ায় বর্তমানে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের দিকে সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠছে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
পনের বছর আগে এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।
এর মধ্যেই বুধবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত হতে থাকেন তখনকার ঘটনার প্রেক্ষিতে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের পরিবাররা।
তারা সেখানে মানববন্ধন করে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহাল এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের 'অবিলম্বে' মুক্তির দাবি জানানো হয়। পরে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিতে তার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন।
বেলা সাড়ে ১২টার পর তারা পদযাত্রা করে শাহবাগ মোড়ে এলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “বিডিআর বিদ্রোহের পর চাকরিচ্যুত ও কারাগারে থাকা বিডিআর সদস্যদের পরিবারের লোকজন এ আন্দোলন করছেন। তারা শাহবাগে এলে পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদেরকে আটকে দেওয়া হয়।”
শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, তাদের পক্ষ থেকে নয় সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিতে গেছেন।
“তারা স্মারকলিপি দিয়ে এখনও ফেরত আসেননি। আর অন্যরা শাহবাগে অবস্থান করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।”