গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং অঞ্চলটিতে অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
Published : 06 Nov 2023, 11:38 PM
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একই সঙ্গে ইসরায়েলি হামলায় বিপর্যস্ত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং অঞ্চলটিতে অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, “আমাদের অবশ্যই একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমি আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের পক্ষে আমার ভূমিকা অব্যাহত রাখব।”
সোমবার সৌদি আরবের জেদ্দায় ওআইসি আয়োজিত ‘ইসলামে নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন অধিবেশনে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিন দিনের এ আয়োজনে পাঁচটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে বাসস জানিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা গাজায় নিরীহ নারী ও শিশুদের ওপর ইসরায়েলি নৃশংসতার নিন্দা করছি। গাজার এ নৃশংসতা- ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় অমানবিক নির্যাতনের শিকার দুই লাখ নারীর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।”
তিনি বলেন, “গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত ও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য আমি সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমি এই ভয়াবহ যুদ্ধ, নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ ও অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধে ভূমিকা রাখার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
“এ নৃশংস ঘটনাগুলো আমাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট আমার বাবা-মা এবং নারী ও শিশুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।”
গাজার ঘটনার কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, “এটি মিয়ানমারের হাজার হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর নির্যাতনের দৃশ্যকেই ফুটিয়ে তোলে, যারা নৃশংসতার শিকার হলে ২০১৭ সালের অগাস্টে আমাদের সীমান্তে আশ্রয় চেয়েছিল।”
অনুষ্ঠানে মুসলিম নারীদের জন্য এক গুচ্ছ পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রথমত ফিলিস্তিনে অবিলম্বে সংঘাতের অবসান এবং সেখানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের- বিশেষ করে নারী ও শিশুদের উপর অপরাধের বিচার দাবিতে সোচ্চার হোন।
“দ্বিতীয়ত সমস্ত অপরাধ, সহিংসতা, বৈষম্য ও নারীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ইসলাম ফোবিয়াকে না বলুন।”
এসডিজি-৫ পূরণের লক্ষ্যে লিঙ্গ সমতা অর্জন ও নারীদের ক্ষমতায়নের দিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, মুসলিম নারীরা যেন ইচ্ছেমতো স্বাধীনভাবে জনসমক্ষে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারেন- তা নিশ্চিত করুন।
“নারীর ক্ষমতায়ন ও মূল স্রোতে নারীদের ভূমিকার উজ্জ্বল উদাহরণ বাংলাদেশ, বন্ধুপ্রতীম মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বিনিময়ে আমরা প্রস্তুত।”
নারীর ক্ষমতায়নের স্বার্থে বাংলাদেশ ওআইসি’র নারী উন্নয়ন সংস্থায় (ডব্লিউডিও) যোগ দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ডব্লিউডিও যাত্রা শুরু করেছে এবং আমি আশা করি, ইসলামকে আরও ভালভাবে বোঝার মাধ্যমে আজকের চাহিদাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এ ম্যান্ডেটকে প্রসারিত করা যেতে পারে।
“তবেই আমরা একটি বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের স্বপ্ন দেখতে পারি। আমি এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সাফল্য কামনা করছি।”
চলমান এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইসলামে নারীর মর্যাদা তুলে ধরার জন্য সৌদি আরব ও ওআইসিকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
ইসলামকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর আহ্বানে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ছিলেন একজন নারী- বিবি খাদিজা।”
তিনি বলেন, তার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমমর্যাদা নিশ্চিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে নারীদের জন্য ১৫টি সংরক্ষিত আসনের বিধান করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসেবে তিনি নারী ক্ষমতায়নের কাজটি অব্যাহত রেখেছেন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০টিতে উন্নীত করেছেন।
“আমাদের জাতীয় সংসদে এখন ৭৩ নারী সাংসদ রয়েছেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, “নারীরা সব সময়ই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক সংস্কার ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রথম সারিতে থেকেছেন। তারা নিজেরাই যেন কাজের মাধ্যমে তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারেন, আমি তাদের প্রতি সেই আহ্বান জানাচ্ছি।”
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বৈশ্বিক সূচকে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের একটি অনন্য উদাহরণ আছে- যেখানে জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা ও সরকারি দলের উপনেতা সবাই নারী।
“এছাড়াও আমাদের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে নারীদের জন্য সুবিধাসহ দেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণ করছে।
“বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিও আমাদের নারীদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের প্রমাণ।”
দেশের আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রায় ৪৬ শতাংশই নারী কর্মী উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নারী উদ্যোক্তারা আমাদের কুটির, ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পে বড় ধরনের অবদান রাখছেন। আইটি ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স ও স্টার্ট-আপে নারীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আইন অনুসারে সকল জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। আমরা নারী শান্তি ও নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি।
“আমাদের নারী শান্তিরক্ষীরা গর্বের সাথে আফ্রিকায় জাতিসংঘের মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন।”
বাসস জানিয়েছে, এ দিন মক্কায় মসজিদ মসজিদুল হারামে ওমরাহ করেন সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে কাবা শরিফ তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়া সায়ি করেন।
পরে সফরসঙ্গীদের নিয়ে মসজিদুল হারামে নামাজ আদায় করেন শেখ হাসিনা। এর আগের দিন মদিনায় মসজিদে নববীতে হযরত মুহাম্মদ (স.) এর রওজা জিয়ারত করেন তিনি।