Published : 17 Nov 2024, 08:36 PM
বাংলাদেশে জেনিভা ক্যাম্পে বসবাসকারী উর্দুভাষীদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেস ইনস্টিটিটিউট অব বাংলাদেশ-পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। তার দাবি, উর্দুভাষীদের সঙ্গে ‘যা খুশি করা যায়’।
উর্দুভাষীরা একটি ‘মহান ভাষা সংস্কৃতির উত্তরাধিকার’ বহন করছে মত দিয়ে এই ‘স্বীকৃতি’ না দেওয়ায় আক্ষেপও জানিয়েছেন তিনি।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে 'ক্যাম্পের উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ী পুনর্বাসন: জাতীয় প্রতিনিধি সমাবেশ ও সংলাপ' শীর্ষক অনুষ্ঠানের সমাপনী অধিবেশনে পিআইবি প্রধান এসব কথা বলেন।
এই সংলাপের আয়োজক ছিল রেফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট বা রামরু।
অনুষ্ঠানে ঢাকার মিরপুর ও মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন ক্যাম্পে নারায়ণগঞ্জের আদমজী, নীলফামারীর সৈয়দপুর, রংপুর, বগুড়া, পাবনার ঈশ্বরদী, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম এবং বসবাসরত উর্দুভাষীদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
উর্দুভাষীদের বিষয়ে ফারুক ওয়াসিফ বলেন, "বাংলা ভাষায় আমাদের ‘শহীদ মিনার’ উর্দু ভাষা থেকে, তারপরও এই স্বীকৃতিটা আমরা তাদেরকে দিচ্ছি না। তারা বাংলাদেশি এবং তারা একটি ‘মহান ভাষা সংস্কৃতি’র উত্তরাধিকার বাংলাদেশে বহন করছেন।”
একটি বিশেষ ধরনের ‘উগ্র জাতীয়তাবাদ’ থেকে এটা করা হত বলে মত দিয়ে তিনি বলেন, “যেখানে সম্পত্তির ব্যাপার আছে দখলের ব্যাপার আছে সেখানে এমন বিষয়গুলোকে দাঁড় করানো হয়।"
পিআইবি প্রধান বলেন, "বাংলাদেশের সবার জন্য কম বেশি কিছুটা কানুন আছে, সাহারা আছে, সহায় আছে, কিন্তু উর্দুভাষীদের ক্ষেত্রে তা নেই।
"তারা এমন মানুষ যাদের জমি কেড়ে নেয়া যায়, তাদেরকে হত্যা করা যায়, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া যায়, সবকিছু করা যায়। এমন কোনো জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে নাই যাদের সাথে সবকিছু করা যায়।…কারও বন্ধু দেশে থাকে, কারও বন্ধু বিদেশে থাকে, কিন্তু উর্দুভাষীদের দেশেও কোনো বন্ধু নাই, বিদেশেও কোনো বন্ধু নেই।”
‘বৈষম্যহীন সমাজ’ প্রতিষ্ঠায় উর্দুভাষী তরুণদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জাহেদ উর রহমান।
তিনি বলেন, "ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বাংলাদেশের একটি সম্পদ।"
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের নৃ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অবন্তী হারুন বলেন, "উর্দু ভাষার অস্তিত্ব বাংলা ভাষার জন্য হুমকি নয়, বরং উর্দু এই দেশের বহু ভাষার বৈচিত্র্যেরই একটি অংশ।"
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নারী পক্ষের শিরিন হক বলেন, "উর্দুভাষী নারীরা বিশেষভাবে বৈষম্যের শিকার। তাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।"
আয়োজক সংগঠন রামরুর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার বলেন, " ক্যাম্পগুলোতে বসবাসকারী উর্দুভাষীদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাদের সন্তানরা পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখনই তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলার সময়।
“এগুলো আমরা শুরু করেছি, তবে বাস্তবায়নের জন্য সবাই এগিয়ে আসতে হবে। "
‘আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি’
অনুষ্ঠানে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি আশরাফুল হক বাবু বলেন, "বিগত ৫০ বছর ধরে আমরা ৮ ফুট বাই ৮ ফুটের একটি ঘরে মানবেতর ভাবে বসবাস করছি। উচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও আমরা আজও যথাযোগ্য মর্যাদা পাইনি। কেন আমাদের সাথে এই অন্যায়?"
আয়োজনে অনলাইনে যুক্ত হন বাংলাদেশের বিহারী ক্যাম্পের (জেনিভা ক্যাম্প) সাবেক বাসিন্দা ও বর্তমান নেদারল্যান্ডসের নাগরিক গবেষক হাসান মোহাম্মদ।
তিনি বলেন, "উর্দুভাষী বাংলাদেশিদের পরিচয় সংকটকে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এই সংকট আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। এর মধ্য দিয়েই আমরা সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।"
জেনিভা ক্যাম্প: শতকোটির মাদক সাম্রাজ্য নিয়ে প্রাণক্ষয়ী সংঘাত