“ড্রাইভার আমার পেটে লাথি দেয়, গেঞ্জি ধরে টেনে ছিঁড়ে ফেলে,” ফেইসবুক পোস্টে লিখেন আদীব শাহরিয়ার।
Published : 28 Feb 2025, 10:26 PM
রাস্তায় লম্বা সময় বাস থামিয়ে যাত্রী তুলতে নিষেধ করায় বিতণ্ডার একপর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে।
রাজধানীর মিরপুরে শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকের এ ঘটনার পর ‘মিরপুর সুপার লিংক’ নামের পাঁচটি বাস ক্যাম্পাসে এনে আটকে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা; এরপর রাতে সেই চালক ও হেল্পারকে আটক করে পুলিশ।
পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বাসের ড্রাইভার আর হেলপারকে আটক করে নিয়ে আসছি। স্যারদের সঙ্গে কথা বলছি।”
মারধরের অভিযোগকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রভাষক আদীব শাহরিয়ার জামান নিজের ফেইসবুক পেইজে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। বিকালে মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের উল্টো দিকে তাকে মারধর হয় বলে দীর্ঘ পোস্টে লিখেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিরপুর সুপার লিংকের পাঁচটি বাস ক্যাম্পাসে নিয়ে এসে আটকে রাখেন।
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, “মিরপুর এলাকা থেকে বাসগুলো নিয়ে আসে ছাত্ররা। প্রক্টোরিয়াল টিম গেছে পল্লবী থানায়।”
ফেইসবুক পোস্টে মারধরের অভিযোগ
শিক্ষক আদীব শাহরিয়ার ঘটনার বর্ণনায় ফেইসবুক পোস্টে লিখেন, “আজকে (শুক্রবার) আমাকে মিরপুর সুপার লিংক (৩৬ নম্বর) বাসের ড্রাইভার ও হেল্পার মিলে শত মানুষের সামনে মেরেছে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের অ্যাডমিশন এক্সাম ডিউটি শেষ করে মেট্রো না থাকায় লোকাল বাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিই। ৩৬ নাম্বার বাসে উঠি নিউ মার্কেট থেকে।
“বাসটি মিরপুর ১০ নম্বরে এসে সিগন্যালে পরে। দীর্ঘ মিনিট বিশেক সিগন্যালে দাঁড়ানোর পর সিগন্যাল ছাড়লে বাসটি আরেকবার ইচ্ছাকৃতভাবে আটকাতে (থামতে) নেয়। বাসের অর্ধেকের মত যাত্রীই ছিল ভর্তি পরীক্ষার্থী। তারা অনুনয় করতে থাকে সিগন্যাল পার হবার জন্য। কিন্তু এরপরেও বাসটি কেবল বাঁয়েই ঘেঁষতে থাকে। আমি তখন ধমক দেই।”
আদীব শাহরিয়ার লিখেন, “ধমকের উত্তরে ড্রাইভার আর হেল্পার তর্ক করতে শুরু করে এবং বাঁয়ে একদম দাঁড়িয়ে যায়। আমি তখন হুঁশ হারিয়ে গালি দেই। এটা আমার ভুল ছিল। কিন্তু সঙ্গে এও যোগ করতে চাই যে, আমার কোনো তাড়া ছিল না, আমি কেবলই পরীক্ষার্থীদের স্বার্থ চিন্তা করে কাজটা করি।
“এরপর ড্রাইভার আমাকে হুমকি দেয় স্টপেজে (মিরপুর ১১ নম্বর) আমাকে নামতে দেবে না। একবারে লাস্ট স্টপেজে নিয়ে তারা আমাকে পিটাবে। এর জন্য এমনকি তারা অন্য যাত্রীকেও জায়গা মত নামতে দিচ্ছিল না। এতে আমি আবারও রাগারাগি করি এবং ১১ নম্বরের কাছে বাস থামাতে বাধ্য করি।”
চালক ও হেল্পারও তার সঙ্গে নেমে মারধর করেন বলে অভিযোগ করেন আদীব শাহরিয়ার।
তিনি বলেন, “ড্রাইভার আমার পেটে লাথি দেয়, গেঞ্জি ধরে টেনে ছিঁড়ে ফেলে। ওই সময়ে রাস্তা ভর্তি লোক আমাদের ঘিরে থাকে এবং দেখতে থাকে। যেই পরীক্ষার্থীদের জন্য স্ট্যান্ড করেছিলাম, তারাও বাসে বসে জানালা দিয়ে পুরো ঘটনা দেখে। এরপর তাড়াতাড়ি করে বাসে উঠে ড্রাইভার আর হেল্পার বাস টান দেয়।”
শুক্রবার সন্ধ্যায় ফেইসবুকে আরেক পোস্টে শিক্ষার্থীদের মারমুখী না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেন, “স্টুডেন্টরা কল দিয়ে জানাচ্ছে যে তারা কয়েকটা বাসকে ক্যাম্পাসে আটকেছে৷ এতটা এস্কেলেশন হবে ভাবি নাই। আমি ছাত্রদের অনুরোধ করব, কোনো ভাঙচুর-মারধর বা কোনোরকম অ্যাগ্রেসিভ অ্যাকশন যেন না নেওয়া হয়। যা হয়েছে, তার কোনো শান্তিপূর্ণ সলিউশন হোক।”