জামায়াতের ৪ জনের বিষয়ে হয়ত পুলিশের কাছে ভুল তথ্য ছিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কেরানীগঞ্জে যে সংঘাতে নিপুণ রায় আহত হয়েছেন, তার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন আসাদুজ্জামান কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2023, 12:17 PM
Updated : 30 May 2023, 12:17 PM

সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন জমা দিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে যাওয়া জামায়াতে ইসলামীর চার আইজনীবীকে আটকে রাখার কথা দৃশ্যত স্বীকার করে নিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

তিনি মঙ্গলবার ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, পুলিশের কাছে হয়ত জামায়াতের ওই চার আইনজীবী সম্পর্কে ভুল তথ্য ছিল।

আগামী ৫ জুন ঢাকায় বায়তুল মোকারমের উত্তর ফটকে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন দিতে সোমবার বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন জামায়াতের চারজন আইনজীবী। সেখানে তাদের অন্তত দুই ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছিল।

ওই চারজনকে পুলিশ আটক করে রেখেছিল অভিযোগ করে তার নিন্দা জানিয়ে জামায়াতের কাছ থেকে বিবৃতি এসেছিল। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, জামায়াতের আইনজীবীদের আটক করা হয়নি। যেহেতু জামায়াতের অনেক নেতার নামে মামলা রয়েছে, তাই ওই চারজনের পরিচয় যাচাই করতে সময় লেগেছিল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর চার নেতা কমিশনার সাহেবের কাছে আসছিলেন, এরকম তথ্য আমরা পেয়েছি। আসার আগে তারা এক জায়গায় বসে মিটিং করেছিলেন এটা যেমন সত্য …. তারা আবার কমিশনারের কাছে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

“আমাদের পুলিশ অফিসাররা হয়ত ভুল ইনফরমেশনের কারণে তাদের ‘ই’ করেছিলেন। পরে যখন কনফার্ম হয়েছেন যে তারা মিটিং করার জন্য কমিশনারের কাছে এসেছেন, তখন তাদের ছেড়ে দিয়েছেন।”

Also Read: কর্মসূচি পালনে পুলিশের অনুমতি চাইতে গিয়ে ২ ঘণ্টা আটকে জামায়াতের চারজন

কী রকম ‘ইনফরমেশন’ ছিল- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “পুরোটা আমি ঠিক জানি না। তবে তারা একসঙ্গে মিটিং করছিলেন এরকম ইনফরমেশন ছিল।”

তারা কি রাষ্ট্রবিরোধী কিছু করছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সেটা তো আমি জানি না।”

রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না বলেও দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “সভা-সমাবেশ করতে কোনো রাজনৈতিক দলকেই বাধা দেওয়া হচ্ছে না। আপনারা সবই দেখছেন, তারা বড় বড় সভা করছেন। সবখানেই তারা অবস্থান নিচ্ছেন, তারা পদযাত্রা করছেন, তারা মানববন্ধন করছেন, তারা সভা করছেন, কোনোটাতেই সরকার বাধা দিচ্ছে না।”

জামায়াতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী এখন কিন্তু ইলেকশন কমিশনের দ্বারা স্বীকৃত নয়। সুতরাং তাদের কোনো কিছু করতে হলে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের পারমিশন লাগবে। সেই পারমিশন নিয়ে যদি তারা কোনো কিছু করে, তাহলে সেটা সিদ্ধ হবে। না হলে তো সেটা সঠিক হবে না।”

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হয়।

নিবন্ধন ছাড়া কোনো দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানো কিংবা সভা-সমাবেশ করার বিষয়ে আইনি কোনো বাধা নেই।

Also Read: কেরাণীগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ, নিপুণ রায় আহত

কেরানীগঞ্জে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে দলটির ঢাকা জেলার কমিটির সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া নিয়েও সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে।

তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, যেদিন ঢাকা জেলায় (২৬ মে) তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করছিল সেদিন কেরানীগঞ্জের আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তারা উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এসব শুনলে তো বিক্ষুব্ধ হবেই। তখন হয়ত তারা এর প্রতিবাদ করেছিল। তারপর সভা যখন চলছিল যার নেতৃত্বে, সেই মহিলা নেত্রীর কাছে যখন সংবাদ গেল, তখন আপনারা দেখেছেন তিনি রণাঙ্গনের মূর্তির মতো আবির্ভাব হলেন। নিপুণ রায়ের নেতৃত্বে দেখলাম বেশকিছু লোক লাঠিসোঁটা ও ঢিল-পাটকেল মারতে মারতে আসলেন। তারা আওয়ামী লীগ অফিসের ভেতরে ঢুকে তছনছ করেছেন, ভাঙচুর করেছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মারধর করেছেন।

“এসবই আপনারা দেখেছেন। কাজেই কোনখানেই কোনো জায়গাতেই আমরা তাদের নিবৃত্ত করি নাই। পুলিশ কোনো জায়গায় তাদের উপরে কোনো অ্যাকশন নেয়নি।”

গত শুক্রবার কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় সেই সহিংসতার পরদিন নিপুণ রায়সহ বিএনপির ১০৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন জিনজিরা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি এসএম সুমন। কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় দায়ের করা ওই মামলার আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুর, হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে গুরুতর জখম, চুরি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়।