জজ মিয়া কেন ক্ষতিপূরণ পাবেন না, প্রশ্ন হাই কোর্টের

চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের এই প্রশ্নের জবাব দিতে বলেছে আদালত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2022, 08:27 AM
Updated : 25 Oct 2022, 08:27 AM

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার দায় যার ওপর চাপিয়ে নাটক সাজানো হয়েছিল, সেই মো. জালাল ওরফে জজ মিয়াকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

জজ মিয়ার পক্ষে করা এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রুল দেয়।

পাশাপাশি ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ জজ মিয়কে যে চার বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই কারাভোগ, তাকে দেওয়া আটকাদেশ এবং আটক রাখার সময়টা কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক খোদাবক্স চৌধুরী, সাবেক এএসপি আব্দুর রশিদ ও মুন্সী আতিকুর রহমান এবং সাবেক পুলিশ সুপার রুহুল আমিনসহ ১১ জনকে এই রিটে বিবাদী করা হয়েছে। তাদের চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলেছে আদালত।

আদালতে রিটকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায়।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও কয়েকশ আহত হন।

Also Read: ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে জজ মিয়ার উকিল নোটিস

Also Read: তারা ফ্যানে ঝুলিয়ে পায়ে পেটাত: জজ মিয়া

আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সে সময় ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা। আর সে সময়ের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এখন দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নেতারা তখন হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করে বক্তব্য দেন। প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ওই হামলায় জড়িত বলেও সে সময় প্রচার চালানো হয়।

হামলার পরের বছর ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে জজ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় এনে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তারা দাবি করেন, তিনিই এই হামলার হোতা।

জজ মিয়া তখন ঢাকার গুলিস্তানে ফুটপাতে সিডি-পোস্টারের ব্যবসা করলেও ঘটনার দিন তিনি নোয়াখালীতে তার বাড়িতেই ছিলেন। গ্রেনেড হামলার খবর তিনি গ্রামের একটি চায়ের দোকানে বসে টিভিতে দেখেন।

ওই ঘটনার দিন দশেক পর জজ মিয়া ঢাকায় এলেও কয়েক দিন পরে মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে আবার গ্রামে ফিরে যান। পরের বছর পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। ঢাকায় এনে ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে একটি সাজানো জবানবন্দি আদায় করে সিআইডি।

‘পিটিয়ে মুখস্ত করানো’ সেই স্বীকারোক্তিতে জজ মিয়া বলেছিলেন, “পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশে তিনি অন্যদের সঙ্গে গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন। ওই বড় ভাইয়েরা হচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মাসুদ ও মুকুল।”

পরে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে নতুন করে তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জঙ্গিদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিনাশের পরিকল্পনা থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ এই হামলা চালানো হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে আসে।

Also Read: রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ২১ অগাস্টের হামলা: বিচারক

Also Read: হাই কোর্টে শুনানির জন্য ‘প্রস্তুত’ ২১ অগাস্ট মামলা

তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন এ গ্রেনেড হামলার ও হত্যকাণ্ডের ঘটনার দুই মামলা অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। মামলা থেকে অব্যাহতি পান জজ মিয়া।

বিনা অপরাধে চার বছর কারাভোগের পর ২০০৯ সালের ২৭ জুলাইয়ে তিনি মুক্তি পান তিনি। পরে সেই জজ মিয়াই ২১ অগাস্ট মামলায় সাক্ষ্য দেন।

হামলার ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে এ মামলার রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুতফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ঢাকার দ্রুত বিচার টাইব্যুনাল।

আর খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

বিনা অপরাধে চার বছর কারাগারে আটকে রাখায় ‘মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে’ দাবি করে গত ১১ অগাস্ট তার পক্ষে ১১ বিবাদীকে উকিল নোটিস পাঠান সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির ও আইনজীবী মোহাম্মদ কাউসার।

জজ মিয়াকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সেখানে। সেই নোটিসের জবাব না পেয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর রিট আবেদনটি করেন জজ মিয়া।

ওই ঘটনার জন্য জড়িত ব্যক্তিদের দায় নির্ধারণে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের আর্জি জানানো হয় রিটে। যাদের দায় পাওয়া যাবে, তাদের কাছ থেকে ওই ক্ষতিপূরণ আদায় করে জজ মিয়াকে দিতে নির্দেশ চাওয়া হয় সেখানে।

পাশাপাশি লুৎফুজ্জামান বাবরসহ জড়িত ব্যক্তিদের স্থাবর সম্পত্তি জব্দের আইনগত পদক্ষেপ নিতে হাই কোর্টের আদেশ চাওয়া হয় রিট আবেদনে।