তিনি বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক এরকম একটা হাসপাতালে… আমরা এখনি কিছু বলতে চাচ্ছি না। তদন্ত হোক আগে। আমরা পাঁচ সদস্যের কমিটি করে দিয়েছি।”
Published : 19 Apr 2024, 06:25 PM
ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে আগুন লাগার পর রোগীদের নিরাপদে অন্য হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়ায় কারো কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা।
শুক্রবার বিকালে হাসপাতালের পরিস্থিতি ঘুরে দেখার পর বোর্ডরুমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমও এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, দুপুর ১ টা ৪৭ মিনিটের দিকে হাসপাতালের বি ব্লকের পঞ্চম তলায় কার্ডিয়াক বিভাগে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ছুটে যায় অগ্নি নির্বাপণ বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট। তাদের চেষ্টায় বেলা ২ টা ৩৯ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ ঘটনায় কারো হতাহতের খবর না মিললেও পুরো হাসপাতালজুড়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। ছুটোছুটি করে সবাই নেমে আসেন নিচে।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ওই কার্ডিয়াক আইসিইউতে সাতজন রোগী ছিল। সব রোগীকেই আমরা এনআইসিভিডিতে (জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট) ট্রান্সফার করেছি এবং সেখানে সব রোগীই ভালো আছে।”
তিনি বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক এরকম একটা হাসপাতালে… আবার নিজের বাসাতেও তো শর্ট সার্কিট থেকে অনেক কিছু হয়। কিন্তু আমরা এখনি কিছু বলতে চাচ্ছি না। তদন্ত হোক আগে। আমরা পাঁচ সদস্যের কমিটি করে দিয়েছি।”
কোনো রোগীর কোনো ক্ষতি হয়নি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এনআইসিভিডিতে আমি খবর নিয়েছি। যেখানে তাদের রাখা হয়েছে সেটা কার্ডিয়াক আইসিইউ। সব রোগীরা ভালো আছে।”
হাসপাতালের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি সব ইন্সট্রুমেন্টের দাম তো আর জানি না। তবে আমি ওখানে গিয়ে বাচ্চাদের আইসিইউ বেডগুলো দেখেছি, আপনারাও দেখেছেন, সেগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, পুড়ে গেছে। অক্সিজেনসহ অন্য লাইনগুলো পুড়ে গেছে। তবে সেখানে টাকার অংকে কত ক্ষতি, সেগুলো আমরা তদন্ত না করে বলতে পারব না।”
আগুন লাগার পর হাসপাতালের লিফট থেকে শুরু করে অক্সিজেনের লাইনও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সে কারণে কোনো রোগীর কোনো ক্ষতি হয়নি বলে প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য।
তিনি বলেন, “লাইনের তা কতোগুলো ভাগ থাকে, প্রত্যেক ওয়ার্ডের জন্য আলাদা সুইচ রয়েছে। সব এক লাইনে চলে না। আমরা চাইলে কোনো একটি নির্দিষ্ট ওয়ার্ডেও বন্ধ রাখতে পারি।”
হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমাদের মেজর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ফায়ার ব্রিগেড অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে রেসপন্স করেছে। আর আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের নিজস্ব ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম দ্রুত রোগীদের কার্ডিয়াক আইসিইউ থেকে অন্য আইসিইউতে শিফট করে। পরে রোগীগুলোকে অন্য হাসপাতাল ও আমাদের নিজস্ব অন্য আইসিইউগুলোতে নিয়ে যাই।”
তিনি জানান, বি ব্লকের ওই ভবনে ১৯৪টি বেডে ১৭৩ জন রোগী ছিল। তাদের বিভিন্নভাবে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
“এনআইসিভিডি থেকে ১০টি অক্সিজেনের সিলিন্ডার আনিয়েছি। আমাদের জরুরি বিভাগে অক্সিজেনের মাধ্যমে চিকিৎসা চলছে। আস্তে আস্তে সব রোগীকে আমরা সেটেল করে ফেলছি।”
অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারা তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে বলে জানান পরিচালক।
তিনি বলেন, “এখন আমাদের দরকার ইমিডিয়েটলি সার্ভিস চালু করা। এখন ডিপিডিসি, ফায়ার সার্ভিস ও হাসপাতালের ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করছে। তারা সবকিছু চেকআপ করার পর যখন বলবে তখন আমরা একটা একটা করে ওয়ার্ডে সার্ভিস চালু করব। তবে যে ওয়ার্ডটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে এই সার্ভিসগুলো চালু করা হবে না, বাকিগুলোতে করা হবে।”
সেজন্য কত সময় লাগবে জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, “কাজ আমাদের শুরু হয়েছে। প্রত্যেকটা তলা একটা একটা করে চেক করে দেখার পর সবকিছু তারা ওকে করলে আমরা একটা একটা করে চালু করব।”
তিন দিন আগে এ হাসপাতালে আরেকটি আগুনের কথা জানিয়েছেন রোগীরা। সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে পরিচালক বলেন, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে একজন রোগীর অ্যাটেনডেন্টের কাপড়ে চুলা থেকে আগুন ধরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের নার্সরা ফায়ার ক্যাপসুল দিয়ে সেই আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ফায়ার সার্ভিস এসেছিল, কিন্তু তাদের কিছু করতে হয়নি।
ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, শুক্রবারের আগুন লেগেছে আইসিইউর এসি থেকে। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, “এই হাসপাতালে দুইশর মত এসি আছে। প্রতি গরমের শুরুতেই আমরা এসিগুলো সার্ভিসিং করে ফেলি। আমাদের আগুন নেভানোর সরঞ্জামগুলোও আমরা চেক করে রাখি।
“এখানে আগুন লাগার পর ব্যাপকভাবে ধোঁয়া হওয়ার কারণে কেউ কিন্তু সেখানে যেতে পারেনি। সেজন্য আমাদের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রগুলো আমরা এখানে ব্যবহার করতে পারিনি।”