পুলিশ বলছে, ৩৫টি মাদক মামলায় নাম আসা ‘গড ফাদারদের’ পুরো সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৭৮ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা।
Published : 17 Apr 2024, 04:03 PM
কক্সবাজারে মাদক কারবারের দুই ‘গড ফাদারের’ খোঁজ পাওয়ার কথা বলেছে সিআইডি, যারা আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির আপন ভাই।
মাদকের ব্যবসা করে তাদের জমিজমা, বাড়ি-গাড়িসহ বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার তথ্যও এসেছে সিআইডির অনুসন্ধানে।
বদির দুই ভাই হলেন- আব্দুস শুকুর এবং আমিনুর রহমান। সব মিলিয়ে সিআইডি মোট দশজনকে শনাক্ত করেছে, যারা মাদকের কারবারে হয়ে উঠেছেন ‘গড ফাদার’।
বুধবার ঢাকায় সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংস্থার প্রধান, পুলিশের অতিরিক্ত মহা পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া।
বদির দুই ভাইয়ের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলী বলেন, “তাদের বিষয়ে এখনো অনুসন্ধান চলছে। তাদের নামে আরও সম্পত্তি পাওয়া যাচ্ছে।”
২০০২ সাল থেকে টেকনাফ পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসার পর ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি ছিলেন আব্দুর রহমান বদি।
২০১৪ সালে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা এক তালিকায় বদি এবং তার ভাই-বেয়াই, মামা-ভাগ্নে মিলিয়ে ১০ জনের নাম আসে।
২০১৮ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন বদির বেয়াই আক্তার কামাল, যিনি টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। তার বিরুদ্ধে মানব পাচারের দুটি এবং মাদক পাচারের তিনটি মামলা ছিল।
মাদকের কারবারে বার বার নাম আসায় সমালোচনার মধ্যে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বদির বদলে তার স্ত্রী শাহীন আক্তারকে মনোনয়ন দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি ওই আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকের মামলায় সাজা হলে জেলেও যেতে হয়েছিল টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুর রহমান বদিকে। পরে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করে জামিন পান।
বুধবার সিআইডির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২০ সালের পর থেকে ৩৫টি মাদক মামলার তদন্তে নামে সিআইডি। এসব মামলায় নাম আসা ‘গড ফাদারদের’ সম্পদের যে হিসাব পাওয়া গেছে, তার মোট পরিমাণ প্রায় ১৭৮ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ৩৫টির মধ্যে তিনটি মামলার ‘গডফাদারদের’ ৯.১৪ একর জমি এবং ৮ কোটি টাকা দামের দুটি বাড়ি আদালতের নির্দেশে ক্রোক করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং মামলায় ব্যাংকে তাদের গচ্ছিত প্রায় এক কোটি টাকাও ‘ফ্রিজ’ করা হয়েছে।
এছাড়া প্রায় ৩৭ কোটি টাকা মূল্যের আরও ৩৫ একর জমি, ১২টি বাড়ি, একটি গাড়ি ক্রোকের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান সিআইডি প্রধান।
তিনি বলেন, “সিআইডি প্রথমে মাদক সম্পৃক্ত মানিলন্ডারিং মামলার তদন্তে গভীরে প্রবেশ করে। পরে মাদক ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংকে থাকা অর্থ ফ্রিজ করতে সক্ষম হয়।”
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য উদ্ধৃত করে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৮০ হাজার মাদক মামলা হয়। ২০২১ সালে সারা দেশে ৭৯,৬৭৫টি, ২০২২ সালে ৮২,৬৭২টি এবং ২০২৩ সালে ৭৬,৪০০৩টি মাদক মামলা হয়েছে।
মোহাম্মদ আলী বলেন, "দেশের ৬৪ জেলায় যেসব মাদক মামলা হয়, তাতে শুধু মাদক বহনকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়, কিন্তু গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে। যেহেতু আমরা গডফাদারদের নিয়ে কাজ করছি দেখি কতগুলো ধরতে পারি।"
এখন পর্যন্ত দশটি মামলায় ১২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে সিআইডি কর্মকর্তা আলী বলেন, “তাদের মধ্যে ১০ জন গডফাদার আছেন।”
পুরনো খবর:
বদির ভাইদের কথাও ‘বলে গেছেন বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত সাইফুল
নিহত ‘ইয়াবা কারবারিদের’ মধ্যে এমপি বদির বেয়াই