শেরপুরে কয়েক জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে সেতুর মাটি সরে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
Published : 06 Oct 2024, 09:02 PM
কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদীর পানি বেড়ে এবং বাঁধ ভেঙে ময়মনসিংহ, নেত্রকোণ ও শেরপুরে চলমান বন্যায় অন্তত সোয়া লাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এর মধ্যে দুই জেলাতেই অন্তত দুই লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
রোববার মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের (এনডিআরসিসি) দুর্যোগ সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেরপুর জেলায় নদীর পানি বাড়ার কারণে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর চারটি পয়েন্টে (খৈলকুড়া, পূর্বদীঘির পাড়, পশ্চিমদীঘির পাড় এবং দীঘির পাড় সংলগ্ন) বাঁধ ভেঙে গেছে।
সেই সঙ্গে নালিতাবাড়ী উপজেলায় চিল্লাখালী নদীর বাঁধও দুটি জায়গায় (সন্নাসীভিটা ও পোড়াগাঁও) ভেঙে গেছে।
এর মধ্যে কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধের মেরামত কাজ চলছিল জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঁধ ভাঙার ফলে শেরপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার (শেরপুর সদর, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী, শ্রীবর্দি ও নকলা) ৩০টি ইউনিয়নের মোট ১৫ হাজার ৪০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৬৩ হাজার ৭০০ মানুষ।
নালিতাবাড়ী উপজেলায় বন্যার মধ্যে মোট পাঁচ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে তিন জন পুরুষ ও দুই জন নারী। নিহতরা হলেন– ইদ্রিস আলী (৬৫), জহরা (৭০), আমিজা খাতুন (৪৫), মো. হাতেম আলী (৩০) ও আলমগীর হোসেন (১৬)।
এই পাঁচ উপজেলায় মোট ১৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার তথ্য দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ১৯ হাজার ১৮০ জন মানুষ এবং ১৬৮টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে।
জেলার ঝিনাইগাতী ও শ্রীবর্দি উপজেলায় কাউকে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়নি। তবে দুই উপজেলাতেই ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ময়মনসিংহ জেলায় গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বেড়ে হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের ৬১ হাজার ৬৪০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত এক লাখ ৫০ হাজার ২০০ জন।
হালুয়াঘাট ও ফুলপুর উপজেলায় মোট ২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে এক হাজার ৩৩৬ জন এবং ৩১০টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে।
জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
পানির চাপে হালুয়াঘাট সদর ইউনিয়নে পূর্ব গোবড়াকুড়া গ্রামে কুসুন্দরা নদীর উপরের সেতু ধসে গেছে। বৈচাপুর ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামে এবং ধুবাইল ইউনিয়নের ঘঙিয়াজুড়ি ব্রিজের মাটি সরে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
নেত্রকোণা জেলার চারটি উপজেলায় ২০টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ৪৮ হাজার ২০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যার্তদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য এই এলাকায় আটটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে এখনও কেউ আশ্রয় নেননি।
দুই নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে
গেল কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পানি বেড়ে ময়মনসিংহ বিভাগের ভুগাই ও জিঞ্জিরাম নদী দুটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, শেরপুর জেলার ভুগাই নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে রোববার সকাল ৯টায় নাকুয়াগাঁও পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
আর জামালপুর জেলার জিঞ্জিরাম নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ সেন্টিমিটার বেড়ে গোয়ালকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এর মধ্যে ভুগাই নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও ময়মনসিংহ বিভাগের কংস, জিঞ্জিরাম, সোমেশ্বরী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি বাড়ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে কেন্দ্র বলছে, আগামী তিন দিন ময়মনসিংহ বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম।
সেক্ষেত্রে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভুগাই নদীর পানি সমতল ধীর গতিতে কমতে পারে। শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলার ভুগাই নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
তবে জামালপুর জেলার জিঞ্জিরাম নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।
অপরদিকে নেত্রকোণা জেলার কংস নদ ও সোমেশ্বরী নদীর পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
পরবর্তী দুই দিনে কংস, জিঞ্জিরাম, সোমেশ্বরী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। সেই সঙ্গে নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
অন্যদিকে সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে কেন্দ্র বলছে, আগামী তিন দিন সিলেট বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতিভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। সেক্ষেত্রে আগামী দুই দিন সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ধীর গতিতে বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
পরবর্তী এক দিন সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
এছাড়া সিলেট বিভাগের অন্যান্য প্রধান নদী- সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, ধলাই ও খোয়াই নদীর পানি বাড়ছে। অন্যদিকে মনু নদীর পানি সমতল কমছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী তিন দিন পর্যন্ত সিলেট বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতিভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কম। এর প্রেক্ষিতে, আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সারিগোয়াইন, ধলাই ও মনু-খোয়াই নদীসমূহের পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুই দিন কমতে পারে।
তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় যাদুকাটা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং সুনামগঞ্জ জেলার কিছু এলাকা প্লাবিত হতে পরে।
পরবর্তী দুই দিনে যাদুকাটা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার ভাটিতে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত ওই এলাকার নদ-নদীর পানি সমতল বাড়তে পারে; তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী নদীর পানি সমতল বাড়ছে। অপরদিকে, মুহরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীসমূহের পানি সমতল কমছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে কেন্দ্র বলছে, আগামী তিন দিন চট্টগ্রাম বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। সে কারণে আগামী তিন দিন চট্টগ্রাম বিভাগের এই সকল নদীর পানি কমতে পারে।
অন্যদিকে উত্তরের রংপুর বিভাগের তিস্তা নদীর পানি কমছে। আর, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুই দিন কমতে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।