Published : 26 Jan 2025, 12:32 AM
রাজধানীজুড়ে যানজট কমাতে সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর গেট থেকে বিজয় সরণি হয়ে ডান দিকে মোড় নেওয়া বন্ধ করায় এ সড়কের পরের গুরুত্বপূর্ণ দুই মোড়ে চাপ পড়েছে; যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
শনিবার ছুটির দিনে এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের পরও ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজারের হোটেল সোনারগাঁও মোড়ে যানবাহনের লম্বা সারি দেখা যায়।
বেলা ৩টায় দেখা যায়, কারওয়ান বাজার থেকে জাহাঙ্গীর গেটমুখী সড়কের ডেইলি স্টার ভবনের সামনে থেকে খামারবাড়ী পুলিশ বক্স পর্যন্ত যানবাহনের সারি।
খামারবাড়ী হয়ে বিজয় সরণি যেতে ইউটার্নের কারণে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে কারওয়ানবাজার থেকে জাহাঙ্গীর গেটমুখী যানবাহনকে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ নতুন এ নির্দেশনা জারি করেছিল, যা শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
জাহাঙ্গীর গেটের দিক থেকে বিজয় সরণি সিগনালের সামনে এসে দাঁড়ানো সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মোজাম্মেল তখনও বুঝতে পারেননি ডানে মোড় নেওয়া বন্ধ। সিগনাল ছাড়তেই দড়ি টানিয়ে দেওয়া হলে বুঝতে পারেন তাকে ডানের রাস্তায় যেতে হলে ফার্মগেট হয়ে ঘুরে আসতে হবে।
তাকে কেন যেতে দেওয়া হবে না এ নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটির মধ্যেই তিনি বললেন, বনানী থেকে যাত্রী নিয়ে এসেছেন, যাবেন ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে।
মোজাম্মেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর বলেন, “বিজয় সরণি সিগনালের মাথা পর্যন্ত আসতেই কত সময় লাগে বলেন। এখন যখন যাওয়ার সময় হইছে, তখন বলতেছে যাওয়া যাবে না। আমার ধানমন্ডি ২৭ যাইতে হইলে এই রাস্তা ছাড়া উপায়ও নাই। আমি ফার্মগেটে ইউটার্ন নিয়া আবার এই সিগনালেরই আরেক দিকে কতক্ষণ দাঁড়ায়া থাকা লাগবো আবার। আমার এই বাড়তি সময় লাগবে, বাড়তি গ্যাস পুড়ব, সেইটার হিসেব করবে কে?”
যানজট নিরসনে নতুন এ পদক্ষেপ ‘ট্রায়াল’ পর্যায়ে আছে বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। বিষয়টি ‘ট্রায়ালে’ আছে। উপকারে না আসলে রিভিউ করা হবে।”
মূলত উত্তর-দক্ষিণ সড়কটি ‘স্পিডআপ’ করার জন্য এ সিদ্ধান্ত হয়েছে, বলেন তিনি।
ডিএমপির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাহাঙ্গীর গেট হয়ে যারা বিজয় সরণি দিয়ে ডান দিকে যেতে চান তাদের সে পথ ব্যবহার করার আর সুযোগ থাকছে না।
এখন তাদের জাহাঙ্গীর গেট পার হয়েই প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে ডানে মোড় নিয়ে পুরাতন বিমানবন্দর ঘেঁষে করা নতুন সড়ক ব্যবহার করতে হবে।
নতুন এই সড়কটির একটি অংশ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে সংযুক্ত হয়েছে এবং অন্যটি আগারগাঁও লিংক রোডে গিয়ে যুক্ত হয়েছে।
ডিএমপির ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-শেরেবাংলানগর জোন) উদয় কুমার সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যারা ধানমন্ডি, নিউমার্কেট বা সে দিকে যাবেন তারা আগে বিজয় সরণি দিয়ে উড়োজাহাজ ক্রসিং হয়ে খেজুরবাগান মোড় হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ দিয়ে মিরপুর রোডে উঠে গন্তব্যে পৌঁছতেন।
“নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তারা এখন বিজয় সরণি মোড় দিয়ে যেতে পারবেন না। তারা হয় সরাসরি ফার্মগেটের দিকে চলে যাবেন অথবা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে ডানে মোড় নিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের মোড়ে গিয়ে বাম দিক দিয়ে উড়োজাহাজ ক্রসিং হয়ে খেজুরবাগান দিয়ে মানিকমিয়া হয়ে গন্তব্যে যাবেন।”
তারা সংসদ ভবনের পেছনের রাস্তাও ব্যবহার করতে পারেন, বলেন তিনি।
সহকারী কমিশনার উদয় কুমার সাহার কাছে জানতে চাওয়া হয় এই নতুন সিদ্ধান্তের কারণে কি ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে পুলিশকে।
জবাবে তিনি বলেন, “যারা ধানমন্ডিমুখী তারা এখন জাহাঙ্গীর গেট হয়ে সরাসরি ফার্মগেট পার হয়ে সোনারগাঁও দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে সোনারগাঁও মোড়ে চাপ বেড়েছে।
“একইভাবে কেউ বিজয় সরণি পার হয়ে ফার্মগেট থেকে ইউটার্ন নিচ্ছেন। এখানেও বেশ চাপ পড়েছে।”
বিজয় সরণিতে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুজ্জামান বিডিনিউজ বলেন, “জাহাঙ্গীর গেটের দিক থেকে বিজয় সরণির দিকে আসা গাড়ির প্রায় ৭৫ ভাগই ডানে মোড় নেয়। আর বাকিগুলো বাম দিকে তেজগাঁও ফ্লাইওভার হয়ে আর সোজা ফার্মগেট কারওয়ান বাজারের দিকে যায়।”
ফার্মগেট ইউটার্নে এবং ফার্মগেটের দিক থেকে বিজয় সরণির দিকের সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রোববার এ চাপ আরও বাড়বে স্বাভাবিক।"
এই সার্জেন্ট বলেন, “এক পাশের গাড়ি যদি তিন মিনিট করেও ছাড়া হয়, তাহলে প্রতি পাশের সুযোগ আসবে নয় মিনিট পর। নয় মিনিটে ফার্মগেটের দিক থেকে আসা গাড়ির চাপ কোথায় যাবে?
“এর মধ্যে এখানে অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি সেবার গাড়ি থাকে। ভিআইপি মুভমেন্ট থাকে। দেখা যাক কী হয়।”
সিগনালটির জাহাঙ্গীর গেট থেকে বিজয় সরণির দিকে আসা যানবাহনের ডানে মোড় নেওয়া বন্ধ করতে সিগনাল ছাড়ার মূহূর্তে দড়ি টানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক হ্যান্ডমাইকে সামনে থেকে ইউটার্ন নিয়ে আসতে বলছেন। এরপরেও অনেক চালক কেন যেতে দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে বাগবিতন্ডায় জড়াচ্ছিলেন।
উত্তরা থেকে ধানমন্ডিগামী মোটরসাইকেল আরোহী সিয়াম ফার্মগেটে ইউটার্ন নিয়ে বিজয় সরণি সিগনালের কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বলেন, “আমি এসেছি উত্তরা থেকে, জানতাম না এখানে ডানে মোড় নেওয়া নিষেধ। এখন আমি ইউটার্ন নিয়ে এসে আবার এ পাশে আটকে আছি। ফার্মগেটের দিক থেকে গাড়িগুলো যেহেতু ডানে তেজগাঁওয়ের দিকে যেতে পারছে, সেগুলো দাঁড়িয়ে থাকায় জটলা বড় হয়ে যাচ্ছে।”
“জাহাঙ্গীর গেট থেকে আসার সময় ডানে মোড় নেওয়া বন্ধের সঙ্গে যদি ফার্মগেটের দিক থেকে আসা গাড়িরও ডানে মোড় নেওয়া বন্ধ থাকত, তাহলে না হয় এই সিগনালটা ফ্রি থাকতো। হুট করে কয়দিন পর পর এমন নতুন নতুন নির্দেশনার কারণে কখনও কখনও রাস্তায় দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।”
পরীক্ষামূলক এ কার্যক্রমের প্রথম দিন কার্যদিবস না হলও পরিস্থিতি সামলাতে অন্তত ১০-১২ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
এই পরিস্থিতির কিছুটা ব্যাখ্যা দেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার সরওয়ার।
তিনি বলেন, “আজকে থেকে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। অনেকেই জানেন না, বিজয় সরণীর দিকে টার্ন নেওয়া নিষেধ। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে টার্ন নিতে হবে।
এ কারণে যখন সরাসরি বিজয় সরণির দিকে গিয়ে বাধা পায় তখন সোজা চলে যান। ফলে ফার্মগেট ও সোনারগাঁও মোড়ে একটু চাপ বাড়ে।”
এটা দু্ই-একদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা অতিরিক্ত কমিশনারের।
তিনি ধারণা দিয়ে বলেন, “ফার্মগেট দিয়ে ইউটার্ন নিতে যদি সমস্যা হয় তা হলে সেখানে আইল্যান্ডের অংশ কিছুটা কেটে বড় করা যেতে পারে যেন সহজে ইউটার্ন নেওয়া যায়।”
সাধারণ জনগণের সুবিধার জন্যই পুলিশের এই উদ্যোগ, বলেন তিনি।
তবে এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, এর আগে এই পদ্ধতি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং লাভরোডে প্রয়োগ করা হয়েছে। সেখানে রাস্তা একেবারে বন্ধ করে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখানে একেবারে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এভাবে এখানে এই পদ্ধতি কার্যকর হওয়া প্রায় অসম্ভব বলে তিনি মনে করছেন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে ডানে মোড় নেওয়ায় গাড়ির চাপ ওই রাস্তাতে কিছুটা বেড়েছে।
তবে সেখানে যেন বড় ধরনের ট্রাফিক জ্যাম না হয় সে জন্য বিজয় সরণীর পশ্চিমে মেট্রোরেল স্টেশনের মোড়ে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের মোড়ে এবং আগারগাঁও মোড়ে বাড়তি পুলিশ দেখা গেছে।
মেট্রোরেল স্টেশনে মোড়ে এক পুলিশ কনস্টেবল বলেন, তারা অযথা কোন গাড়ি থামতে দিচ্ছেন না। রাস্তা চালু রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।