সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে সকাল সাড়ে ৮টায় হবে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত।
Published : 09 Apr 2024, 03:03 PM
একসঙ্গে ৩৫ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতের জন্য প্রস্তুত রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে সকাল সাড়ে ৮টায় হবে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ জামাতে নামাজ পড়বেন ঈদের সকালে। সেজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে।
পুরো ঈদগাহকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ছাড়াও স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স- এসএসএফ এবং ভিভিআইপির নিরাপত্তার বাহিনীর সদস্যরা সেখানে দায়িত্ব পালন করবেন।
ঈদুল ফিতর কবে হবে তা নির্ধারণের জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররমে বসছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বুধবার ঈদ হচ্ছে এবার। সাধারণত আরবের পরদিন বাংলাদেশে রোজা শুরু ও ঈদ হয়।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় ঈদগাহের প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মেয়র তাপস। তিনি বলেন, “ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতের জন্য এখন জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুত। আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সকল প্রস্তুতি কার্য্ক্রম প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছি। আর যে একদিন রয়েছে, তার মধ্যে বাকি কাজগুলো আমরা সম্পন্ন করব।
“চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার ইনশাল্লাহ আমাদের ঈদের জামাত হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে সাড়ে ৮টায় আমাদের প্রধান জামাতের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। গত দুই বছরের ন্যায় ঢাকাবাসী সকলকে আমন্ত্রণ জানাতে চাই, আপনাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে জাতীয় ঈদগাহে এসে এই জামাতে অংশগ্রহণ করুন, ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিন।”
ঈদগাহে ৩৫ হাজার মানুষের জামাতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সকল রকম ব্যবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে মেয়র বলেন, “আমরা আশা করছি, ঈদের দিন কোনো রকম বৃষ্টি হবে না। তবু যদি কালবৈশাখী ঝড় অথবা প্রবল বৃষ্টিপাত হয়, তখনও যাতে সুষ্ঠুভাবে এখানে জামাত আয়োজন করা যায়, নামাজ আদায় করা যায়, সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
“পুরোটাই আমরা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দিয়েছি, যেন পানি পড়তে না পারে এবং দুর্ভোগ যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে এবং সকল স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে, যাতে করে কোনোরকম সমস্যা না হয়।”
তারপরও যদি ঈদগাহে জামাতের আয়োজন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, তখবন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৯টায় ঈদের প্রধান জামাত হবে বলে জানান মেয়র।
তিনি বলেন, ঈদগাহে নারীদের জন্য আলাদা প্রবেশপথ করা হয়েছে। মূল প্রবেশ পথ থাকবে চারটি। জামাত শেষে বের হওয়ার জন্য উত্তরের দিকে আরও তিনটি গেইট খোলা থাকবে।
ঈদের সকালে যারা জামাতে অংশ নিতে আসবেন, তাদের জায়নামাজ বা ছাতা ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে না রাখতে অনুরোধ করেন মেয়র।
তিনি বলেন, “কোনো রকমের দিয়াশলাই বা কোনো ম্যাচ বা আগুন জ্বালানোর কোনো রকম জিনিস সাথে বহন না করতে আমরা মুসল্লিদের অনুরোধ করব। অগ্নিকাণ্ড হতে পারে বা আগুন জ্বলতে পারে সেরকম কোনো দাহ্য পদার্থ না নিয়ে আসার বিনীত অনুরোধ থাকবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে নির্দেশনা দেবে, সেগুলো প্রতিপালন করতে হবে।”
ঢাকাবাসীকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান দক্ষিণ সিটির মেয়র।
নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা
রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতে অংশ নেবেন। সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে আলাদাভাবে। বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান মঙ্গলবার সকালে এবং র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন দুপুরে আলাদাভাবে জাতীয় ঈদগাহর নিরাপত্তা প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন।
ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমরা নিশ্চিত করেছি। এখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধান বিচারপতি, মাননীয় বিচারপতিবৃন্দ, মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ, ঢাকাস্থ মুসলিম দেশসমূহের কুটনীতিকবৃন্দ, অন্যান্য গণমান্য ব্যক্তিরা ঈদের নামাজ আদায় করবেন।
“যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঈদ জামাতের লোকেশন আছে, সেটাকে কাভার করার জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রধান জামাতের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ স্তর বিশিষ্ট সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
ঈদের প্রধান জামাতের জন্য জাতীয় ঈদগাহ মাঠে প্যান্ডেল টাঙানো হয়েছে। প্যান্ডেলের নিচে ম্যাট বিছানো হয়েছে। রয়েছে সিলিং ফ্যান, লাইট ও মাইকের ব্যবস্থা।
জাতীয় ঈদগাহের প্রধান ফটকের সামনে নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে তোরণ। সেখানে লেখা রয়েছে ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ- ঈদ মোবারক’।
ঈদগাহ প্রাঙ্গণে রয়েছে অজুর ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, ডিএমপি কনট্রোল রুম এবং র্যাবের কন্টোল রুম। ফায়ার বিগ্রেডের একটি টিমও জাতীয় ঈদগাহের কাছে থাকবে।