“আমাদের বিশ্বাস, সবপক্ষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারলে, সংলাপ ও আলোচনায় যুক্ত হতে পারলে সুস্থ গণতন্ত্র লাভবান হয়।”
Published : 14 Dec 2023, 03:23 PM
বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ‘গণগ্রেপ্তার ও কারাগারের নির্যাতনের খবরে’ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
বুধবার পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, “বিরোধী দলের হাজার হাজার সদস্যকে গণগ্রেপ্তার এবং কারাগারে নির্যাতনের খবরে আমার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা সবপক্ষকে সংযমী হওয়ার এবং সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”
বাংলাদেশে নির্বাচন ঘিরে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়ে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ এবং ১৮ ডিসেম্বরের পর নির্বাচন ছাড়া অন্য সমাবেশ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য ধরে প্রশ্নকারী বলেন, “বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ও তার ডেপুটি দাবি করেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রকে পক্ষে আনতে পারবেন। তিনি (মন্ত্রী) বলেছেন, সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেবে। এক্ষেত্রে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?”
ওই প্রশ্নের উত্তরে ‘গণগ্রেপ্তার ও কারা নির্যাতনের’ খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে ম্যাথু মিলার বলেন, “আমরা বাংলাদেশ সরকারকে এমন পরিবেশ তৈরির জন্য সব অংশীজনের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই, যাতে মুক্তভাবে, সহিংসতা আর প্রতিশোধের ভীতি ছাড়াই সবাই নির্বাচনপূর্ব এবং নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে।
“আমাদের বিশ্বাস, সবপক্ষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারলে, সংলাপ ও আলোচনায় যুক্ত হতে পারলে সুস্থ গণতন্ত্র লাভবান হয়।”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘বাইরের থাবা এসেছে’ মন্তব্য করে ২৭ নভেম্বর সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ বাঁচাতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রপ্তানি বাজারের কথা উল্লেখ করে এক বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, “তারা থাবা বিস্তার করে রেখেছে। আমাদের অর্থনীতি, আমাদের ভবিষ্যৎ, পোশাক শিল্পসহ অনেক কিছুই রক্ষা করতে হলে এই নির্বাচনটাকে ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল করতে হবে।”
সিইসির ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বাস্তববাদী’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছিলেন, কোনো একটি বিষয়ে শুরুতে কোনো অবস্থান নিলেও পরে সত্যি সত্যি ঘটনা ঘটে গেলে যুক্তরাষ্ট্র আগের অবস্থান পাল্টায়।
“আমেরিকা সবসময় বাস্তববাদী। আমেরিকা বিলিভস ইন ডকট্রিন অব রিয়েলিটি… যখন সত্যি সত্যি ঘটনা হয়ে যায়, তাকে সাপোর্ট দেয়।”
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে ওয়াশিংটনের অবস্থানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “নিজেদের দেশের ও আন্তর্জাতিক আইনকানুন ভেঙে পাকিস্তানের জান্তা সরকারকে গণহত্যায় সহায়তা করেছিল তারা।”
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের খবর, নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ
নির্বাচন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের বিরোধীদলের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া খবর, ভিডিও ছড়িয়ে’ প্রচার চালাচ্ছে বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবস্থান জানতে চেয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, “বাংলাদেশে নির্বাচন বিষয়ক অপতথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে ডিপ ফেইক ব্যবহারের উদ্বেগজনক খবর আমরা দেখেছি। এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নিজের পক্ষে কাজে লাগাতে এবং প্রভাবিত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহারের বৈশ্বিক প্রবণতার অংশ।”
ব্রিফিংয়ে আরেক সাংবাদিক জানতে চান, “অনেক লোক বাংলাদেশের উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জানতে চাচ্ছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর কোনো নিষেধাজ্ঞার খবর আপনার কাছে আছে কি-না?”
উত্তরে মুখপাত্র মিলার বলেন, “কোনো নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার মত কিছু আজ আমার হাতে নেই। নিষেধাজ্ঞার পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা আমাদের দীর্ঘদিনের রীতিতে নাই।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে ‘বিষপ্রয়োগ ও অপ-চিকিৎসা’ দেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরে চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল ম্যাথু মিলারকে। এ বিষয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে পরের প্রশ্নে চলে যান মুখপাত্র।