প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ইউএসএআইডির ক্ষেত্রে যাই ঘটুক না কেন, পুনর্গঠন, সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের মার্কিন সহায়তা প্রয়োজন।”
Published : 11 Feb 2025, 09:44 PM
দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, ইউএসএআইডির ক্ষেত্রে যাই ঘটুক না কেন, পুনর্গঠন, সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের মার্কিন সহায়তা প্রয়োজন। এটা বন্ধ করার ‘সময় এখন নয়’।
যুক্তরাষ্ট্রের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা তাকে এ কথা বলেন।
বাসস জানিয়েছে, বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির কার্যক্রম স্থগিত করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা, রোহিঙ্গা সংকট, অভিবাসন এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও তারা আলোচনা করেন।
বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি’র জীবন রক্ষাকারী প্রচেষ্টাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সহায়তা স্থগিত করার মার্কিন সিদ্ধান্তের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইউনূস।
বাংলাদেশ এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের হাইতির মত দেশগুলোতে ডায়রিয়া ও কলেরাজনিত মৃত্যু প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে আইসিডিডিআর’বি-এর ভূমিকা তিনি মার্কিন কূটনীতিকের সামনে তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসেই বিদেশে প্রায় সব রকমের সহায়তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন। তাতে বিভিন্ন বৈশ্বিক কর্মসূচির কোটি কোটি ডলারের তহবিল পড়েছে হুমকির মুখে।
বিদেশে মার্কিন সহায়তা ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না’ তা পর্যালোচনার জন্য ফেব্রুয়ারিতে মানদণ্ড তৈরি করবে ট্রাম্প প্রশাসন। এই পর্যালোচনার পরে সহায়তা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া, সংশোধন করা বা সমাপ্ত করা হবে কি না- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ইউএসএআইডি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ত্রাণ সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, যার বাজেটের বেশিরভাগ অংশ ব্যয় হয় স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে।সংস্থাটির ১০ হাজার কর্মীর দুই-তৃতীয়াংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিভিন্ন দেশে কাজ করে। ট্রাম্প বলছেন, ইউএসএআইডি মার্কিন জনগণের অর্থ ‘যথাযথভাবে’ ব্যবহার করতে পারছে না।
সহায়তা স্থগিতের ওই সিদ্ধান্ত দেশগুলোর জন্য বড় ধাক্কা, যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন পরিচালিত প্রকল্পে কাজ করা সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ক্রমান্বয়ে ছাঁটাই করার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।
তবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখায় মার্কিন প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মার্কিন সহায়তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
অধ্যাপক ইউনূস একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং এর তত্ত্বাবধানে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করার জন্য তার সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “সংস্কারগুলোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর রাজনৈতিক দলগুলো সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করবে।”
জ্যাকবসন বলেন, নতুন সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। সম্প্রতি দেশে শুরু হওয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’বিষয়েও তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি বাংলাদেশি সমাজে ‘পুনর্মিলনের’ আহ্বান জানিয়েছেন। ‘প্রতিশোধের চক্র ভেঙে’ দেশে শান্তি ও সম্প্রীতির ভিত্তি তৈরি করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা সবাই এই দেশের সন্তান। তাই আমাদের মাঝে প্রতিশোধের কোনো স্থান থাকা উচিত নয়।”
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তাদের অভিযানের সময় ‘যে কোনো মূল্যে মানবাধিকার বজায় রাখার’ নির্দেশ দেওয়ার কথাও বলেন ইউনূস।