“দেখি কার সাথে নিয়ে বসায়, আমাদের দাবি পূরণ না হলে কোনো আশ্বাসে তো আমরা আন্দোলন ছাড়ব না। জাতীয়করণ করতে হবে।"
Published : 25 Aug 2024, 04:11 PM
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত কয়েক হাজার আনসার সদস্য সচিবালয় ঘেরাও করার পর তাদের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।
আনসার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর নতুন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদও উপস্থিত রয়েছেন এ বৈঠকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা ফয়সল হাসান বলেন, “আনসার সদস্যদের ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরে এসেছেন।”
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক ৫৪০ টাকা চুক্তিতে কাজ করা আনসার সদস্যরা চাইছেন, তাদের চাকরি স্থায়ী করা হোক। এই দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন তারা।
এর ধারাবাহিকতায় কয়েক হাজার আনসার সদস্য রোববার সকাল ৮টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করেন। তাদের সমাবেশের কারণে তোপখানা রোড থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
আন্দোলনরতরা জানান, এই সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এসেছেন তারা, আরও অনেকে আসছেন। এক পর্যায়ে তারা ছড়িয়ে পড়েন পুরো এলাকায়।
আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা কয়েকবার বিদ্যুৎ ভবনের পাশের গেইট দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যার্থ হন। তাদের ঘেরাওয়ের কারণে সচিবালয় থেকে কেউ বের হতে বা প্রবেশ করতে পারেননি।
পরে বিকাল ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের সাথে কথা বলে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরে যান।
এ সময় প্রতিনিধি দলের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদেরকে বলেছে আপনারা ভিতরে আসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আপনাদের সঙ্গে কথা বলবে। দেখি কার সাথে নিয়ে বসায়, আমাদের দাবি পূরণ না হলে কোনো আশ্বাসে তো আমরা আন্দোলন ছাড়ব না। জাতীয়করণ করতে হবে।"
যে কারণে আন্দোলন
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর এই সদস্যরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক ৫৪০ টাকা চুক্তিতে কাজ করেন। এছাড়া বাহিনীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের জন্য রেশন সুবিধা বরাদ্দ থাকে। তারা এখন স্থায়ী নিয়োগ চান।
কোনো প্রতিষ্ঠান যদি মনে করেন, তাদের নিরাপত্তায় তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার জন্য জনবল প্রয়োজন, তাহলে তারা নির্দিষ্ট সংখ্যক জনবল চেয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদসদপ্তরে আবেদন করেন।
পরে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সদস্যদের থাকা-খাওয়া ও অস্ত্র রাখার জায়গা থাকা এবং দুই মাসের অগ্রিম বেতন দেওয়া সাপেক্ষে নির্ধারিত সংখ্যক সদস্যকে তিন বছরের জন্য সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এমন আনসার সদস্যের সংখ্যা সারাদেশে প্রায় ৭০ হাজার। এরমধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার সদস্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন, যাদেরকে দৈনিক ৫৪০ টাকা হারে বেতন দেয় সংশ্লিষ্ট ওই প্রতিষ্ঠান।
বাকি ১৫ হাজার সদস্য ‘রেস্ট টাইমে’ থাকেন। কোনো প্রতিষ্ঠানের নতুন চাহিদা পেলে কিংবা আগের কোনো প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত সদস্যদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ‘রেস্টে’ থাকা সদস্যদের পাঠানো হয়। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বিভিন্ন দায়িত্বেও পাঠানো হয় ‘রেস্টে’ থাকা সদস্যদেরকে।
গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর পর পুলিশবিহীন সড়কে ট্রাফিক সামলানো এবং থানার নিরাপত্তার দায়িত্বে পাঠানো হয়েছিল আনসার সদস্যদের।
আনসারের এই সদস্যদের ‘স্বেচ্ছাসেবী’ হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে প্রশিক্ষণ দেওয়া মানেই চাকরি নয়। প্রশিক্ষণ শেষে বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি স্মার্টকার্ড দেওয়া হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের চাহিদার প্রেক্ষিতে তাদের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বে পাঠানো হয়।
চাকরি জাতীয়করণ চেয়ে আন্দোলনে নামা আনসারদের কিছু দাবি ‘যৌক্তিক’ মেনে নিয়ে শনিবার তাদের কর্মস্থলে ফিরে কাজে যোগদানের আহ্বান জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালকের নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে, সেই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ দাবির বিষয়ে একটি ‘যৌক্তিক সমাধান’ হবে।
এই কমিটি দাবি-দাওয়া পর্যালোচনা করে যৌক্তিক সুপারিশ করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। পরে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সেই সুপারিশ পরীক্ষা করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে।
আনসারদের দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অবহিত হয়েছেন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সাধারণ আনসারদের উত্থাপিত দাবি-দাওয়াসমূহ সরকার গভীর মনোযোগ ও সহানুভূতির সাথে পর্যালোচনা করেছে। প্রাথমিকভাবে কিছু দাবি যৌক্তিক প্রতীয়মান হয়েছে।”
সাধারণ আনসার হিসেবে নতুন কোনো নিয়োগ দেওয়া হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
তিন বছর চাকরির পর সাধারণ আনসারদের বিশ্রাম না দিয়ে চাকরি অব্যাহত রাখার বিষয়টি পরীক্ষা করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে ।
আশ্বাসের পাশাপাশি হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে। ‘মুষ্টিমেয় কয়েজন উসকানিদাতা’ এই সুশৃঙ্খল বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে মন্তব্য করে মন্ত্রণালয় বলেছে, “সরকার প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দ্বিধা করবে না।”
পুরনো খবর
জাতীয়করণ: আনসাররা রাস্তায়, প্রেস ক্লাব মোড়ে যান চলাচল বন্ধ
আনসারদের কিছু দাবি 'যৌক্তিক', সুপারিশ করতে কমিটি স্বরাষ্ট্রের
কাজ থাকলে দিনে ৫৪০ টাকা, না থাকলে 'রেস্ট': বৈষম্যের অবসান চান আনসাররা