প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলিতে নিহতদের মধ্যে ৬০ শতাংশের ক্ষেত্রে এমন অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে, যা যুদ্ধে ব্যবহার হওয়ার কথা।
Published : 13 Feb 2025, 12:18 AM
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে নির্বিচার হত্যার শিকারদের তিন-চতুর্থাংশ গুলিতে নিহত হয়েছে বলে উঠে এসেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের প্রতিবেদনে।
বিভিন্ন ‘নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া’ মৃত্যুর তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়েছে, দেড় মাসে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত প্রাণঘাতী অস্ত্র, সামরিক রাইফেল ও শটগানের গুলিতে নিহত হন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের তথ্য এবং অন্যান্য সূত্রের বরাতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশন বলছে, ৭৮ শতাংশ মানুষ নিহত হয়েছেন গুলিতে। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশের ক্ষেত্রে এমন অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে, যা যুদ্ধে ব্যবহার হওয়ার কথা।
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলির তথ্যানুসন্ধান করে তৈরি করা এই প্রতিবেদন বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে।
জেনিভায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের তদন্ত দল।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান ররি মুনগোভেনের নেতৃত্বে ওই তদন্ত দলে মানবাধিকার অনুসন্ধানকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক ও একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা বলেছে জাতিসংঘ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড করা ৮৪১ জনের অন্যান্য সূত্রে পাওয়া নাম মিলিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বিক্ষোভ চলাকালে অন্তত এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে। তবে এসব মৃত্যুর কারণ নির্ণয় না করার কথাও তুলে ধরা হয়েছে সংস্থার প্রতিবেদনে।
সেখানে বলা হয়, সব হত্যা রাষ্ট্রীয় বাহিনী ঘটিয়েছে বা বিচারবহির্ভূত হত্যা হিসেবে ধরে নেওয়া ঠিক হবে না।
“তবে, অধিকাংশ মৃত্যু ঘটেছে আগ্নেয়াস্ত্রে গুলিতে, যার মধ্যে সামরিক রাইফেল ও শটগানের প্রাণঘাতী মেটাল পেলেটবাহী গুলি রয়েছে। যা সাধারণ বাংলাদেশ পুলিশ, আধাসামরিক বা সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে থাকে।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩০টি মৃত্যুর ফরেনসিক প্রতিবেদন নির্দেশ করছে, মোট মৃত্যুর তিন-চতুর্থাংশ (৭৮ শতাংশ) ঘটেছে এমন আগ্নেয়াস্ত্রের আঘাতে, যা সাধারণত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে এবং এগুলো নাগরিকদের নাগালের বাইরে রয়েছে।
“এই তথ্য অনুযায়ী আরও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, দুই-তৃতীয়াংশ মৃত্যু ঘটেছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্বয়ংক্রিয় ও আধা-স্বয়ংক্রিয় সামরিক রাইফেলের গুলিতে। যেগুলো বিজিবি, র্যাব, সেনাবাহিনী, আনসার-ভিডিপি ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ব্যবহার করে থাকে। বিক্ষোভের সময় এগুলো ব্যবহার করে সাধারণ পুলিশও।”
১২ শতাংশ মৃত্যু শটগানের প্রাণঘাতী ছররা গুলিতে ঘটার কথা বলা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবদনে। ‘বিশ্বাসযোগ্য ও গোপনীয় সূত্রের’ সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলের মৃত্যুর এই পর্যালোচনার মিলে যাওয়ার কথা বলেছে জাতিসংঘ।
অন্যান্য তথ্যাদি এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের তদন্ত দলের ফরেনসিক চিকিৎসক ও অস্ত্র বিশেষজ্ঞের বর্ণনার কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, আহতরা যে ‘প্রজেক্টাইলে’ (গুলিতে) আঘাত পেয়েছেন, তার সঙ্গে বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে তৈরি ৭.৬২*৩৯এমএম রাইফেলের গুলির মিল আছে।
“কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্ম ভেদ করা ৭.৬২ ক্যালিবারের বিশেষ গুলিও নিরস্ত্র বেসামরিকদের উপর ব্যবহারের তথ্য মিলেছে। এ ধরনের গুলি যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যাতে শরীরে পরা বর্ম ভেদ করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজের জন্য এ গুলি নয়। এগুলো সাধারণত সেনাবাহিনী বাহিনী বা আধাসামরিক বাহিনী বিজিবি ও র্যাবের কাছে থাকার কথা। বাংলাদেশে বেসামরিক ব্যক্তিদের এগুলো কেনার সুযোগ নাই।”
বিক্ষোভ দমনের ভিডিওতে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সেনাবাহিনী ও আনসার-ভিডিপি সদস্যদেরকে এই ক্যালিবার গুলি ছোঁড়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এসকেএস, টাইপ ৫৭ ও বিডি-০৮ রাইফেল ব্যবহার করতে দেখা যাওয়ার কথা বলেছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতেও এগুলো তৈরি হয়ে থাকে।
বিক্ষোভের সময় বেসামরিক অপরাধীরা যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে, তাতে সাধারণত ‘পিস্তল, রিভলবার, সাবমেশিন গান এবং কমার্শিয়াল খেলনা শটগান’ থাকার কথা বলেছে জাতিসংঘ।
কিছুক্ষেত্রে, বিশেষ করে অগাস্টের শুরু থেকে এই বেসামরিক ব্যক্তিদের ট্যাকটিক্যাল শটগান ও আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ব্যবহার করতে দেখার বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসামরিক লোকদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের আঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা হবে খুবই কম।
সহিংসতার মাত্রা ‘গোপন করার চেষ্টা’ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাসপাতালে ভয়ভীতি দেখানোসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করেছে তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “নিরাপত্তা বাহিনী আহত বিক্ষোভকারীদের জরুরি চিকিৎসা সেবা বাধাগ্রস্ত করেছে, রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং হাসপাতালগুলো থেকে তাদের আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে।
“চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ভয় দেখিয়েছে এবং হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করেছে, যা পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করে যে, আইনানুগত প্রক্রিয়া ছাড়া বিক্ষোভকারীদের শনাক্ত করার এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহিংসতার মাত্রা কোন পর্যায়ে ছিল তা গোপন করার চেষ্টা করা হচ্ছিল।”
আবু সাঈদের মৃত্যু যেভাবে
জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখ হয়ে ওঠা রংপুরের বেগম রোয়েকয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা বিশদভাবে বিশ্লেষণ করার কথা প্রতিবেদনে বলেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “আবু সাঈদের বিশেষ ঘটনাটি বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যার রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের সময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে দু’বাহু ছড়িয়ে ‘আমাকে গুলি করুন’ বলে চিৎকার করার সময়ের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল।
“ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র ও ভূ-অবস্থান প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তদন্তকারীরা তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছিল, তা সাক্ষ্য প্রমাণের জন্য পুনঃনির্মাণ করেন।”
জাতিসংঘ বলছে, “একটি ফরেনসিক বিশ্লেষণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, তার আঘাতগুলো প্রায় ১৪ মিটার দূরত্ব থেকে ধাতব গুলিভর্তি শটগান দিয়ে কমপক্ষে দুবার গুলিবিদ্ধ হওয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবু সাঈদ পুলিশের ‘ইচ্ছাকৃত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে’।
প্রথম দিকের বিক্ষোভের সম্মুখসারিতে থাকার কারণে নারীরা ও সহ নেতৃত্ব প্রদানকারীরা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার এবং নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আক্রমণের শিকার হন। প্রতিবেদনে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার বিষয়টি নথিভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে শারীরিক আক্রমণ এবং ধর্ষণের হুমকি রয়েছে, এর লক্ষ্য ছিল নারীদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা।
অনুসন্ধানকারীরা এও খুঁজে পেয়েছেন যে পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের হত্যা ও পঙ্গু করেছে এবং তাদেরকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অমানবিক অবস্থায় আটক এবং অত্যাচারের শিকার করেছে। নথিভুক্ত মৃত্যুর ঘটনাগুলোর একটি এমন ছিল, যেখানে ধানমন্ডিতে একজন ১২ বছর বয়সী বিক্ষোভকারী প্রায় ২০০টি ধাতব গুলি ছোঁড়ার কারণে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণে মারা যায়। এছাড়াও, নিহতদের মধ্যে ছিল খুব ছোট শিশু যাদেরকে তাদের মা-বাবারা বিক্ষোভে নিয়ে গিয়েছিলেন অথবা যারা পথচারী হিসেবে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল।
নারায়ণগঞ্জে এমন একটি ঘটনা রয়েছে, যেখানে ছয় বছর বয়সী এক বালিকাকে তার বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে একটি বিক্ষোভের সহিংস সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করার সময় মাথায় গুলি করা হয়েছিল।
৫ আগস্ট– বিক্ষোভের শেষ এবং সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিনের একটিতে– আজমপুরে পুলিশের গুলিতে আহত ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে স্মরণ করে যে, পুলিশ ‘সব জায়গায় বৃষ্টির মতো গুলি করছিল’। সে অন্তত এক ডজন মৃতদেহ দেখতে পেয়েছিল বলে বর্ণনা করেছে।
হেলিকপ্টার ব্যবহার প্রসঙ্গে
আন্দোলন চলার মধ্যে হেলিকপ্টার থেকে টিয়ারশেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ার তথ্য দিলেও গুলি ছোঁড়ার বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ার কথা বলেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়। এক্ষেত্রে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতা নিয়ে তদন্তের কথা বলেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, র্যাব, পুলিশ এবং খবর অনুযায়ী আর্মি এভিয়েশন ইউনিট বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে।
“বিশেষ করে, বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখাতে এবং সৈন্য মোতায়েনের জন্য র্যাবের কালো হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছিল। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের তথ্য মতে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি জানিয়েছিলেন, র্যাব যেভাবে ভয় দেখানোর হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছে, সেটা যেন আরও বাড়ানো হয়। আর সেনা কর্মকর্তারা হেলিকপ্টার মোতায়েনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি জানাচ্ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, মিরপুর, মহাখালী, ধানমণ্ডি, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, শাহবাগ, বসুন্ধরা, গাজীপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় প্রায়ই টিয়ারশেল ছুড়েছে র্যাব বা পুলিশ। রামপুরায় ১৮ জুলাই সাউন্ড গ্রেনেডও ছোড়া হয়েছিল।
পুলিশ ও র্যাবের বরাতে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বলছে, তারা হেলিকপ্টার ব্যবহার করা বলেছে। তবে, সেখান থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোড়ার তথ্য দিয়েছে বাহিনী দুটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, তারা হেলিকপ্টার থেকে বাহিনী সদস্যদের রাইফেল ও শটগানের গুলি ছুড়তে দেখেছেন। ৫ অগাস্ট যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের বর্মভেদকারী গুলিতে আহত একজন বলেছেন, তিনি ‘জলপাই-সবুজ রঙের হেলিকপ্টার’ থেকে গুলি খেয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বলেছে, প্রাপ্ত তথ্য থেকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় আসলে নিশ্চিত নয়, হেলিকপ্টার থেকে রাইফেল বা শটগানের গুলি ছোঁড়া হয়েছে কি না। এটা হতে পারে, আক্রান্তদের মধ্যে যারা উপরের দিকে গুলি খেয়েছেন, হয়ত ওই গুলি ছোড়া হয়েছে কিছুটা উঁচু স্থান থেকে এবং উপর থেকে তাদের গায়ে এসে লেগেছে।
আরও পড়ুন-
আন্দোলন দমাতে অভিযান শেখ হাসিনার নির্দেশ ও তদারকিতে: জাতিসংঘ