মানুষের নদীকেন্দ্রিক জীবনযাপন, জীবিকা ও সংস্কৃতি এবং দেশের হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদ-নদীর অতীত ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ তুলে ধরা হয়েছে এ জাদুঘরে।
Published : 03 Feb 2025, 10:04 AM
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামে ব্যতিক্রমী এক সংগ্রহশালা, নাম তার ‘পানি জাদুঘর’। এটি বিশ্বের সপ্তম এবং এশিয়ার একমাত্র পানি জাদুঘর।
তবে প্রচারের আলোয় না থাকায় দেশ-বিদেশের ৯০টিরও বেশি নদ-নদীর পানি, নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকার নানা উপকরণ, বিভিন্ন বই আর প্রকাশনা নিয়ে চলা জাদুঘরটি সম্পর্কে মানুষের জানাশোনা খুবই কম।
কুয়াকাটা মূল পর্যটন কেন্দ্র থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায় খুব বেশি দর্শনার্থীও আসেন না এখানে। সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় এবং আয় না বাড়ায় জাদুঘরের পরিসরও বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
পটুয়াখালী শহর থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার পথে পাখিমারা বাজারের কাছে ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় এ জাদুঘর।
১৬ দশমিক ৫ শতাংশ শতাংশ জায়গা নিয়ে চলা জাদুঘরের কারিগর নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ৪৮৫ জন নারী-পুরুষ। আত্মনির্ভরশীল সমাজসেবা সংগঠন ‘উপকূলীয় জনকল্যাণ সংঘে’র মাধ্যমে একত্রিত হয়েছেন তারা।
সড়ক থেকে নেমে জাদুঘরের দিকে গেলেই এর সামনে দেখা মিলবে বালুতে অর্ধেক ডোবানো একটি নৌকার। এটি নদী মরে যাওয়ার একটি প্রতীক হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে।
পাশাপাশি নদীপাড়ের জীবন ও জীবিকাও যে নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে সংকটে রয়েছে, সে চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে বালুতে অর্ধেক ডোবানো নৌকার মাধ্যমে।
দ্বিতল টিনশেডের একটি ঘরে পরিচালিত এ জাদুঘরের নিচতলায় রয়েছে একটি সেমিনার কক্ষ ও টিকিট কাটার স্থান। পাশেই বিভিন্ন তাকে সাজানো রয়েছে নদ-নদী সংক্রান্ত বিভিন্ন বই এবং প্রকাশনা।
কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপর তলায় গেলেই চোখে পড়বে কাচের জারে থাকা বিভিন্ন নদীর পানি। এখানে বিভিন্ন জারে সাজানো রয়েছে বাংলাদেশের ৫৭টি দেশীয় এবং আন্তঃদেশীয়সহ মোট ৯০টি নদীর পানি। এর পাশাপাশি এখানে রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানীয় নদের পানিও।
বর্তমানে পানি জাদুঘরে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, রায়মঙ্গল, ইছামতি, আত্রাই, পুনর্ভবা, ডাকাতিয়া, মাথাভাঙ্গাসহ দেশের ছোট বড় বিভিন্ন নদীর পানি রয়েছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘একশনএইড বাংলাদেশ’র অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে এ জাদুঘর।
নদী এবং নদীকেন্দ্রিক জীবনধারণে সৃষ্ট নানা সংকট কাটাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন পানি জাদুঘরের কিউরেটর লিপি মিত্র।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করছি। এখানে বিভিন্ন বয়সের মানুষ আসেন, শিক্ষার্থীরা আসেন, আমরা তাদের নদী এবং নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকার বিভিন্ন বিষয়গুলো দেখিয়ে সচেতন করার চেষ্টা করি।”
তবে দর্শনার্থী কম হওয়ায় আক্ষেপ রয়েছে লিপি মিত্রের।
তার মতে, পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক হয় এমন কোনো স্থানে হলে পানি জাদুঘরে আরও বেশি জনসমাগম হতো।
একই মত দিলেন জাদুঘরটির পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, সরকারি সহায়তা এবং প্রচারণা বাড়ানো সম্ভব হলে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী টানতে পারবে পানি জাদুঘর।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাখিমারা বাজার থেকে কুয়াকাটা বিচ দূরে এবং জাদুঘরের আশপাশে কোনো পর্যটন স্পট না থাকায় দর্শনার্থীও কম।
“জাদুঘরটি কুয়াকাটা বিচের কাছাকাছি নেওয়া গেলে দর্শনার্থী বাড়বে। ফলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি জাদুঘরের আয়ও বাড়ানো সম্ভব হবে।”
জয়নাল আবেদীন বলেন, “আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছি। জাদুঘরের আওতা বাড়ানো এবং সম্প্রসারণে সরকারের সহায়তা দরকার।
“নদী এবং নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকার প্রতিচিত্র আমরা জাদুঘরের মাধ্যমে তুলে ধরছি। এর আরও বেশি প্রচার দরকার।”
পানি জাদুঘরের নিয়ে কথা হয় পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “আমি ইতোমধ্যে পানি জাদুঘর পরিদর্শন করেছি এবং এটি আমার কাছে অনেক বেশি তথ্যবহুল মনে হয়েছে।
“এখন পর্যন্ত জাদুঘর স্থানান্তর বা সম্প্রসারণের বিষয়ে কোনো আবেদন আমাদের কাছে নেই। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের কাছে কোনো আবেদন করে, তাহলে আমরা তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেব।”