Published : 29 Apr 2025, 10:02 AM
“আমি রিফিউজি ক্যাম্পে, অনেক মওসুমি বৃষ্টির সময়, একটা রিফিউজি বেবি, মৃত; সবসময় ঘুমের মধ্যে সামনে আসে। ট্রমাটিক, লাইক আ নাইটমেয়ার।”
ভাঙা ভাঙা বাংলায় একাত্তরের সেই পরাবাস্তব অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধের সাক্ষী জুলিয়ান ফ্রান্সিস, যাকে এ দেশের মানুষ ‘বাংলাদেশের বন্ধু’ হিসেবেই চেনে।
তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যে। তারুণ্যের শুরুতে যোগ দেন উন্নয়নকর্মীর পেশায়। সেই পেশাই তাকে টেনে এনেছিল বাংলার মাটিতে।
যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হল, তিনি তখন ২৫ বছরের তরুণ। অক্সফামের হয়ে কাজ করেছিলেন ভারতের বিহারে। লাখ লাখ বাংলাদেশি শরণার্থীর ভারতে আশ্রয় নেওয়ার খবরে ছুটে যান সীমান্তে।
রিলিফ কোঅর্ডিনেটর হিসেবে শরণার্থী শিবিরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা তার হয়েছিল, মনে তার প্রভাব স্থায়ী হয়ে গেছে।
এরপর কখন যেন বাংলাদেশকে ভালোবেসে ফেললেন; জীবনের এক তৃতীয়াংশ কাটিয়ে দিলেন এখানেই। এ দেশে থিতু হলেন, নাগরিকত্ব নিয়ে হয়ে উঠলেন পুরোদস্তুর বাংলাদেশি। মঙ্গলবার জীবনের ৮০ বছর পূর্ণ হল তার।
জন্মদিনের প্রাক্কালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ইনসাইড আউটের বিশেষ পর্বে অতিথি হয়ে এসেছিলেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস। নিজের জন্ম ও বেড়ে ওঠার পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার গল্প তিনি শুনিয়েছেন সেখানে।
মাতৃভাষা ইংরেজির সঙ্গে চলনসই বাংলাও বলতে পারেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস। বাংলায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “বড় প্রবলেম কি, আমার বাংলা বেশি ভালো না। পড়াশোনা হয় নাই আগে; ১৫ বছর কাজ করেছি ইন্ডিয়ায়, তো আমার বাংলা-হিন্দি খিচুড়ি। আমার সিরিয়াসলি স্টাডি হয় নাই।”
কেবল মুক্তিযুদ্ধ নয়, বাংলাদেশের নানা উত্থান-পতনেরও সাক্ষী হয়েছেন জন্মসূত্রে ব্রিটিশ নাগরিক জুলিয়ান ফ্রান্সিস। তার ভাষায়, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ ছিল মানবসৃষ্ট বিপর্যয়। তার দেখায়, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন হলেও ধনী-গরীবের বৈষম্য কেবলই বেড়েছে।
এ দেশে নাগরিক সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। তবু কেন এ দেশের নাগরিক হতে চাইলেন? বাংলাদেশের মায়ায় কেন পড়লেন?
জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেন, “আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। অনেক পরিশ্রমী, ফ্রেন্ডলি। এজন্য আমি খুশি।
“আমার কোনো সমস্যা নাই। আমার খুব আগ্রহোদ্দীপক লাগে। এজন্য আমার এখানে দেশ, আমার ঘর, আমার বাড়ি।”
ইনসাইড আউটের এই বিশেষ পর্বটি মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয় ইংরেজি ও বাংলা– দুই ভাষায়।
নিজের কথা
জুলিয়ান হেনরি ফ্রান্সিসের জন্ম ১৯৪৫ সালের ২৯ শে এপ্রিল যুক্তরাজ্যের মলভার্নে।
নিজের বেড়ে ওঠা এবং পরিবারের গল্প শুনিয়ে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, লন্ডনে স্কুলের পাট চুকিয়ে পড়তে যান কৃষি কলেজে। পড়ার বিষয় ছিল কৃষি ও পশুপালন।
ভাইবোনদের মধ্যে বড় বোন থিতু হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। ছোট বোন ছিলেন ব্যালে ড্যান্সার। বড় ভাই ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন।
১৯৭২ সালে কলকাতার এক বাঙালি নারীকে বিয়ে করেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস। ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী থাকেন যুক্তরাজ্যে।
নিজের বড় ভাইয়ের পাশাপাশি এক ছেলের লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটির থাকার বিষয়টি তুলে ধরে জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেন, “আমার বড় ছেলেরও লার্নিং ডিস্যাবিলিটি আছে। সেজন্য প্রতিবন্ধিতার উপরে আমার অনেক নলেজ আছে। কিন্তু কোয়ালিফিকেশন নাই, কিন্তু কোয়ালিফায়েড বাই এক্সপেরিয়েন্স।”
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়, কোচবিহারসহ বিভিন্ন এলাকায় ছয় লাখের বেশি বাংলাদেশি শরণার্থীর মধ্যে অক্সফামের শরণার্থী ত্রাণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ছিলেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস।
বাহাত্তরের জানুয়ারিতে ঢাকায় এলেও উত্তর ভারতে অক্সফামের কাজে দিল্লিতে ফিরে যান; সেখানে ১৯৭৮ পর্যন্ত থাকার পর ফিরে আসেন ঢাকায়।
এরপর ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ায় অক্সফামের বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ঢাকায় থেকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে কানাডিয়ান দাতব্য সংস্থা সিইউএসও’র হয়ে কাজ করেন। ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালের বন্যা এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় ত্রাণ তৎপরতায় ভূমিকা রাখেন।
এরপর জাকার্তায় সিইউএসও-র আঞ্চলিক কার্যালয়ে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় ফিরে রেড ক্রসের সঙ্গে যুক্ত হন এবং সংস্থার বিভিন্ন দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকার জন্য ২০১৮ ‘অর্ডার অব দি ব্রিটিশ এম্পায়ার’ বা ওবিই সম্মাননা পান তিনি। ২০২২ সালে তাকে যৌথভাবে ‘বঙ্গবন্ধু-এডওয়ার্ড হিথ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড’ দেয় ব্রিটিশ ও বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের ৫৪ বছরের পথযাত্রার চ্যালেঞ্জগুলো খুব কাছ থেকে দেখেছেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস; সেগুলো তুলে ধরতে লেখালেখি অব্যাহত রেখেছেন।
শরণার্থী শিবিরের কাজে
১৯৬৮ সাল থেকে বিহারে অক্সফামের একটা কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করতেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস। ১৯৭১ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে এপার বাংলা থেকে ভারতে যাওয়া শরণার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্দশার কথা শুনতে থাকেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস এবং তার সহকর্মীরা।
এরপর সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে যুক্ত হয় অক্সফাম। সেই প্রকল্পে ইনচার্জ ছিলেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস।
তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকার কিছু মিশন হাসপাতাল, বনগাঁওয়ের গান্ধী আশ্রমসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছেন তারা। অক্সফামে তার দায়িত্বের অধীনে ছিল ছয় লাখ শরণার্থী। তাদের প্রায় ৬০ শতাংশ হিন্দু, বাকিরা মুসলমান।
শুধু ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি জুলিয়ান ফ্রান্সিসরা। বাঙালি শরণার্থীদের কষ্টের জীবন যেন বিস্মৃত না হয়, সেজন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালের অক্টোবরে শরণার্থী মানবেতর জীবনের কথা বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার জন্য ‘দ্য টেস্টিমনি অব সিক্সটি’ নামে বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিদের যে লেখা প্রকাশ করে অক্সফাম, তার অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি।
জুলিয়ান ফ্রান্সিস বললেন, শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে যে অভিজ্ঞতা তিনি পেয়েছেন, তা নিয়ে দীর্ঘদিন কোনো কথা বলেননি। তার ভাষায়, কথা বলাটা ছিল ‘মানসিকভাবে অসম্ভব’। শরণার্থীদের কষ্ট দুঃস্বপ্ন হয়ে হাজির হত তার ঘুমে।
“১৯৭১ এর পরে আমি বেশি কথা নাই। আমি সাইলেন্ট। মেন্টালি ইমপসিবল টকিং টকিং। …অনেক লোক, বিশেষ করে শিশুরা আমার সামনে মারা যাচ্ছে।”
সে সময় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শরণার্থী শিবিরগুলোতে স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল ভয়াবহ। কলেরা আর ক্রনিক ডায়রিয়ার প্রকোপ ছিল, অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছিল তাতে। কোনো কোনো ক্যাম্পে মৃত্যুর হার ছিল ৩০ শতাংশ।
স্যাটিনেশন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা ছিল খুবই কঠিন। এর মধ্যে দেখা দেয় চর্মরোগ। পরে ঢাকার কলেরা গবেষণা কেন্দ্রে (বর্তমান আইসিডিডিআর, বি) উদ্ভবিত ওরাল স্যালাইন শরণার্থী শিবিরে খাওয়ানো শুরু হলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়।
দুঃস্বপ্নের সেসব রাত পেরিয়ে এক সময় কথা বলা শুরু করলেও এখনও মাঝেমধ্যে জুলিয়ান ফ্রান্সিসের ঘুমের ভেতরে ফিরে আসে সেসব স্মৃতি।
তিনি বলেন, “অনেক বছর পরে ইংলিশে বললে নাইটমেয়ার হয়। রিপিটিং নাইটমেয়ার, সবসময় একইভাবে।”
শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে যেসব ভয়াবহ দৃশ্যের মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেসব মনে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে জানিয়ে জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেন, “আমি সবসময় ১৯৭১ কে মনে করি।”
স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস ‘উধাও’ হয়েছিল অল্পদিনেই
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক পরপর, ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম ঢাকায় আসেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস।
তিনি বলেন, নিদারুণ কষ্টের সাক্ষী হওয়ার পর মানুষ স্বাধীন দেশে ফিরে খুব খুশি আর উচ্ছ্বাসের মধ্যে ছিল। কিন্তু সে পরিস্থিতি কয়েক মাস পরই বদলে যায়।
“জানুয়ারি ১৯৭২ সালে লোকজন খুব খুশি, উচ্ছ্বসিত। উদযাপন অনেক মধুর ছিল। কিন্তু দুয়েক মাস পরে ভাব পাল্টে গেছে। অনেক সমস্যার মুখোমুখি তারা। খাবার নেই। ব্রিজ-ফেরিসহ সব অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে।”
এরপর চুয়াত্তরে এসে বাংলাদেশিরা কীভাবে ‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের’ মুখোমুখি হল সে কথা তুলে ধরেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস।
“উন্নয়ন কখন হবে, কেমন হবে, তারপর ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ ছিল। কিন্তু এটা ছিল মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। সরকারের কিছু ভুল। তবে, হেনরি কিসিঞ্জারের সৃষ্টি করা মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ।
“যখন বাংলাদেশ কিউবাতে পাট রপ্তানি করল, তখন ফুড সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছিল। তারপরে আমেরিকার সরকার খুব রাগ, হেনরি কিসিঞ্জার অনেক সাপ্লাই, গম বন্ধ করেছে।”
এটাকে ‘খুব খারাপ পলিটিক্স’ হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) আর অক্সফামের মত ছোট সংস্থার কাজ করা কঠিন হয়ে গিয়েছিল সে সময়।
বাংলাদেশের ‘অনেক কিছু করার আছে’
৫৪ বছরে বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন হলেও আরও ‘অনেক কিছু করার আছে’ বলে মনে করছেন মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু জুলিয়ান ফ্রান্সিস।
তিনি বলেন, “এক-দেড় কোটি লোক গরীব, খাবার নেই। উন্নয়ন বিস্ময়করভাবে ভালো। কিন্তু সবার নয়।”
বাংলাদেশ অনেক লক্ষ্যমাত্রায় ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ‘ভালো’ অবস্থায় থাকলেও ধনী-গরীবের মধ্যে বিরাট ব্যবধান থাকার কথা তুলে ধরেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস।
তিনি বলেন, মাতৃমৃত্যু, শিশু মৃত্যু রোধ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু আয়কর আদায় ‘খুব খারাপ’। সমস্যা আছে আরো কিছু ক্ষেত্রেও।
ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ‘সবচেয়ে গরিব, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত’ লোকদের রক্ষা করার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেন এই সমাজকর্মী।
তিনি বলেন, বন্যা-দুর্যোগ প্রভৃতিতে স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা আছেন এবং সাধারণত তারা ‘খুব ভালো’। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কথা শোনার প্রক্রিয়ায় সমস্যা আছে। যেমন- বস্তিবাসীদের কথাগুলো একটু শোনা দরকার।
“মানে, এই রকম যে যে, তোমার প্রবলেম কী? তোমার প্রবলেম আছে, আমরা ঠিক করব। প্রথমে জিজ্ঞেস করো, কী দরকার? কী সমস্যা?”
বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও চিকিৎসা পরবর্তী দেখাশোনার জায়গায় ঘাটতি থাকার কথা বলেন এই ব্রিটিশ নাগরিক।
২০২২ সালে বাংলাদেশে ‘পারফোরেটেড কোলন’-এর চিকিৎসা নেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, “অনেক ভালো চিকিৎসক এখানে আছে। আফটার কেয়ারে অনেক সমস্যা আছে; নার্সিং কেয়ার বা আফটার কেয়ারে।”
মানুষ ‘ভালো’, রাস্তা ‘বিপদজনক’
বাংলাদেশের বন্ধু জুলিয়ান হেনরি ফ্রান্সিস অনেকের কাছে প্রিয় জুলিয়ান ভাই। শিশু-কিশোরদের অনেকে তাকে দাদু বলেও ডাকে।
তাদের উদ্দেশে কিছু বলবার অনুরোধে জুলিয়ান ফ্রান্সিস হাসতে হাসতে বললেন, “কিছু লোক বাবা বলছে, তারপরে দাদু।”
বাংলাদেশের কোন বিষয় সবচেয়ে ভালো লাগে? জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেন, “অনেক লোক অনেক ভালো কাজ করছে, পরিশ্রমী। বন্ধুবৎসল আর অনেক দয়ালু। বাংলাদেশের খাবারও খুব ভালো।”
তবে এ দেশে সড়কের পরিস্থিতিকে ‘বিপদজনক’ হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “রাস্তা খুব ডেঞ্জারাস। আমার গাড়ি নাই। আমি হেঁটে হেঁটে চলাচল করি। কিন্তু ট্রাফিক খুব খারাপ। খুব ডেঞ্জারাস, ক্রসিং দ্য রোড।”
কখনো দুর্ঘটনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “না, অ্যাক্সিডেন্ট হয় নাই। কিন্তু আমি সবসময় হাঁটি। গুলশান-বারিধারা-বনানীতে হাঁটি।”
মাছ ভীষণ পছন্দ, এক নম্বরে সর্ষে ইলিশ
স্ত্রী কলকাতার বাঙালি হওয়ার সুবাদে বাঙালি খাবারের সঙ্গে জুলিয়ান ফ্রান্সিসের প্রত্যক্ষ পরিচয় বহুদিনের। স্ত্রীর হাতে রান্না করা ‘অনেক ভালো’ বাঙালি খাবারে রসনা বিলাসের কথাও তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন।
“আমার স্ত্রী কলকাতার বাঙালি ছিল। ১৯৭২ সালে বিয়ে হয়। এজন্য অনেক ভালো বাঙালি খাবার খেয়েছি। আমার ওয়াইফ অনেক ভালো চাপাতি করত।”
জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেন, প্রধানত মাছ পছন্দ করেন তিনি। সর্ষে ইলিশ তার কাছে ‘খুব ভালো’। চিংড়িও ভালো, তবে ডাক্তারের বারণ।
চিকিৎসকের কথায় এখন বেশি বেশি সবজি খাচ্ছেন। বেশিরভাগ সময় পাতে ওঠে ঘন ডাল আর বেগুন।
যেতে চান গ্রামে, থাকবেন এ দেশেই
অবসরের পর গ্রামে যাওয়ার ইচ্ছার কথা বলেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস। তবে, সেটা যুক্তরাজ্য নয়, বাংলাদেশের কোনো গ্রামে।
“পুরোপুরি অবসরের পর আমি গ্রামে যাব। মে বি ময়মনসিংহ শেরপুরে। আমার বাসার হেল্পার গারো, উনি মে বি ২২ বছর আমার সঙ্গে।
“আগে উনার মা আমার সঙ্গে ছিল। অনেকটা পারিবারিক সংযোগ। তারপরে আমি গ্রামে যাব, আমার বিশেষ জ্ঞান অ্যানিমাল হাজবেন্ড্রি। তো, প্রতি সকালে গরুর দুধ দোয়ানো, খুব ভালো আইডিয়া।”
বাংলাদেশ নিয়ে ‘নিশ্চিতভাবে’ আশবাদী হওয়ার কথা তুলে ধরে জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেন, “আমি সবসময় ভাবি, আমার বাংলা বেশি ভালো না, তবে আমি এখন বাংলাদেশি নাগরিক। আমি এখানেই থাকব।”