মেলার দশম দিনে নতুন বই এসেছে ২৬০টি।
Published : 11 Feb 2023, 12:02 AM
সকালে শিশুদের কলতানে মুখরিত একুশে বইমেলা সন্ধ্যায় হাসি ফুটাল প্রকাশকদের মুখে।
শুক্রবার ছুটির দিনে মেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়; অন্যদিনের তুলনায় এদিন বিক্রিও হয়েছে বেশি।
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই মেলায় লোক সমাগম জনসমুদ্রে রূপ নেয়। তখন মেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া কষ্টকর হয়ে ওঠে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা; আর সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে হয় আবৃত্তি প্রতিযোগিতা।
এরপর সকাল ১১টায় সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় মেলার ফটক। ছুটির দিন হওয়ায় দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। এদিন আলাদা মাত্রা যোগ করে লেখক ও শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ জাফর ইকবালের উপস্থিতি।
শিশুপ্রহরের সময় ফুরালে ছুটির দিনের বিকাল হতে না হতেই ভিড় বাড়তে থাকে। দর্শনার্থীর পাশাপাশি এদিন ক্রেতার সংখ্যাও ছিল বেশি।
ঐতিহ্য, কথা প্রকাশ, ঢাকা কমিক্স, বাতিঘরসহ বেশ কিছু স্টলে বিক্রয়কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ দিনের বিক্রিবাট্টা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট।
ঐতিহ্যের ব্যবস্থাপক কাজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মেলা মানেই তো মানুষের মিলনমেলা। ছুটির দিনে লোক সমাগম ভালো হয়েছে, আমাদের স্টলে বই বিক্রিও ভালো হয়েছে।"
তবে ভিড়ের আনন্দের সঙ্গে ভোগান্তিও ছিল। ধানমণ্ডি থেকে মেলায় আসা ফরিদ উদ্দিন এসেছিলেন পরিবার নিয়ে। তিনি বলেন, "ছুটির দিন দেখে পরিবার নিয়ে এসেছি। তবে অতিরিক্ত জনস্রোতে হাঁটতেও কষ্ট হয়েছে। সবাইকে নিয়ে ঘুরতে পারার কারণে সেই কষ্ট ভুলে আনন্দটাই মনে রেখেছি।"
কথাপ্রকাশের ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম বলেন, "মেলায় ছুটির দিনে সব সময় ভালো বিক্রি হয়। এছাড়া পহেলা ফাল্গুন, একুশে ফেব্রুয়ারিতেও বিক্রি ভালো হবে বলে আশা করছি।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদনান ইউসুফ বলেন, "২১শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলায় ঘুরে মূলত পছন্দের বইয়ের তালিকা করছি। এরপর তালিকা ধরে বই কিনব।"
মেলার দশম দিনে নতুন বই এসেছে ২৬০টি।
নানা অনুষ্ঠান
বিকাল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ এবং জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: এস এম সুলতান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মলয় বালা ও সৈয়দ নিজার।
অনুষ্ঠানে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, "শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ এবং এস এম সুলতান আমাদের শিল্পকলার জগতে উজ্জ্বল দুই নক্ষত্র। সফিউদ্দীন আহমেদ প্রাতিষ্ঠানিকতার মধ্যে থেকে নিখুঁত কলাকৌশলের মাধ্যমে শিল্পচর্চা করে গেছেন।
“অন্যদিকে এস এম সুলতান শিল্পচর্চার দিক থেকে ছিলেন সাধারণ মানুষের কাছাকাছি, যে কারণে তার ছবির ভেতর আমরা নিজেদের খুঁজে পাই।"
আলোচনায় অংশ নেন সুশান্তকুমার অধিকারী, ইমাম হোসেন সুমন, নাসির আলী মামুন ও নীরু শামসুন্নাহার।
শুক্রবার ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মৌলি আজাদ, সাগরিকা নাসরীন, সাহাদাত পারভেজ এবং হুমায়ূন কবীর ঢালী।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন বায়তুল্লাহ কাদেরী, সঞ্জীব পুরোহিত, ফারহানা রহমান ও রুহ রুহেল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ, নুরুজ্জামান, মাসুদ রানা, মাহমুদুল হাকিম তানভীর।
এছাড়া ছিল নৃত্য সংগঠন ‘জিনিয়া নৃত্যকলা একাডেমি’, ‘নিক্কন পারফরমিং আর্ট সেন্টার’ ‘শান্তি ভাবদর্শন চর্যাকেন্দ্র’, ‘আনসার ডান্স একাডেমি’র নৃত্য পরিবেশনা। আবৃত্তি পরিবেশনা করেন ‘বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ’ এবং ‘ত্রিলোক বাচিক পাঠশালা’র শিল্পীরা।
শনিবার যা থাকছে
শনিবার মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিনও সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে শিশুপ্রহর। এছাড়া সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: আশরাফ সিদ্দিকী এবং স্মরণ: সাঈদ আহমদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইয়াসমিন আরা সাথী ও মাহফুজা হিলালী। আলোচনায় অংশ নেবেন উদয়শংকর বিশ্বাস, শামস্ আল দীন, রীপা রায় ও আব্দুল হালিম প্রামাণিক। সভাপতিত্ব করবেন খুরশীদা বেগম।