“দেশে ২১ ভাগ খাবার নষ্ট হয়। আর রান্না থেকে খাবার পর্যন্ত পর্যায়ে প্রায় ৫০ শতাংশ খাদ্য নষ্ট হয়,” বলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক ডিজি।
Published : 31 Dec 2023, 10:32 PM
দেশের খুব কম সংখ্যক মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকলেও ২২ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় থাকেন বলে এক জরিপে উঠে এসেছে। এর মানে ১৭ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে প্রায় পৌনে ৪ কোটি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় ভোগেন।
রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ‘ফুড সিকিউরিটি স্ট্যাটিসটিকস প্রজেক্ট-২০২২’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রকল্পটির পরিচালক আব্দুল হালিম।
ঢাকার আগারগাঁয়ে পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
বিবিএসের যুগ্ম পরিচালক হালিম বলেন, “দেশে জাতীয় পর্যায়ে শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। অর্থাৎ দেশে ৯৯.১৭ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছেন। তবে এর মধ্যে ২১ দশমিক ৯১ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় থাকেন। আর দেশের ৭৮ দশমিক ০৯ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তায় স্বাচ্ছন্দ্যে রয়েছেন।”
তিনি জানান, প্রথমবারের মতো দেশে এ ধরনের জরিপ করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। মাঠ পর্যায়ে ১ হাজার ৪৮৮টি প্রাথমিক নমুনা ইউনিটের (পিএসইউ) আওতায় মোট ২৯ হাজার ৭৬০টি খানা থেকে সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
জরিপে প্রতিটি খানায় আটটি প্রশ্ন রাখা হয়, যার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জরিপে দেখা যায়, পল্লী এলাকায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হার শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ হলেও শহরে এ হার শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ; সিটি করপোরেশন এলাকায় এ হার শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় থাকাদের মধ্যে বরিশালে এ হার ২২ দশমিক ৮৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ঢাকায় ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ, ময়মনসিংহে ২৬ শতাংশ, রাজশাহীতে ২৫ দশমিক ০১ শতাংশ এবং সিলেটে ২৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ মানুষ।
দেশে বর্তমানে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় আছেন গড়ে শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ মানুষ। বরিশাল বিভাগে এ হার শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ, ঢাকায় শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ, খুলনায় ১ দশমিক ০৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ, রাজশাহীতে শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ এবং সিলেটে ১ দশমিক ৪২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বেশির ভাগ খাবার গ্রামীণ এলাকায় উৎপাদন হলেও গ্রামের মানুষের মধ্যেই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে বেশি। গ্রামের ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় থাকেন। শহর এলাকায় এ হার ২০ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
একইভাবে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষদেরও বেশির ভাগ গ্রামের বাসিন্দা। সেখানে এ হার শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ, শহরাঞ্চলে শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা এবং পর্যবেক্ষণ ইউনিটের মহাপরিচালক শহিদুল আলম বলেন, “দেশে ২১ ভাগ খাবার নষ্ট হয়। আর রান্না থেকে খাবার পর্যন্ত পর্যায়ে প্রায় ৫০ শতাংশ খাদ্য নষ্ট হয়।”
দেশের মানুষের খাদ্যাভাস পাল্টানো দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, “শুধু ভাত আর রুটি নয়, আমাদের খাদ্য তালিকায় অন্যান্য খাদ্যও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বয়সভিত্তিক, ক্রয়ভিত্তিক এবং অর্থভিত্তিক খাবার তৈরি করা দরকার।”
বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে সচিব শাহনাজ আরেফিন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের পরিচালক খান নুরুল আমিন।