ঢাবিতে শোক দিবসের আলোচনায় অধ্যাপক রহমতকে ‘প্রত্যাখ্যান’

সভাপতিকে নিয়ে বিতর্কে হট্টগোলের মুখে শিক্ষক সমিতির আলোচনা সভা পণ্ড হয়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2022, 07:31 PM
Updated : 15 August 2022, 07:31 PM

খন্দকার মোশতাক আহমেদকে ‘শ্রদ্ধা’ জানানোর অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় ‘প্রত্যাখ্যান’ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ৪৭তম বার্ষিকীতে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনার সভার আয়োজন করে শিক্ষক সমিতি।

সভার শুরুতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়া অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করার আমন্ত্রণ জানালে অধিকাংশ শিক্ষকের আপত্তি জানিয়ে তা ‘প্রত্যাখ্যান’ করেন।

এসময় অধ্যাপক রহমত উল্লাহর সমর্থক কয়েকজন শিক্ষক বিরোধিতা করলে হট্টগোলের মুখে আলোচনা সভা পণ্ড হয়ে যায়।

পরে সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়াসহ শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের ৫ জন তাৎক্ষণিকভাবে একটি সভা করেন। সেই সভায় সমিতির কার্যকরী সদস্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু অধ্যাপক রহমত উল্লাহ তা মেনে নেননি।

এরপর শিক্ষক সমিতির ব্যানার নামিয়ে সভাপতিত্ব ছাড়াই সাধারণ শিক্ষকদের উদ্যোগে আলোচনা সভা চালিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূইয়ার সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী, স্যার এএফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক কেএম সাইফুল ইসলাম খান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিমসহ ১২ জন বক্তব্য দেন।

এবিষয়ে শিক্ষক সমিতির সদস্য অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাকের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনকারী শিক্ষক জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় সভাপতিত্ব করবেন, এটা হতে পারে না। সভায় উপস্থিত সাধারণ শিক্ষকরা তার সভাপতিত্ব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

“যেহেতু জাতির জনকের জন্য প্রোগ্রামটা ছিল, তাই শিক্ষকরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জায়গা থেকে পরবর্তীতে সুন্দরভাবে প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছেন।”

এবিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি উনাকে অনুরোধ করেছি যে, আপনি আজকের এই সভা থেকে বিরত থাকেন। আমাদের ভাইস-প্রেসিডেন্টকে সভাপতিত্ব করতে দিন। তখন উনি এটা কোনোভাবেই মানতে রাজি হননি। পরে শিক্ষক সমিতির ব্যানার নামিয়ে আমরা সঞ্চালনায় সাধারণ শিক্ষকরা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।”

তবে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর দাবি, ‘ব্যক্তিগত আক্রোশে’ সমিতির গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে একটি দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অনুষ্ঠানে তার সভাপতিত্ব নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি গ্রুপ শিক্ষক সমিতির কনস্টিটিউশন মানতে চায় না। শোক দিবসে আমরা কেন ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে আসব? এর আগে তো শিক্ষক সমিতির অনেকগুলো মিটিং আমি করেছি। এমনকি আজকে সকালেও তো শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে আসলাম। তখন তো তারা কোনো আপত্তি জানাল না।

“আমি বলেছি, আপনারা যদি আমার সভাপতিত্ব না মানেন তাহলে জেনারেল মিটিং করে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আপনারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যেখানে সভাপতি উপস্থিত আছে, সেখানে কেন অন্য কেউ সভাপতি হবে? এগুলো নোংরামি। মূলত শিক্ষক সমিতির শোক সভাকে পণ্ড করতেই তারা এটা করেছে।”

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে গত ১৭ এপ্রিল টিএসসি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সেখানে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এক পর্যায়ে খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতিও ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ তাৎক্ষণিকভাবে ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান এবং তা এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান। তখন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ওই বক্তব্যের অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করেন।

পরে শিক্ষক সমিতি, নীল দল, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের মুখে অধ্যাপক রহম‌তকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তাধীন এই বিষয়টি নিয়ে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ পরে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে মামলা করেন। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে অধ্যাপক রহম‌তকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি হিসেবে বহাল রয়েছেন। তবে শিক্ষক সমিতির সভা ও বিভিন্ন কার্যক্রমে তার অংশগ্রহণ নিয়ে এর আগে বেশ কয়েকবার আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

অধ্যাপক রহমত উল্লাহকে অব্যাহতির দাবিতে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বরাবর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন চিঠি দিয়েছেন।

তবে গঠনতন্ত্রী অনুযায়ী ৩০ জন শিক্ষক আবেদন করলে সভাপতিকে অব্যাহতির বিষয়ে সাধারণ সভা ডাকা যাবে বলেন জানান নিজামুল হক ভূঁইয়া।