হাই কোর্ট এ বিষয়ে শুনানি ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেছে।
Published : 15 Dec 2024, 07:22 PM
দেড় দশক আগে রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য ‘সাংঘর্ষিক’ বলে মনে করেন এ বিষয়ে করা রিট আবেদনকারী আইনজীবী।
ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চে একটি প্রতিবেদন দেয়। পরে এ বিষয়ে শুনানি আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
রিটকারীর আইনজীবী তানভীর আহমেদ পরে ওই প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিশন/কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত মাসে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ ও বিপ্লব কুমার পোদ্দার।
অ্যাডভোকেট তানভীর সাংবাদিকদের বলেন, “এর আগে ধার্য তারিখে অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে তারা বলেছিলেন, কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারপরে বললেন, কমিটি গঠনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য গিয়েছে।
“এ বিষয়ে আমার যে রিপ্রেজেন্টেশন ছিল, তা হাই কোর্ট নিষ্পত্তি করেছে এই মর্মে যে, দুটি মামলা সুপ্রিম কোর্টে চলমান আছে। এ কারণে তারা কমিটি গঠন করতে পারবেন না। এ মর্মে একটি চিঠি ইস্যু করেছে, যা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কথার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে আমি মনে করি।”
রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ ও বিপ্লব কুমার পোদ্দার এদিন নিজেরাই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
গত ২০ অক্টোবর করা এই রিট আবেদনে স্বরাষ্ট্র সচিব; মন্ত্রিপরিষদ সচিব; আইন সচিব; পুলিশের আইজিপি ও র্যাবের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট মামলার আগে তারা এ ঘটনার পুনঃতদন্ত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেছিলেন। তাতে সাড়া না পেয়ে মামলাটি করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৫ নভেম্বর হাই কোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়। স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবর করা আবেদনটি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। আবেদনটি ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরে ২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ হাই কোর্টকে জানায়, স্বাধীন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুরু করেছে। পাশাপাশি দুই সপ্তাহ সময়ের আর্জি জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আদেশের জন্য ১৫ ডিসেম্বর দিন রাখে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছেন ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে কেবল হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জোরাল হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে।
গত মাসে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তর পরিদর্শন শেষে তিনি বলেছিলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত হবে এবং অবশ্যই হতে হবে। দ্রুতই তদন্ত টিম করা হবে। যেহেতু অন্যান্য অনেকগুলো হচ্ছে, এটাও হয়ে যাবে।"