স্মরণসভায় রবীন্দ্রনাথ সরেনের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
Published : 13 Jan 2025, 10:16 PM
প্রয়াণের এক বছর পূর্তিতে আলোচনা আর স্মৃতিচারণায় আদিবাসী নেতা রবীন্দ্রনাথ সরেনকে স্মরণ করলেন অধিকারকর্মীরা।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয় বলে তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়।
স্মরণসভায় রবীন্দ্রনাথ সরেনের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
‘নিজেরা করি’র নির্বাহী পরিচালক খুশি কবীর বলেন, “তিনি চিরকালই, দেশ-দেশের মানুষ, দেশের আদিবাসী সমাজের অধিকার আদায়ে নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছেন। আদিবাসীদের মধ্যেও বিভিন্ন জাতি আছে, বিভিন্ন সংস্কৃতি-ভাষা আছে; যাদের সবাইকে নিয়েই বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করে যেতে হবে।”
সমতলের আদিবাসীদের জন্য কার্যকর ও পৃথক ভূমি কমিশন প্রতিষ্ঠা এবং পার্বত্য ভূমি কমিশনকে কার্যকর করার দাবি জানান খুশি কবীর।
এনসিটিবির বাতিল বইয়ের প্রচ্ছদের প্রসঙ্গ টেনে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, গ্রাফিতি কারো ‘ব্যক্তি সম্পত্তি না’।
“আমাদের বাংলাদেশ যে বৈচিত্র্য, বহুত্ববাদ, বহুধর্ম, বহুভাষা, বহুমতের দেশ, এটির একটি বার্তা কিন্তু ওই প্রচ্ছদে ছিল। এই গ্রাফিতির বার্তাই ছিলো অভ্যুত্থানের একটি অর্জন। এই অর্জনকে আমরা বৃথা হতে দিতে পারি না।”
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামে সহসভাপতি, কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন।
২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বারোকনা গ্রামে তার সংগ্রামী জীবনের অবসান ঘটে।
আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রবীন্দ্রনাথ সরেনের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “সাতষট্টি বছরের জীবনে তিনি সবসময় সমাজ, দেশ সভ্যতার অগ্রগতির জন্য কাজ করেছেন।”
স্মরণসভায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “বাংলাদেশের যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাস করে, বাংলাদেশকে যারা অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ হিসেবে দেখতে চায়, তাদের জন্য রবীন্দ্রনাথ সরেন ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পাথেয় হয়ে থাকবে।”
আর লড়াই সংগ্রামে দমে না যাওয়ার সাহস রাখতে রবীন্দ্রনাথ সরেন ‘অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন’ বলে মন্তব্য করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা।
তিনি বলেন, “আমার জন্মস্থান পাহাড়ের পরে সব থেকে বেশি পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেছি উত্তরবঙ্গে এবং সেটি তার (রবীন্দ্রনাথ সরেন) সাথেই। জ্বর গায়ে নিয়েই তিনি সারাদিন মিছিল করছেন।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন বলেন, রবীন্দ্রনাথ সরেনকে তিনি একজন সংগঠন হিসেবেই চেনেন।
“তাকে দেখেই আমি আমার গবেষণার বিষয় ঠিক করি যে, কীভাবে উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে পুরো বাংলাদেশে আদিবাসী অধিকার আন্দোলন চলছে।”
রবীন্দ্রনাথ সরেনের অবদান এবং কার্যক্রম নিয়ে আর্কাইভ করার ওপরে গুরুত্ব আরোপ করেন এই শিক্ষক।
আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে রবীন্দ্রনাথ সরেনের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
তিনি বৈষম্য নিরসনে ও অর্ন্তভুক্তিমূলক সমাজ বির্নিমাণে বাংলাদেশের আপামর জনতা, শ্রমিক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, আদিবাসীসহ সকলকে নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, “রবীন্দ্রনাথ সরেন যেমন আদিবাসীদের কথা বলেছেন, ঠিক তেমন দেশের কথাও বলেছেন।
“তিনি যেমন আদিবাসীদের নেতা, তেমনি বাংলাদেশেরও সবার নেতা। আমরা শুধুমাত্র বৃহৎ-ক্ষুদ্র বিবেচনায় তাকে একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখতে পারি না।”
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি বিচিত্রা তির্কি পাহাড়-সমতল-মধুপুর অঞ্চলে আদিবাসীদের প্রতিনিয়ত লড়াই-সংগ্রামের কথা এবং রবীন্দ্রনাথ সরেনের লড়াই-সংগ্রাম-আদর্শের স্মৃতিচারণ করেন।
এসময় তিনি আদিবাসীদের ভূমির অধিকার এবং প্রাথমিক শিক্ষায় আদিবাসীরা যেন নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়, সেই দাবি রাখেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি ম্যাথিউ চিরান। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক গজেন্দ্রনাথ মাহাতো।
আরও পড়ুন
রবীন্দ্রনাথ সরেন— লড়াইয়ের মাঠে দেদীপ্যমান