“কেউ কেউ মনে করেন, এখন এটি বন্ধ করা হলে তো লোকসান হবে। আমি বলব, এটি চালু হলে আরও অনেক বেশি ক্ষতি হবে”, বলেন তিনি।
Published : 06 Dec 2024, 08:32 PM
বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
শুক্রবার ঢাকার জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এক আয়োজনে তিনি এই দাবি করেন।
‘ভারতের জন্য’ সুন্দরবন ‘ধ্বংস করে’ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে বামপন্থি বুদ্ধিজীবী বলেন, “অবিলম্বে রামপাল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা উচিত।”
এই প্রকল্প করতে গিয়ে অনেক বিনিয়োগ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কেউ কেউ মনে করেন, এখন এটি বন্ধ করা হলে তো লোকসান হবে। আমি বলব, এটি চালু হলে আরও ‘অনেক বেশি ক্ষতি হবে’।”
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বিপদের মাঝে আছে মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ দাবি করেন, এসব ‘বিপদ নিয়ে না চিন্তা করেই’ পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা রামপাল করা হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরো এলাকাকে ‘ঝুঁকিতে ফেলেছে’ দাবি করে তিনি বলেন, “সেটা ঘনবসতি এলাকা। সাধারণত যেখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হয়, সেখানে তিন স্তরের নিরাপত্তা দিতে হয়। এখন যদি কোনো দুর্ঘটনা হয়, তাহলে অন্তত এক কোটি লোককে এলাকা থেকে সরাতে হবে।”
তীরন্দাজ রেপার্টরি নামে একটি উদ্যোগে ‘বাকবিতণ্ডা’ শিরোনামে থিয়েট্রিক্যাল বাহাসের আয়োজন করে। ব্যতিক্রমী এই বাহাসের বিষয় ছিল 'যোগ্য স্বৈরাচারকে বিরোধিতার বদলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা সুগম হয়'।
এই বিষয়ের পক্ষে বক্তব্য দেন নাট্যকর্মী দীপন সুমন। বিরোধিতা করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তেল-গ্যাস-খনিজ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত।
দীপক সুমন বলেন, “আপনারা উন্নয়নবিরোধী, উন্নয়নের অগ্রযাত্রা দেখতে পান না।”
ঘরে ঘরে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন পৌঁছে দেওয়ার মধ্যদিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে ডিজিটাল বাংলাদেশের যে উন্নয়ন যাত্রা হয়েছে, তার পক্ষে বলেন দীপক সুমন।
জবাবে আনু মুহাম্মদ বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ ব্যাপারটাই তো ‘হাস্যকর’। পৃথিবীর সব দেশেই প্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে। যেসব দেশে প্রযুক্তির বিকাশ আরও বেশি হয়েছে, তারাও নিজেদের ডিজিটাল দেশ দাবি করে না।”
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে অপরিকল্পিতভাবে সেতু, সড়ক নির্মাণ হয়েছে এবং অতিরিক্ত ব্যয় করার অভিযোগও করেন আনু মুহাম্মদ। বলেন, “"অনেক জায়গায় সেতু আছে, রাস্তা নাই। ভবন আছে, কিন্তু ভবনের কোনো কার্যকারিতা নাই। পদ্মা সেতু বা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে করতে গিয়ে ‘অত্যধিক ব্যয়’ করা হয়েছে।”
নেত্রকোণায় ২০১৮ সালে করা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, “অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো কিছুই হয়নি।”
দেশে বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নের উদাহরণ তুলে ধরেন দীপক সুমন। জবাবে আনু মুহাম্মদ দাবি করেন, বিদ্যুৎ খাতে যে পরিমাণ ‘লুটপাট’ হয়েছে, তা অকল্পনীয়।
‘স্বৈরাচারী কাঠামোর মধ্য দিয়েই’ উন্নয়ন হয় উল্লেখ করে দীপক সুমন বলেন, “অনেক সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা এখনও এমন একজন শাসক চান যিনি অনেক শক্তিশালী এবং সহজে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। অর্থাৎ তারা একজন ‘যোগ্য স্বৈরাচার’ চান।
আনু মুহাম্মদ বলেন, “এ কথা সত্য অনেক মানুষের এমন সরল চিন্তা রয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরও অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছে। সেখানে যে ‘যোগ্য স্বৈরাচারীই এসেছে সে মানুষের বিরুদ্ধেই শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে।”
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “জনপ্রিয়তার বিচার করলে শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বলতে হয়। তার বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল। তারপরও তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর মানুষ তার পক্ষে পথে নামেনি। এরপর আরেক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। তাকেও মেরে ফেলা হয়। এরপর আসেন স্বৈরাচার এরশাদ। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাকে নামানো হয়।”
বাহাসের শেষ ভাগে এসে দীপক সুমন বলেন, "এই বাহাসের মীমাংসিত জায়গায় আমরা যেতে পারিনি। এরকম বাহাস চলুক। আমরা সবাই কথা বলি। ভিন্নমতের কথাও আমাদের শুনতে হবে।”
পরে মঞ্চে এসে গান পরিবেশন করে অর্জুন কর। সন্ধ্যায় টিকেটের বিনিময়ে 'কণ্ঠনালীতে সূর্য' নাটক মঞ্চস্থ করে তীরন্দাজ রেপার্টরি। মোহিত চট্টোপাধ্যায় রচিত এ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন দীপক সুমন।