“ইসি শূন্যতার বিষয়ে সাংবিধানিক কোনো ঝামেলা নেই; তবে শূন্য না রাখাটা ভালো,” ভাষ্য ছহুল হোসাইনের।
Published : 05 Sep 2024, 11:32 PM
শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক মাসের মাথায় সরে দাঁড়িয়েছে তার শাসনামলে গঠিত কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা এ কমিশন মেয়াদ শেষ হওয়ার আড়াই বছর বাকি থাকতেই বৃহস্পতিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেয়। ফলে নতুন কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত পদগুলো শূন্য থাকবে।
অবশ্য কমিশনের পদ শূন্য হওয়ার নজির এবারই প্রথম নয়। ২০০৭ সালে বিচারপতি এম এ আজিজ কমিশনের সময়ে সর্বোচ্চ ছয় সদস্যের কমিশন ছিল; সবার পদত্যাগের মধ্যে সপ্তাহ খানেক শূন্য ছিল এসব পদ।
সেবার বহুল আলোচিত ২২ জানুয়ারি ভোটের আগের দিন পদত্যাগ করেন বিচারপতি আজিজ। জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মাহফুজুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সিইসি হন। পরে পাঁচ সদস্যই ৩১ জানুয়ারি একযোগে পদ ছাড়েন।
এমন পরিস্থিতিতে পাঁচ দিন পর এটিএম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি নিয়োগ পায় ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ সালে। তার সঙ্গে নিয়োগ পেয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন। এ কমিশনের আরেক সদস্য সাবেক সেনা কর্মকর্তা এম সাখাওয়াত হোসেন যোগ দেন ১৪ ফেব্রুয়ারি।
পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দুজনের মেয়াদ শেষ হয়। আরেকজন নির্বাচন কমিশনার তখন বহাল থাকায় শূন্য থাকেনি ইসি। এরপর ১৪ ফেব্রয়ারি বিদায় নেন পাঁচ বছরের দায়িত্ব পূর্ণ করা এম সাখাওয়াত হোসেন। পরে ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নতুন কমিশন আসে।
এরপরের কমিশনে পুরো ইসি শূন্য থাকেনি। ২০১২-২০১৭ মেয়াদের ইসিতে ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সিইসি কাজী রকিবউদ্দিনসহ চার সদস্য বিদায় নেন, পাঁচ সদস্যের আরেকজন মো. শাহনেওয়াজ মেয়াদ শেষ করেন ১৪ ফেব্রুয়ারি।
এক্ষেত্রে পাঁচ দিনের জন্য এক নির্বাচন কমিশনারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত কোনো কাজই ছিল না।
এরইমধ্যে সংলাপ-সার্চ কমিটি পেরিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ইসি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। নতুন কমিশনের সবাই একযোগে দায়িত্ব নেন ১৫ ফেব্রুয়ারি, যাদের মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।
এরপর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের পাঁচজনের সবাই একসঙ্গে নিয়োগ পান ও যোগ দেন ২৭ ফেব্রুয়ারি। তার মানে এই যাত্রায় কমিশন শূন্য থাকে ১২ দিন।
‘শূন্য না রাখা ভালো’
হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের আগে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেই সময়ে তখনকার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, “সংবিধানে, আইনে এ রকম শূন্যতার কথা, শূন্য থাকতে পারবে না- এমন কথা নেই…।
“নতুনরা না আসা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন বন্ধ হয়ে যাবে- এমন নয়। প্রশাসনিক দায়িত্বটা পালন করবে ইসি সচিবালয়। নতুন ইসি এলেই নির্বাচনের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে।”
মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ২০০৭ থেকে ২০১২ মেয়াদে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওই কমিশন যোগ দেওয়ার আগে সিইসি পদ সপ্তাহ খানেক শূন্য ছিল।
হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার আগে শূন্যতা তৈরি হওয়ার বিষয়ে সাবেক ইসি ছহুল হোসাইন বলেছিলেন, “এখন এটা এত জরুরি না, সাংবিধানিক কোনো ঝামেলা নেই। তবে শূন্য না রাখাটা ভালো।”
নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-
[(১) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া] বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।
(২) একাধিক নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া নির্বাচন কমিশন গঠিত হইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাহার সভাপতিরূপে কার্য করিবেন।
(৩) এই সংবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে কোন নির্বাচন কমিশনারের পদের মেয়াদ তাহার কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরকাল হইবে এবং
(ক) প্রধান নির্বাচন কমিশনার-পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, এমন কোন ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগলাভের যোগ্য হইবেন না;
(খ) অন্য কোন নির্বাচন কমিশনার অনুরূপ পদে কর্মাবসানের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনাররূপে নিয়োগলাভের যোগ্য হইবেন, তবে অন্য কোনভাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগলাভের যোগ্য হইবেন না।
(৪) নির্বাচন কমিশন দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন।
(৫) সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনারদের কর্মের শর্তাবলী রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ হইবে;
তবে শর্ত থাকে যে, সুপ্রীম কোর্টের বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোন নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হইবেন না।
(৬) কোন নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।
অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা
নির্বাচন কবে? আভাস মিলল না প্রধান উপদেষ্টার সংলাপেও
ইসি ক'দিন শূন্য থাকলে সাংবিধানিক বাধা নেই: আইনমন্ত্রী
বর্তমান ইসির মেয়াদপূর্তির আগেই নতুন কমিশন হচ্ছে?
পদত্যাগের আলোচনার মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে আসছে হাবিবুল আউয়াল কমিশন