গ্রামবাসীর দাবি, ২৫ অগাস্টের সংঘর্ষে গ্রামের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল না। ওটা ছিল ‘রাজনৈতিক মারামারি’।
Published : 31 Aug 2024, 01:35 AM
লুটপাটের পর পুড়িয়ে দেওয়া গাজী গ্রুপের কয়েকটি কারখানার মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রুপসি এলাকার গাজী টায়ারসের অবকাঠামো এখন রূপকথার ভূতুড়ে প্রাসাদের মতো; যেখানে দেখা গেল ছাই-ভস্ম, পোড়া লোহালক্কড় আর নিখোঁজদের অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের।
সরকার পতনের দিন ৫ অগাস্ট দফায় দফায় লুটপাট ও আগুন দেওয়া হলেও ২৫ অগাস্ট বিকালে গাজী টায়ারসের কারখানাটি একেবারে অঙ্গার হয়ে যায়।
ওই দিন সেখানে গাজী গ্রুপের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ থাকা গ্রামবাসীর হানা, দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গোলাগুলি এবং তাতে অনেক প্রাণহানির যে তথ্য ছড়িয়েছে, তাতে ক্রমেই যেন বাড়ছে রহস্য, কেউ মুখ খুলছেন না।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজী টায়ার্সের লণ্ডভণ্ড কারখানা ঘুরে দেখার পর কথা হয় রুপসী এলাকা ও খাদুন গ্রামের লোকজনের সঙ্গে। তাদের ভাষ্যে উঠে এসেছে সেদিনকার ঘটনা ও পূর্বাপর কিছু তথ্য।
গাজী গ্রুপের মালিক সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর, তার স্ত্রী হাসিনা গাজী তারাবো পৌরসভার মেয়র। রাজনৈতিক আধিপত্য ও জমিজমা নিয়ে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের বিরোধের কথা মাঝেমধ্যে সামনে এসেছে।
২৫ তারিখের আগুন দেওয়ার ঘটনা কি রাজনৈতিক, নাকি জমি-সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষোভ থেকে, তা নিয়ে খাদুন গ্রামের কেউ-ই মুখ খুলতে চাইলেন না।
তারপরও যাদের সঙ্গে কিছু কথা হলো, নিরাপত্তা সংকটের কারণে তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে চাইলেন না।
গ্রামবাসীর দাবি, ২৫ অগাস্টের সংঘর্ষে গ্রামের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল না। ওটা ছিল ‘রাজনৈতিক মারামারি’।
তবে নিখোঁজদের সন্ধানে আসা মানুষজন বলছেন, বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী কারাখানার ভেতরে ঢুকতে চাইলে তাদের সঙ্গে আরেকটি পক্ষের সংঘর্ষ হয়।
সেদিন সেই ঘটনা দেখিছিলেন, এমন কয়েকজন বলছেন, তখন (রোববার বিকালের পর) এখানে প্রচুর লোকজন ছিল। আর এমন লুটপাট চলছিল যে রাস্তায় যানজটে আটকে পড়া বাসের যাত্রীরাও নেমে কারখানায় ঢুকে পড়ে।
তাদের ভাষায়- সন্ধ্যার দিকে গাজী টায়ার্সের কারাখানার সামনে রুপসী মোড় থেকে একটা আর বিপরীত দিক থেকে আরেকটা মিছিল আসার পর শুরু হয় মারামারি, শোনা যায় গুলির শব্দও।
নিজের ভাই হাকিম শেখের ছবি ও পরিচয়পত্র নিয়ে গাজী টায়ার্সের ফটকে দাঁড়িয়ে ছিলেন চান মিয়া শেখ নামে এক ব্যক্তি। তার ভাই হাকিম ২৫ অগাস্টের সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ। পাশের পাকিজা টেক্সটাইল কারখানায় কাজ করার পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতকে পড়ছিলেন হাকিম।
হাকিমের সঙ্গে সেদিন সেখানে থাকা একজনের কাছ থেকে চান মিয়া শুনেছেন, “রোববার সন্ধ্যায় হাকিমের কারখানা ছুটি দিলে সে বাসায় যাওয়ার পথে গাজী টায়ারের কারখানার গেটে দেখে মারামারি হচ্ছে। বিশাল মারামারি, এক পর্যায়ে শুরু হইল গোলাগুলি। এইসময় দৌড়াদৌড়ি শুরু হইলে আমার ভাইসহ অনেকে গাজীর গেট খোলা পেয়ে ঢুকে পড়ে।
“তার সঙ্গে যে ছেলেটা ছিল সে আরেক দিকে দৌড় দেয়।”
চান মিয়া বলেন, “তারা সেখানে ঢুকে পড়ার পরপর যে দুই গ্রুপ মারামারি করতেছিল তাদের এক গ্রুপের কিছু লোকজন গেটটা লাগায় দিয়ে আগুন লাগায় দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো কারখানায় আগুন ছড়ায় পড়ে। পরে রাত ১১টা পর্যন্ত ওর ফোনে রিং বাজছিল কিন্ত কেউ ধরেনি।”
গত কয়েক দিন ধরে ভাইয়ের খোঁজে কারখানার আশপাশেই ঘোরাফেরা করছেন চানমিয়া। তিনি বলছেন, “স্থানীয় লোকরা বলছে- গাজী গ্রুপের মালিক না কি আশপাশের মানুষের অনেক জমি নিছে। তখন অন্য লোকরা কারখানায় ঢুকতে চাইলে মারামারি শুরু হয়।”
চান মিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন দাঁড়িয়ে তা শুনছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মিলন। একপর্যায়ে তিনিও যোগ দিয়ে বলেন, “ওই দিন সন্ধ্যার সময় কারখানার সামনে পরপর দুটি মিছিল নিয়ে লোকজন এসেছিল। ওই দুই মিছিলের লোকেদের মধ্যেই মূল মারামারিটা হয়।”
ওই মিছিলের লোকদের চেনেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হুনছি তো তারা বিএনপি নেতাগো লোক। তবে তাগোর সব নেতাগো চিনি না।”
কারখানা চত্বরে কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। কারখানার ফটকে লোকজনের ভিড়, তাদের অনেকেই এসেছেন নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে। কারখানার সামনে ভিড়ের মধ্যে ফুচকা, বাদাম, ঘটি গরম চানাচুরসহ বিভিন্ন পসরা নিয়ে বসেছেন হকাররা।
সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে মূল ফটকের ভেতরে প্রবেশ করা গেল। ঢুকেতে দেখা গেল ছাদ ধসে পড়া একটি একতলা ভবন। হাতের বায়ে গিয়ে দেখা গেল কারখানার মূল ছয়তলা ভবনটি, সেখান থেকে তখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে। লম্বা মইবাহী গাড়ি (টিটিএল) দিয়ে ছয়তলায় পানি ছিটাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের দুজন কর্মী।
ফায়ার সার্ভিসের কিছু কর্মী তখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, যাদেরকে খুবই ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। ছয়তলা ভবনের পেছনে আরও কয়েকটি একতলা শেড। সবই পুড়ে কালো হয়ে আছে। চারদিকে রাবার পোড়া গন্ধ। কারখানার ভেতরের চলাচলের পথগুলো তরল কেমিক্যালে (টার) আঁঠালো হয়ে আছে।
কারখানার ভেতরে সারিসারি পোড়া ট্রাকের পেছনে টেবিল পেতে বসে ছিলেন গাজী গ্রুপের তিনজন কর্মী। তাদের একজন আব্দুস সামাদ বলেন, “৫ তারিখ (অগাস্ট) যেদিন সরকারের পতন হয়, সেদিনই এই কারখানায় লুটপাট শুরু হয়। ৮ তারিখ পর্যন্ত চলে লুটপাট। জিনিসপত্র যে যা হাতে পাইছে নিয়া গেছে।
“২৫ তারিখ গাজী সাহেব অ্যারেস্ট হইলে পরে মাইকিং কইরা পাশের খাদুন গ্রামের লোকজন কারখানায় ঢুইকা পড়ে। ওই গ্রামের কিছু লোকের সঙ্গে গাজী গ্রুপের জমি নিয়া ঝামেলা ছিল। কিছু দিন আগেই (চলতি বছর) এই কারখানার সীমানা বাড়ানোর জন্য পাশের গ্রামের কিছু জমি কিনে তাতে বালু ভরাট শুরু হইছিল। নতুন কেনা জায়গাটা টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল।”
সামাদের ভাষায়- এই জমি নিয়েই বিরোধের জেরে জমির মালিক দাবিদার ব্যক্তিরা তাদের দখল বুঝে নিতে রোববার কারখানায় ঢুকে পড়লে শুরু হয় দ্বিতীয় দফায় গণলুটপাট।
খাদুন উত্তরপাড়ার (খাঁ পাড়া) জামে মসজিদের ইমাম লুৎফর রহমান বলেন, “জোহরের নামাজের আগে মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দিয়ে একদল লোক গাজী গ্রুপের দখলে থাকা ‘জমির মালিকদের’ জড়ো হওয়ার ডাক দেয়। তাদের সবাইকে রুপসি মোড়ে জড়ো হতে বলা হয়৷
“মাইকে তখন বলা হয়, তারা গাজী গ্রুপের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করবেন কিন্তু কেউ যেন আগের মত (৫ আগস্টের ঘটনা) লুটপাট না করেন। সেই অনুরোধও করা হয় মাইকে।”
খাদুন গ্রামের বাসিন্দা ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজের এক ব্যবসায়ী সঙ্গে কথা হলো। তিনিও নাম প্রকাশ করতে চান না।
তিনি বলেন, “আমরা তো বাপ-দাদার জমি উদ্ধারের জন্য গেছিলাম। কিন্তু এতগুলান লোক মরছে জন্যে এহন সবাই চুপ হইয়া রইছে। এই মামলা পরে কুন দিকে যায়, এই কারণে এখন কেউ কথা কইতে চায় না।”
কারখানায় গ্রামের লোকজনের ঢুকে পড়ার বিষয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, “এইখানে না হইলেও ১০ একর জমি জবর দখল করেছে। একজনের কাছ থিকা জমি কিন্যা আশপাশের জমিগুলাতে বালু ফেলেছে। কারখানার লোকজন গিয়া গ্রামে তাদের দালালদের বইলা আসেছে, যাদের জমি তারা যেন কাগজপত্র নিয়া তারাবোতে গাজী গ্রুপের অফিসে গিয়া দেখা করে। তাদের এমন পাওয়ার যে, থানা-পুলিশ কইরা কিছু হয় না। কেউ কুনো কথাও কইতে পারে না। এই কারণে গ্রামের লোক যহনই সুযোগ পাইছে, ঢুইকা পড়ছে।”
গ্রামের লোকজন লুটপাট করেছে- এমন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “গ্রামে গিয়া খুইজ্জা দ্যাহেন একজনও পাবেন না যাগো লোক মরছে (নিখোঁজ)। যখন আগুন লাগানো হয় তার আগ দিয়া এইখানে একটা মারামারি হইছে। তখনই গ্রামের লোকজন যারা জমির জন্য আসছিল, তারা পিছে দিয়া ভাগছে।”
কারখানা চত্বরে বসে থাকা গাজীর আরেকজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা নিয়মানুযায়ী জমি কিনছিলাম গ্রামের বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে। পরে যেটা হইছে একজনের কাছ থিকা জমি কিনছি আর তার ভাই-বোনেরা, অন্য আত্মীয়রা আইসা বলতেছে, তাদেরও ওই জমিতে ভাগ আছে। তাদেরকেও টাকা দিতে হইব। কোম্পানি বলছে, আপনারা কাগজ নিয়া আসেন আমরা বইসা বিষয়টার সুরাহা করব।
“এর আগেই তো হাসিনার সরকার গেল গা। যেদিন সরকার নামছে সেই দিন থিকাই শুরু হইছে লুটপাট।”
গাজী গ্রুপের কর্মকর্তারা বলছেন, ছয়তলা ভবনটিতে মূলত রাবারের সঙ্গে উচ্চ চাপ ও উচ্চ তাপে বিভিন্ন রাসায়নিক মিশিয়ে মণ্ড বানিয়ে পরিমাণ অনুযায়ী ধাতব বা নাইলন ব্যবহার করে টায়ার তৈরি করা হতো। বড় বড় ট্যাংকে রাখা হতো তরল রাসায়নিক, যা রাবারের সঙ্গে মেশানো হত। সেখানেই বয়লারের সেটআপসহ বড় কনভেয়ার বেল্টও ছিল। আগুনে সবই পুড়েছে।
তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লুটপাটের পর ওই ভবন ছাড়াও আশপাশের মালামাল রাখার গুদাম, গাড়ি ও যন্ত্রপাতির শেড, প্যাকেজিং শেড সবকিছু থেকে লুট করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কারখানা চত্বরের বাইরে নতুন দখলে নেওয়া জায়গায় বালু ভরার ভেকু মেশিনটিরও (এক্সক্যাভেটর) যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে সেটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
কারখানার মালামাল বহনের ১৪টির মতো ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের চাকাগুলো পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে বলে তথ্য দিচ্ছেন গাজীর কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, কোনো কোনো গাড়ির ইঞ্জিন, স্টিয়ারিং হুইলটাও খুলে নিয়ে সেটিতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে গেছে। ২৫ তারিখে যারা ঢুকছে, তারা একেকজন নাট-বোল্ট খোলার সব রকম যন্ত্রের বাক্স নিয়ে এসে এসব খুলে নিয়ে গেছে।
কারখানা চত্বরে কথা হলো রূপগঞ্জ থানার এসআই দর্পণ ও এএসআই বায়েজিদের সঙ্গে।
তারা বলেন, নিখোঁজের বিষয়ে থানায় কোনো তথ্য নেই। ফায়ার সার্ভিস থেকে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছিল। এখন তারা তাকিয়ে আছেন উদ্ধার অভিযানের দিকে।
হতাহত ও নিখোঁজের সঠিক হিসাব নেই
তিন বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে ১০ বছরের ছেলের হাত ধরে গাজী টায়ার কারখানার ফটকে দাঁড়িয়েছিলেন রোজিনা খাতুন। তার স্বামী আল আমিন গত রোববার রাতে এক বন্ধু রাকিবের সঙ্গে ওই কারখানার ভেতরে ঢুকেছিলেন। এরপর থেকে আর খোঁজ নেই।
রোজিনা বলেন, “আমি ঘরে থাকি, ঘরেই কাম করি, রাস্তাঘাটও চিনি না। এহন কার কাছে গিয়া স্বামীরে ফিরায়া দিতে কমু, কার কাছে বিচার চামু হেইডাও জানি না।”
কোলের কন্যা সন্তানটি যখনই বিরক্ত করছে তখনই রোজিনা বলছিলেন, “চুপ কর, আব্বায় আইতাছে জুস নিয়া।”
রং মিস্ত্রী শামীমের খোঁজে এসেছিলেন তার কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন। শামীমের স্ত্রীর বড় ভাই আবু হানিফ বলেন, “রবিবার রাত থিকা ওর ফোন বন্ধ। আমরা কয়দিন ধইরা ঘুইরা ঘুইরা হয়রান। পুলিশ, প্রশাসনের কেউ কিছু কয় না। পরে ওর ভাই আইসা পোড়া বিল্ডিং থিকা মাটি নিয়া চইলা গ্যাছে। আর আমি এহনো রইছি, যদি পাওয়া যায়।”
গত সোমবার স্বজনরা এসে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের কাছে নিখোঁজদের ও পরিবারের সদস্যদের নাম-ঠিকানা জমা দিয়েছিলেন, যেন খোঁজ পেলে তাদের জানানো হয়। কিন্তু পরে ফায়ার সার্ভিস সেই তালিকার বিষয়টি অস্বীকার করে।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা কারখানার ফটকের সামনে নিখোঁজদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেন। তারা নিখোঁজ ব্যক্তিদের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র রেখে তালিকাভুক্ত করছেন। তারা ১২৫ জনের নাম স্বজনদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন বলে সাংবাদিকদের তথ্য দিয়েছেন।
স্বজনদের খোঁজে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরছেন অনেকে। অটোরিকশা চালক আল আমিনের মা পারুল বেগম বলেন, “আমি ঢাকায় পোড়া হাসপাতালে (বার্ন ইনস্টিটিউট) গেছিলাম। ওখানে দুইজন আছিল। তয় আমার পোলারে পাই নাই। আমাগোরে যদি (কারখানার) ভেতরে যাইতে দিত, আমরা বিছরাইতাম আমাগো লোকরে। আমি মা, পোলার হাড্ডি দেইখাও বুঝুম এইটা আমার পোলা।”
ছোট ভাই নাহিদের খোঁজে এসেছেন সাজেদা আক্তার। তিনি বলেন, তার ভাই নাহিদ পাশেই একটা ব্যাটারির কারখানায় কাজ করতেন। তিন তার বন্ধু আমানউল্লাহর সঙ্গে রোববার রাতে এখানে এসে নিখোঁজ হন।
হাজেরা বেগম বলেন, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ ফোনে কথা হয়। তখন তিনি বলেছিলেন, তারা কারখানার ভেতরে আটকা পড়েছেন, বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিল পরিবারের কাছে। খবর পেয়ে পরিবারের সবাই কারখানার ফটকে এসে দেখেন দাউদাউ আগুন ভেতরে। এরপর থেকে পালা করে পরিবারের কেউ না কেউ এই ফটকের সামনে বসে থাকেন।