সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড় থেকে সমতলজুড়ে বাংলাদেশ মেতে উঠবে উৎসবে; নতুন রাঙা দিনের প্রত্যয়ে স্বাগত জানাবে ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে।
Published : 14 Apr 2025, 01:36 AM
অতীতের অশুভকে বিদায় দিয়ে শুভের প্রত্যাশায় আবারও চৈত্রের আলো নিভে ভোরের নতুন সূর্যের অপেক্ষায় কোটি বাঙালির প্রাণ।
দুয়ারে হাজির নতুন বছর; গ্রাম, শহর, নগর ও পাহাড়ে বর্ষবিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাঙা দিনের প্রত্যয়ে বাংলাদেশ প্রস্তুত ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বরণে।
বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রভাতে দুঃখ-বেদনা, গ্লানি আর অসুন্দরকে ভুলে মুক্তির জয়গানে বাজবে বর্ষবরণের সুর; সমবেত কণ্ঠে ধ্বনিত হবে- ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো...’।
ঘটনাবহুল এক বছর শেষে এবার থাকবে ‘ফ্যাসিবাদকে’ চিরতরে বিদায় জানানোর বার্তাও। আর ফিলিস্তিনে গণহত্যার চিরতরে অবসান চেয়ে বিশ্ব মানবতার জয়গান অম্লান রাখতে শান্তির প্রার্থনাও অনুরিত হবে বাঙালির হৃদয়ে।
আশায় বুক বেঁধে নতুন বছরে সবার কামনায় থাকবে হাতে হাত রেখে সকলে একসাথে মিলবার, চলবার। মানবতার মুক্তির সন্ধানে বিশ্বজুড়ে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জয়গান হবে নববর্ষের প্রথম সকালে।
সোমবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড় থেকে সমতলজুড়ে বাংলাদেশ মেতে উঠবে উৎসবে; বরাবরের মত রমনা বটমূলে ‘আলোয় আলোয় মুক্তির’ সন্ধানে বর্ষবরণ করবে ছায়ানট।
এর কিছু সময় পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে সবাই সোচ্চার হবে ‘নববর্ষের ঐকতানের’ সুরে, হাতে হাত ধরে বের হবে আনন্দ শোভাযাত্রা।
এবার বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা হচ্ছে ভিন্ন এক রাজনৈতিক বাস্তবতায়। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন করছে বাংলাদেশ। বর্ষবরণের নানা আয়োজনেও দেখা মিলতে শুরু করেছে এর প্রভাব।
সরকারের তরফে বর্ষবরণের আয়োজনে সবাইকে সামিল করার চেষ্টাও দেখা গেছে। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নাম বদলে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ হওয়া চারুকলার এবারের আয়োজনে ২৮টি জাতিগোষ্ঠী অংশ নেবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শোভাযাত্রার নানা অনুষঙ্গেও আনা হয়েছে বদল।
এমন সব প্রস্তুতির মধ্যেই আগুনে পুড়ে যাওয়া শোভাযাত্রার মোটিফের ক্ষতও থাকছে বর্ষবরণে।
আর এবার ফিলিস্তিনে একের পর এক গণহত্যা ও বর্বরতায় ঘটনায় গত কয়েকদিন থেকে প্রতিবাদে মুখর এদেশের মানুষও। বর্ষবরণে সেটির প্রভাবও দেখা যাবে।
বাঙালির চিরায়ত বর্ষবরণ
চৈত্রের শেষ দিনে হালখাতা করে ব্যবসার হিসাব চুকানো বাংলার পুরনো রেওয়াজ। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের বাণীতে কণ্ঠ মিলিয়ে বৈশাখের প্রথম দিন বাঙালির প্রত্যাশা থাকে- বৈশাখের রুদ্র ঝড় পুরনো বছরের আবর্জনা উড়িয়ে নেবে; গ্রীষ্মের অগ্নিস্নানে শুচি হবে বিশ্ব ধরা।
বর্ষবরণের আগে রোববার চৈত্র সংক্রান্তির নানা আয়োজনে বিদায় ঘটেছে ১৪৩১ বঙ্গাব্দের। চৈত্রসংক্রান্তিতে চারুকলা এবং শিল্পকলা একাডেমিসহ নানা জায়গায় অনুষ্ঠান আয়োজন রয়েছে।
পঞ্জিকার পাতা উল্টে ১৪৩১ থেকে ১৪৩২ সাল শুরু হওয়া সাধারণ ঘটনা হলেও বাঙালির জীবনে এই সাধারণ ঘটনার শুরুই হয় ভিন্ন মাত্রা নিয়ে।
কৃষি উৎসব বা রাজস্ব আদায়ের উপলক্ষ হিসেবে বৈশাখকে সামনে এনে বাংলা সাল প্রবর্তনের পর বাঙলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে এর প্রভাব ছিল ব্যাপক। বৈশাখের সেই উদযাপন রাজনৈতিক হয়ে ওঠে পাকিস্তান শাসনামলে।
পাকিস্তানের সেনাশাসক আইয়ুব খানের সময় যখন বাঙালির বাঙালিয়ানা নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করা হল, তখন এই বর্ষবরণ উৎসব হয়ে উঠেছিল বাঙালির আত্মপরিচয় টিকিয়ে রাখার রাজনৈতিক হাতিয়ার। সেই চেতনাই পরে বাংলাদেশকে জাতিরাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতার বন্দরে পৌঁছে দেয়।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে ওঠা বাংলাদেশকে পরেও নানা সংকটে দিশা দেখিয়েছে পহেলা বৈশাখের উৎসব; সে কারণেই এ দেশকে উল্টো পথে নেওয়ার চেষ্টায় বার বার আঘাত এসেছে এ উৎসবে।
ফলে গত কয়েক বছরের মত এবারও বর্ষবরণের আয়োজন ঘেরা থাকবে নিরাপত্তার চাদরে। এবার চারুকলার শোভাযাত্রায় নিরাপত্তাবাহিনীর লোকজন সামনে না থেকে পাশে পাশে হাঁটবে।
বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যে পহেলা বৈশাখের বিশেষ স্থান দখল করে রাখার কথা তুলে ধরে সবাইকে নতুন বঙ্গাব্দের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালির সম্প্রীতির দিন, মহামিলনের দিন। আবহমান কাল ধরে নববর্ষের এই উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি জেগে ওঠে নবপ্রাণ স্পন্দনে, নব-অঙ্গীকারে। সারা বছরের দুঃখ-জরা, মলিনতা ও ব্যর্থতাকে ভুলে এদিনে বাঙালি রচনা করে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, আনন্দ ও ভালোবাসার মেলবন্ধন।
প্রধান উপদেষ্টা পুরনো বছরের গ্লানি, দুঃখ-বেদনা, অসুন্দর ও অশুভকে ভুলে গিয়ে নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের প্রেরণাকে ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এই বাংলা নববর্ষের অঙ্গীকার।
'আমার মুক্তি আলোয় আলোয়'
বাঙালি সমাজকে নিয়ে মুক্তির পথযাত্রী হতে এবার ছায়ানটের বর্ষবরণের বার্তা- 'আমার মুক্তি আলোয় আলোয়'।
ছায়ানটের ৫৮তম এ আয়োজন যথারীতি শুরু হবে নতুন বছরের প্রথম দিন ভোর সোয়া ৬টায়।
ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে ভৈরবীর রাগালাপ দিয়ে ছায়ানটের ১৪৩২ বঙ্গাব্দবরণের সূচনা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজন সংশ্লিষ্টরা। তবে এবার এ আয়োজনে থাকবে কিছুটা বিষাদের সুরও।
বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে কিংবদন্তিতুল্য সন্জীদা খাতুন গত ২৫ মার্চ বিকাল ৩টায় জীবনের এই বিপুল যাত্রা সাঙ্গ করেন। এবারই প্রথম তাকে ছাড়া বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করছে ছায়ানট।
বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আগের দিন রোববার রমনা বটমূলে প্রস্তুতি নেন ছায়ানটের শিল্পীরা।
ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা বলেন, "বিশ্বব্যাপী যেমন ক্ষয়ে চলেছে মানবতা, তেমনি এদেশেও ক্রমান্বয়ে অবক্ষয় ঘটছে মূল্যবোধের। তবুও আমরা আশাহত হই না, দিশা হারাই না, স্বপ্ন দেখি হাতে হাত রেখে সকলে একসাথে মিলবার, চলবার।
"বাঙালি জাগবেই, সবাই মিলে সুন্দর দিন কাটানোর সময় ফিরবেই। সার্থক হবেই হবে, মানুষ-দেশ, এ পৃথিবীকে ভালোবেসে চলবার মন্ত্র।"
ষাটের দশকে রমনার বটমূলে যে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা করেছিল ছায়ানট, এখন তা বাঙালির নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ।
১৯৬৭ সালে শুরু হওয়া এ উৎসব-আয়োজন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বছর ছাড়া প্রতিটি পহেলা বৈশাখেই হয়েছে; নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে সুরের মূর্ছনা আর কথামালায়। কোভিডের দুবছর এ আয়োজন করা হয় ভার্চুয়ালি।
২০০১ সালে ছায়ানটের বৈশাখ বরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। তাতে ১০ জন নিহত হন। এরপর থেকে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই প্রতি বছর বর্ষবরণের এ আয়োজন হচ্ছে।
১৯৬১ সালে পাকিস্তানি শাসকদের বাধা উপেক্ষা করে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদযাপন এবং তার সূত্র ধরে পরে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট গঠনে অনেকের সঙ্গে সন্জীদা খাতুন ছিলেন নেতৃস্থানে। তার চিরবিদায়ে এবার তিনি না থেকেও থাকবেন সবার হৃদয়ে।
ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, "এই প্রথম ছায়ানট বর্ষবরণ আয়োজন করছে, যখন সন্জীদা খাতুন নেই। তার যে চিন্তা, আমরা যেন ছড়িয়ে দিতে পারি। আয়োজনটি সুষ্ঠভাবে করতে পারা এবং বর্ষবরণের মর্মবাণী সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারাটাই হবে সনজীদা খাতুনকে শ্রদ্ধা জানানো।"
এবারের অনুষ্ঠানসজ্জায় ৯টি সম্মেলক, ১২টি একক গান ও ৩টি পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠানে সব মিলিয়ে দেড়শতাধিক শিল্পী এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করছেন।
ছায়ানটের যুগ্ম সম্পাদক পার্থ তানভীর নভেদ বলেন, "ছায়ানট এ আয়োজন নিয়ে অনেক মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে- এটাই আমাদের পরম পাওয়া।"
বর্ষবরণ নিছক একদিনের জন্য বাঙালি সাজার প্রতিযোগিতা নয় মন্তব্য করে সারওয়ার আলী বলেন, "এই ধারাটি ধরে রেখে সকল মানুষ যেন স্বস্তির জীবনযাপন করতে পারি, তার প্রার্থনা করতে চাই।"
রমনা উদ্যান থেকে দুই ঘণ্টার এ আয়োজন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরাসরি সম্প্রচার করা হবে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেইসবুক পেইজে। বিটিভিও সরাসরি সম্প্রচার করবে অনুষ্ঠান।
মঙ্গল বদলে এবার আনন্দ শোভাযাত্রা
গত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অর্গল ভাঙার আহ্বানে পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল; সেটিই পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ নেয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিও পায় এ কর্মসূচি।
এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা নাম বদলে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামকরণ করা হয়েছে। আয়োজন সংশ্লিষ্টরা নাম বদল না বলে, এটাকে ‘পুনরুদ্ধার’ বলছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, “আগেও পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রাটি হত, তার নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। সেটি পরে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়েছিল। আমরা আবার ‘আনন্দ শোভাযাত্রায়’ ফিরে গেলাম। এটাকে পুনরুদ্ধার বলা যেতে পারে।”
এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বার্তা দিতে ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ নামে একটি মোটিফও তৈরি করা হয়েছিল, যা শনিবার আগুনে পুড়ে গেছে। ভোরের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ এবং ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ পুড়ে যায়।
সবার সামনে থাকার কথা ছিল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ নামের এ মোটিফ। নারীর দাঁতাল এই মুখাবয়বে মাথায় ছিল খাড়া দুটো শিং। এটি আবার বানানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে শোভাযাত্রার আগে শেষ হবে কি না তা নিশ্চিত নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৯টায় আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে।
শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে শোভাযাত্রা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “শোভাযাত্রায় এবছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিবৃন্দ অংশ নেবেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এবছর থাকবে ৭টি বড় মোটিফ, ৭টি মাঝারি মোটিফ এবং ৭টি ছোট মোটিফ।"
বন্ধ থাকবে মেট্রোরেলের দুই স্টেশন
চারুকলা অনুষদ থেকে সকাল ৯টায় বের হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এসময় শাহবাগ ও টিএসসির মেট্রোরেল স্টেশনে ট্রেন থামবে না, তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
এবারের শোভাযাত্রায় নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা সামনে না থেকে দুই পাশে হাঁটবেন।
নগরীর অন্যান্য স্থানে বর্ষবরণের আয়োজন সন্ধ্যার পরও থাকবে; তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকাল ৫টার মধ্যেই আয়োজন শেষ করা হবে। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিকাল ৫টার পর প্রবেশ করা যাবে না।
দেশজুড়ে আয়োজন
ঐতিহ্যকে সঙ্গী করে ছায়ানট ও চারুকলার আয়োজনের বাইরে পুরো দেশজুড়েই ছোট-বড় আয়োজনে রয়েছে বর্ষবরণের। আছে কনসার্ট, সাধুমেলা, খনার মেলা, বৈশাখী মেলা, লোকনাট্যের আসরসহ নানা আয়োজন।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, “দেশে বসবাসরত বাঙালির পাশাপাশি অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকেও যুক্ত করা হয়েছে এবারের আয়োজনে। ফলে এবারের আয়োজন হবে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’। চারুকলার শোভাযাত্রায় অংশ নেবে ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর লোকজন।”
বরাবরের মত এবারও রাজধানীতে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করবে সংগীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান সুরের ধারা। আয়োজনটি এবার ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে হবে।
কিছুটা অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত নিয়ে চট্টগ্রামের ডিসি হিলে শুরু হয় এবার ৪৭তম বারের মত বর্ষবরণের আয়োজন। তবে রোববার সন্ধ্যায় সেখানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে মঞ্চ। এরপর আয়োজকরা ঐতিহ্যবাহী নববর্ষের এ আয়োজন করা সম্ভব হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। হামলা এবং প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন আয়োজকরা।
অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্য একাডেমি ৩৯ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও সপ্তাহব্যাপি বৈশাখী উৎসবের আয়োজন করছে।
এছাড়া চৈত্রসংক্রান্তিতে শিল্পকলার আয়োজনে ১২ জেলায় সাধুমেলা হবে। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে কনসার্ট। চারুকলার শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনের গণহত্যার প্রতিবাদ জানাবেন শিল্পীরা।
লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলাসহ ৩০টি জেলায় বৈশাখী লোকনাট্য উৎসব আয়োজন করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
চৈত্রসংক্রান্তি ও বৈশাখের অনুষ্ঠানে বাঙালিসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা অংশ নেবেন। সাংগ্রাই, বিঝু, বৈসু, বিহ, সাংলান ও বাংলা নববর্ষ ঘিরে দেশজুড়ে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
কড়া নিরাপত্তা
নববর্ষ বরণে রাজধানীর রমনা বটমূল, চারুকলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
অনুষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরীকে ২১টি সেক্টরে ভাগ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
অপরদিকে সোমবার ভোর ৫টা থেকে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এসব এলাকার আশপাশের সড়কে ডাইভারশন ও ব্যারিকেড থাকবে ১৩ পয়েন্টে।
বর্ষবরণের 'আনন্দ শোভাযাত্রা' এবার বড় পরিসরে, থাকবে ২১ মোটিফ
'মঙ্গল' বদলে 'আনন্দ শোভাযাত্রা' কেমন হবে, জানাল চারুকলা
নাম বদলে মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'