“এ কারণে আমরা আমাদের যেটা আড়াই হাজার টাকা ভাড়া করেছিলাম সেটা দুই হাজার করে দিয়েছি। আরও অনেকেই ভাড়া কমাচ্ছে।”
Published : 21 Mar 2025, 12:41 AM
ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও যেতে এসি স্লিপার বাসগুলোতে কোম্পানিভেদে সাধারণত এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়। তবে ঈদের সময় কোনো স্লিপার বাসের ভাড়াই তিন হাজার টাকার কম না।
এ রুটের মত উত্তরের প্রায় সব গন্তব্যেই ইচ্ছেমত স্লিপার বাসের ভাড়া বাড়িয়েছে বাস কোম্পানিগুলো। রুট ও কোম্পানি ভেদে ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। এ কারণে অনেক যাত্রীই স্লিপার এসি বাস ছেড়ে অন্য বন্দোবস্তে যাচ্ছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে ঈদের টিকেট নিয়ে কাড়াকাড়ির বাজারেও স্লিপার ও অনেক কোম্পানি এসি বাসের টিকেট বিক্রি করে শেষ করতে পারেননি। অনেকেই ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রী না পাওয়ায় আবার কমিয়েও দিচ্ছেন বলে কোম্পানির মালিকপক্ষের লোকজন বলছেন।
দীর্ঘ পথে একটু আরামে ঈদযাত্রার জন্য অনেকেই স্লিপার বাস বেছে নিতে চান। তবে এবার বাদ সাধছে অতিরিক্ত ভাড়া বলে যাত্রীরা বলছেন।
ঢাকার কর্মরত সফটওয়্যার প্রকৌশলী আলিউল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও রুটে সাধারণত এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে থাকে স্লিপার বাসগুলো । আবার ভলভো-স্ক্যানিয়ার মত একটু ভালো বাস চালায় যে অপারেটরগুলো তারা প্রতি আসনের জন্যই দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা নিয়ে থাকে। ভলভো-স্ক্যানিয়ার ভাড়া তেমন না বাড়লেও স্লিপার বাসগুলোর ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। যার কারণে তিনি এবার নন এসিতেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানালেন।
ঢাকায় বেসরকারি চাকরিজীবি লিংকন মো: লুৎফরজামান সরকার বলেন, তিনি রংপুরে যেতে অনলাইনে বিডিটিকেটস ডটকমে এসি বাসের টিকেট খোঁজ করতে গিয়ে দেখেন ভাড়া দেখাচ্ছে তিন হাজার টাকা। অন্য সময়ে এই ভাড়ায় উড়োজাহাজে সৈয়দপুর যাওয়া যায়। পরে তিনি আর টিকেট কেনেননি।
তিনি বলেন, সাধারণত রংপুরে এসি বাসের ভাড়া এক থেকে দেড় হাজারের মধ্যেই হয়।
বাংলাদেশ এসি স্লিপার বাস মালিক সমিতির সড়ক সম্পাদক ও আরাফাত পরিবহনের সিইও আনিসুর রহমান শিল্পী ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “এটা সত্য। প্রত্যেক ঈদেই এটা হয়।”
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “এই সার্ভিস বিলাসবহুলের কাতারে পড়ে গেছে। তাই সরকার কোনো ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় না। ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের ওপর ভিত্তি করে ভাড়া নির্ধারিত হয়। আপনি ফ্লাইটের টিকেটের ক্ষেত্রে দেখবেন কক্সবাজারের ভাড়া এমনিতে ৬ হাজার টাকার আশপাশে, একটু চাহিদা বাড়লেই ভাড়া ১০ হাজার হয়ে যায়।”
নন এসি বাসগুলোর ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়ার দাবি করে তিনি বলেন, “নন এসি বাসের ভাড়া সরকার বা বিআরটিএ যেটা নির্ধারণ করে দিয়েছে সেটাই কিন্তু নেওয়া হচ্ছে। এখানে কিন্তু কেউ ভাড়া বাড়ানোর সাহস করছে না। কারণ নন এসি বাসে ভাড়া বাড়ালে যে কোনো যাত্রী গিয়ে মামলা করতে পারেন। আর আমাদের স্লিপার বাসগুলো কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের জন্য না। ধরেই নেওয়া হয় একটু সঙ্গতিসম্পন্ন লোকেরা এটায় চড়বেন।”
ভাড়া বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে আনিসুর বলেন, “ঈদের সময় আমাদের গাড়িগুলো যাত্রী নামিয়ে দিয়ে পুরোপুরি ফাঁকা আসে। এ কারণে ভাড়াটা এখান থেকে পোষাতে হয়।”
তবে ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রী না পাওয়ায় অনেক পরিবহন এরইমধ্যে ভাড়া কমাতে শুরু করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এবারের ঈদের ছুটির সময় তো যাওয়ার লোকই কম। ২৫ তারিখ (মার্চ) বাদে অন্য দিনগুলোতে আমাদের বেশির ভাগ গাড়ির ৫০ শতাংশ বুকিং হয়েছে মাত্র। এ কারণে আমরা আমাদের যেটা আড়াই হাজার টাকা ভাড়া করেছিলাম সেটা দুই হাজার করে দিয়েছি। আরও অনেকেই ভাড়া কমাচ্ছে।”
নন এসি বাসেও কিছু ভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তবে সেটা ক্ষেত্র বিশেষে দেড় থেকে তিনশ টাকার মত।
শ্যামলী পরিবহনের রিংরোড কাউন্টারের কর্মী মো. সোহাগ বলেন, “ঈদের সময় আমরা বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়াই নিই। অন্য সময় বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া থেকে কিছু কম রাখা হয়। এজন্য মনে হচ্ছে ভাড়া বেড়েছে। আবার অনেক বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করছেন তাদের টিকেটে দেখবেন তিনি হয়ত মাঝখানের কোনো স্টপেজে নেমে যাবেন, কিন্তু টিকেট কিনেছেন আরও লম্বা রুটের গাড়িতে।
”ঈদের সময় অনেক কোম্পানি সব সিটের জন্যই লাস্ট স্টপেজের ভাড়াটা নিয়ে রাখে। যেমন ধরেন গাড়িটা যদি পঞ্চগড়ের হয় তাহলে কেউ যদি রংপুরে নেমে যান সেই ক্ষেত্রে পঞ্চগড়ের ভাড়াটা নেওয়া হয় তার কাছ থেকে। আবার যিনি রংপুরের গাড়িতে টিকেট কাটবেন দেখবেন তার ভাড়াটা ঠিকই আছে।”