“বই কেনা হয়নি। বই নিয়ে ছবি তুলতেছি। ব্যাপারটা পশও।”
Published : 25 Feb 2025, 11:06 PM
বইমেলার স্টলে স্টলে ঘুরে বই নিয়ে ছবি তুলছিলেন শায়লা আক্তার৷ বনশ্রী থেকে আসা এই তরুণী বললেন, মূলত বেড়ানোর জন্যই তিনি বইমেলায় এসেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শায়লা বলেন, “বই কেনা হয়নি। বই নিয়ে ছবি তুলতেছি। ব্যাপারটা পশও।”
শায়লার মতই মেলায় আসা আরও অনেকে ছবি তুলতে এবং আড্ডা দিতে দেখে গেল।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণে জনসমাগমও বাড়ল। তবে জমজমাট ভিড় দেখা গেল খুব কম স্টলের সামনেই।
অনেক স্টল ক্রেতাশূণ্য থাকায় বিক্রেতাদের নিজেদের মধ্যে গল্প করতে দেখা গেল। কথায় কথায় তারা বললেন, মেলার শেষ দিকে এসে এবার গত বছরের তুলনায় ভিড় কমেছে, সঙ্গে বিক্রিও বেশ কমেছে।
পরিবার নিয়ে মেলায় এসে ছবি তুলছিলেন মেহেরুন নীলা। তিনি বলেন, “আজকে বই কেনা হয়নি। সবাই একসাথে এলাম, অনেক বই আছে- এ কারণেই মেলাটাকে পছন্দ করা।”
মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে লেকের পাড়ে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন নাসিমুজ্জামান জনি।তিনি বললেন, পুরান ঢাকায় তার ক্যাম্পাস, বাংলাবাজার থেকেই সব বই কেনেন।
“তাই বলে মেলায় যে আসব না, তা তো হয় না। মেলায় আসার একটা অন্যতম কারণ, লেখকদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ মেলে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে ছবি ওঠানোর সুযোগ তো বোনাস!”
বই কেনা হয়নি, তবে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে মেলায় এসেছেন তুহিন ইসলাম।
তিনি বলেন, “আড্ডা দেওয়ার দারুণ একটা জায়গা বইমেলা প্রাঙ্গণ। ক্যাম্পাস লাইফ শেষ হওয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে আজকাল হরহামেশা দেখা করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। সেদিক বিবেচনায় বইমেলা দেখা করার একটা সুযোগ করে দিল।”
দুটো বই কিনে মেলা থেকে ফিরছিলেন সারওয়ার হোসাইন রাফসান। সচারচার যে বইগুলো বাজারে পাওয়া যায় না, সেগুলো কিনতে তিনি মেলায় আসার কথা বললেন।
রাফসান বলেন, “বইয়ের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া- বইমেলায় না এলে কি এ কথাটা জোর দিয়ে বলা যায়? বিভিন্ন স্টল ঘুরে, নিজ হাতে যাচাই করে বই কেনার যে মজা- সেটা পেতে হলেও বইমেলায় আসা উচিত সবার।”
পাঠক সমাবেশের প্রোডাকশন ম্যানেজার খুকু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গতবারের তুলনায় এবার তাদের বিক্রি ৫০ শতাংশ কমেছে৷
“বিক্রি আগের মত না। খুব খারাপ। অর্থনৈতিক সমস্যা, আন্দোলন সবকিছু মিলিয়ে মেলায় লোকই কম। এর মধ্যে যারা আসে তারা ছবি তোলে, ঘুরে।”
তিনি বলছিলেন, গত বছর শেষ সময়ে ক্রেতারা দম ফেলার ফুসরত পাননি; কিন্তু এবার বসে সময় কাটাতে হচ্ছে।
“সবার অবস্থাই মোটামুটি এরকম। বই পড়া আস্তে আস্তে মানুষ কমিয়ে দিচ্ছে। ভেবেছিলাম দিন যাবে বিক্রি হবে, বাড়েনি। শেষ ১০ দিনে বিক্রির আশা করেছিলাম, কিন্তু এমনভাবে হোঁচট খেলাম, খুবই বাজে অবস্থা। আরও কমে গেল বিক্রি।”
আল হামরা প্রকাশনীর বিক্রেতা রুজাইফা খানও বিক্রি কমার কথা বললেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ক্রেতাই নাই, যারা আসতেছে বই নিচ্ছে ছবি তুলতেছে; তারপর চলে যাচ্ছে। এমন না যে কনটেন্ট খারাপ।
“এবার ভিড়ও অনেক কম। গতবার এই সময়ে দাঁড়ানোর মত অবস্থা ছিল না, এবার বই দেখে দেখে চলে যাচ্ছে। আগ্রহ নাই। অনেকে টিকটক সেলিব্রিটির বই কিনতেছে, ভালো কনটেন্ট কিনতে চায় না।”
এখন পর্যন্ত মেলা আনা অর্ধেক বইও বিক্রি করতে পারেননি বলে রুজাইফার ভাষ্য।
মওলা বাদ্রার্স প্যাভিলিয়নের বিক্রেতা সাজরিন আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, অন্যবার মেলায় শেষদিকে যে ভিড় হয়; এবার তা নেই।
“আজকে তো একদম ফাঁকা ফাঁকা। অনেক কমেছে বিক্রি। দিন দিন বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমছে মানুষের, মোবাইলেই সব পাওয়া যাচ্ছে তো।”
নালন্দা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী খোকন আহমেদ সাব্বির বলছেন, এখনও মেলার কিছু দিন বাকি থাকায় শেষ পর্যন্ত বিক্রি কতটা হবে তা আন্দাজ করা যাচ্ছে না।
“তবে এবার পাঠক খুবই কম পাচ্ছি। দেখি বাকি দিনগুলাতে কী হয়। যারা আসছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ ছবি তুলছে, ছবি তোলা শেষ বই রেখে চলে যাচ্ছে। তবে এখন পাঠকের সংখ্যা একটু বাড়ছে।”
কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিক্রি অর্ধেক কমেছে। আসে কেউ ছবি তোলে, কেউ কেউ কেনে। ভিড়ও নাই আগের মত।”
গত শুক্রবারের পর থেকে মেলায় বিক্রি কমে আসার কথা বলছেন ঐতিহ্য প্যাভিলিয়নের ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) আমজাদ হোসেন খান কাজল।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মেলার শেষ দিকে বিক্রি বেশি হয় বরাবরই দেখে আসছি। এবার অন্যরকম হল। বেশ বিক্রি কমেছে। মেলা জমতেছে না। এবার ডবল বিক্রির আশা করেছিলাম।”
একেবারেই ক্রেতাশূণ্য দেখা গেল কলী প্রকাশনী স্টল। বিক্রেতারা নিজেরা নিজেরা গল্প করে সময় পর করছিলেন।”
এ স্টলের বিক্রয়কর্মী বৈশাখী আক্তার সীমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার তারা কেবল ৪০ শতাংশ বই বিক্রি করতে পেরেছেন।
“২১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে আর বিক্রি নেই। একটা দুইটা বই কিনছে পাঠকরা৷ ঘুরতে আসতেছে অনেকে। পাঠক হিসেবে আসছে খুবই কম।”
আলোঘর প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী রাকিবুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেলায় আসা মানুষ অনুযায়ী বিক্রি খুবই কম। হয়ত তাদের নতুন চাহিদা তৈরি হয়েছে।”
তবে অন্যপ্রকাশ প্যাভিলিয়নের বিক্রেতা মেহেরান লিনা বলছেন, বিক্রি কিছুটা কমলেও হুমায়ুন আহমেদের বই থাকায় তাদের ততটা কমেনি।
“ভিড় অনুযায়ী সেল কম। ছুটির দিনে অনেক ভিড় হয়েছে, কিন্তু সে তুলনায় বিক্রি হয়নি; ঘুরতে আসছে মানুষ।”