আশা জাগানোর উৎসবে শিশুরা পেল নিজেদের জগৎ

আরবান গার্ডেনিং, রোবোবাইটস আর রিকশা পেইন্টিংয়ের কর্মশালাতেও ছিল আগ্রহীদের অংশগ্রহণ।

শাহরিয়ার নোবেলবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2023, 05:56 PM
Updated : 10 Feb 2023, 05:56 PM

“এখানে এসে খুব ভাল লাগছে। বাংলাদেশের পতাকা আঁকছি। বাংলাদেশকে অনেক ভালবাসি।”

আপন মনে রঙ পেন্সিল দিয়ে বাংলাদেশের ছবি আঁকার সময় বলছিল পাঁচ বছরের সিরাজুম মুনীরা।

শুক্রবার ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সে ব্র্যাকের ‘হোপ ফেস্টিভালে’ এসেছে মা সানজিদা আফরিনের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল আশা জাগানোর এ উৎসবের ‘খেলার জগৎ’ স্টলে।

এক থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের মেধাবিকাশে শিশুর জগতকে কীভাবে সাজানো যায়, অভিভাবকেরা শিশুদের কৌতূহলী ও সৃষ্টিশীল করতে তাদের চারপাশকে কেমন রাখতে পারেন- তা নিয়ে সাজানো হয়েছে এ স্টল।

মা সানজিদা আফরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “বাচ্চাদের ব্যাপারে আসলে আমরা এভাবে ভাবি না। সবার মতো করে আমরা তাদের বড় করি। কিন্তু তাদেরও যে একটা জগৎ আছে, সেটা যদি তাদের দেওয়া যায়- তাহলে তারা আরও কত বুদ্ধিদীপ্ত ও সৃষ্টিশীল হয়ে উঠতে পারে- সেটিই জানলাম এখানে এসে।”

ব্র্যাকের ৫০ বছরের পথচলা আর বাংলাদেশের মানুষের দৃঢ়তা, সাহস ও এগিয়ে যাওয়ার শক্তি উদযাপনে শুরু হওয়া ‘হোপ ফেস্টিভালে’র দ্বিতীয় দিন শুক্রবারে কথা হচ্ছিল তাদের সঙ্গে।

‘খেলার জগৎ’ স্টল সাজানো হয়েছে চার ভাগে। স্বপ্নের ভুবন নামের জগতে রাখা হয়েছে নানা ধরনের খেলনা, যা দিয়ে তারা তাদের মতো খেলতে পারছে; লেখাপড়া কিংবা কাজ করে ক্লান্ত হয়ে গেলে শিশু যেন নিজের মতো থাকতে পারে সেজন্য রাখা হয়েছে এই ভুবন।

নানা গল্প, ছড়ার বই আর তাদের নিজেদের গল্প শোনার জন্য করা হয়েছে গল্পের ভুবন, তার পাশেই আঁকাআঁকির জন্য করা হয়েছে রঙের ভুবন। স্টলের বাইরে দোলনা, কাদামাটি দিয়ে খেলার মতো নানা আয়োজনে সাজানো হয়েছে বাইরের জগৎ।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভলপমেন্টের (বিআইইডি) প্লে ল্যাবের উদ্যোগে এ স্টল করা হয়েছে। এটির সঙ্গে যুক্ত ব্র্যাক আইইডির প্রোগ্রাম অর্গানাইজার ইসরাত জাহানের ভাষায়, “এটি শিশুদের একটি আদর্শ জগত।”

শিশুদের মেধাবিকাশের জন্য এক থেকে পাঁচ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তখন যদি আমরা তাদের একটা সুন্দর পরিবেশ দিতে পারি, তাহলে তারা ভবিষ্যতের জন্য আদর্শ নাগরিক হয়ে উঠতে পারবে। আমাদের প্লে ল্যাবের কারিকুলামগুলোও এভাবেই সাজানো।

“তারই প্রতিফলন আসলে আমরা এখানে করতে চেয়েছি। যাতে অভিভাবক শিশুদের এখানে নিয়ে এসে বুঝতে পারেন শিশুদের কীভাবে বড় করা উচিত।”

ছেলে ওরহা নুমায়ের খানসহ পরিবারের পাঁচ শিশুকে নিয়ে খেলার জগতে এসেছেন গৃহিণী খাদীজা রুনা। আগা খান অ্যাকাডেমিতে পড়া ছেলের কাছে এ পরিবেশ ‘অনেক ডিফ্রেন্ট’।

খাদীজা রুনা বললেন, “বাসায় তো বাচ্চারা এই পরিবেশ, কাদামাটি পায় না। এটা দারুণ। আমার ছেলেকে দেখলাম প্লেন বানাচ্ছে, দেবরের বাচ্চা রঙ তুলি নিয়ে বসে গেছে, সবাই যার যেটা ভাল লাগছে করছে। ওদের সামনে সুযোগগুলো না নিয়ে আসলে তো আমরা বুঝব না কি অমিত প্রতিভা নিয়ে ওরা এসেছে।“

স্টলে শিশুদের মধ্যে মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়া এবং সম্পদ পুনঃব্যবহারের ব্যাপারে তাদের সচেতন করার চেষ্টাও দেখা গেল।

আইইডির প্রোগ্রাম অর্গানাইজার ইসরাত বলেন, “আমাদের এখানে শিশুদের খেলনায় দুরবিন আছে, হুতুম পেঁচা আছে- এগুলো টিস্যু রোলের কার্টুন আর রঙিন কাগজ দিয়ে করা। এগুলোর মাধ্যমে আমরা শিশুদের মধ্যে ছোটবেলাতেই রিসাইক্লিংয়ের জ্ঞানটা দিয়ে দিতে চাই।“

সন্তান বড় করা নিয়ে স্টলটিতে আয়োজিত এক সেশনে এসে কথা বলেন সোশাল মিডিয়ার আলোচিত মুখ ‘বাপ কা বেটা’ ব্যান্ডের শুভাশীষ ভৌমিক, ছেলে ঋতুরাজ ভৌমিক ও ঋতুরাজের মা মৌসুমী সাহা।

শুভাশীষ ভৌমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সন্তান বড় করার ক্ষেত্রে কোনটা ভালো চর্চা হতে পারে তা নিয়ে আমরা কথা বললাম। ভালো এই চর্চাগুলো যদি আমরা করতে পারি- তাহলে শিশুরা সঠিকভাবে বড় হবে, ভায়োলেন্ট কিংবা গোমড়ামুখো হবে না।

“আমরা খুব ট্রেডিশনাল শিক্ষার মধ্যে আছি, বাচ্চারা ভয় পাচ্ছে পড়াশোনাকে। বাচ্চারা যে খেলার মাধ্যমে শিখতে পারে, খেলতে খেলতে তাদের মূল্যবোধ গড়ে উঠতে পারে, তা আমরা ভাবছি না।“

বিভিন্ন কর্মশালা, প্রদর্শনী, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ও কনসার্টের মধ্য দিয়ে উৎসবের দ্বিতীয় দিন পার হয়েছে।

এ দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল অংশগ্রহণমূলক নানা কর্মশালা, যেখানে শিশু, তরুণসহ সব বয়সের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। আরবান গার্ডেনিং, রোবোবাইটস আর রিকশা পেইন্টিংয়ের কর্মশালাতেও ছিল আগ্রহীদের অংশগ্রহণ।

এ দিন হস্ত ও কুটির শিল্প কারিগরদের সফলতার গল্প নিয়ে পরিবেশনা নিয়ে আসে ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেস। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ‘ইশারা ভাষায়’ আহসান হাবিব ও তার দল একটি পরিবেশনা মঞ্চস্থ করেন।

এছাড়া যাত্রিকের পরিচালনায় ‘অলওয়েজ আ ওয়ে: ফিফটি স্টোরিজ অব কারেজ অ্যান্ড হোপ’ শীর্ষক নৃত্যনাট্য, লিঙ্গসমতা নিয়ে ‘সমতন্ত্র’ শীর্ষক নবনীতা চৌধুরীর পরিবেশনা উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা।

দিনের শেষভাগে রেনেসাঁ, ফিডব্যাক, ইমন চৌধুরী ও তার দল, মিফতাহ জামান ও গার্ল পাওয়ার ব্যান্ডের সংগীতে মেতে ওঠেন সবাই।