দেশের চার সমুদ্র বন্দরকে মহাপিবদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
Published : 27 May 2024, 11:32 AM
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে তাণ্ডব চালাতে চালাতে স্থলভাগে উঠে আসার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল, পরিণত হয়েছে গভীর স্থল নিম্নচাপে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে গভীর স্থল নিম্নচাপটি সোমবার সকাল ১০টার দিকে যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল।
এটি আরো উত্তরপূর্ব দিক অগ্রসর হয়ে শক্তি হারিয়ে স্থল নিম্নচাপে এবং পরে লঘুচাপে পরিণত হবে। এক পর্যায়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে।
ঝড়ের বিপদ কেটে যাওয়ায় বন্দরের জন্য সংকেতও কমিয়ে এনেছে আবহাওয়া অফিস।
পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাপিবদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে ও সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
গত ২২ মে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় শনিবার সন্ধ্যায়। তখন এর নাম দেওয়া হয় রেমাল। রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল থাকায় মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ১০ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয় তখন।
রেমাল ঠিক কখন উপকূলে আঘাত হেনেছিল, তা নিয়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসের ভাষ্যে গড়মিল পাওয়া যাচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান রোববার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ রোববার দুপুরেই উপকূল স্পর্শ করেছিল। সন্ধ্যা ৬টার পর এর কেন্দ্রভাগ উপকূলে উঠে আসতে শুরু করে।
কিন্তু ভারতীয় আবহাওয়া অফিস বলছে ঝড়ের কেন্দ্রভাগ উপকূলে উঠে আসতে শুরু করে রোববার মধ্যরাতে। ওই সময়টাতেই তীব্র ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে বলে আমাদের খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা জানান।
সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় আবহাওয়া অফিসের নতুন বুলেটিনে বলা হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল পুরেপুরি স্থলভাগে উঠে এসেছে এবং ঝড়ের কেন্দ্রভাগ খুলনার কয়রা এলাকায় অবস্থান করছে।
বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হতে হতে দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে এ ঘূর্ণিবায়ুর চক্র ‘প্রবল’ থেকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে বলে বুলেটিনে আভাস দেওয়া হয়।
অবশ্য স্যাটেলাইট তথ্যের ভিত্তিতে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার ঝড়ের যে গতিপথ দেখিয়েছে, তাতে ওই সময় রেমালের কেন্দ্রভাগ ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছিল।
বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ সে সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মাঝরাত থেকেই অতিক্রম শুরু হয়েছে৷ এখনো পুরোপুরি করেনি, সেন্টারটা এখন ল্যান্ডে আছে৷ আরও ২/৩ ঘণ্ট লাগবে পুরোপুরি অতিক্রম করতে৷"
এ ঝড় উপকূলে আঘাত হানার পর রাত দেড়টায় পটুয়াখালীতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১ কিলোমিটারে উঠেছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে জলোচ্ছ্বাসে, ঘর ভেঙে, দেয়াল ধসে পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, ভোলা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে ছয়জনের মৃত্যুর খবর এসেছে।
ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দেশের উপকূলীয় এলাকার দেড় কোটি গ্রাহকের সংযোগ বন্ধ রেখেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
স্বাভাবিকের চেয়ে সাত-আট ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারের চাপে সাতক্ষীরা, বরগুনাসহ কয়েক জেলায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে শত শত গ্রাম।
তবে ঝড়ের বিপদ পুরোপুরি কেটে যাওয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে।