আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা থাকায় আগামী ৭ অগাস্ট পর্যন্ত হাই কোর্টের রায় কার্যকর হবে না বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. সাইফুজ্জামান।
Published : 14 Jul 2024, 07:33 PM
সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে।
রোববার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ ২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে।
রায় প্রকাশের পর এই বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. সাইফুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায় প্রকাশ হয়েছে, এবার আমরা নিয়মিত আপিল ফাইল করব।
“তবে আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা থাকায় আগামী ৭ অগাস্ট পর্যন্ত হাই কোর্টের রায় কার্যকর হবে না।”
রায়ে বলা হয়েছে, “২০১২ সালে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টের দেওয়া রায় ও আদেশ, ২০১৩ সালের লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ কর্তৃক তা বহাল ও সংশোধিত আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির অফিস আদেশের (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনির কোটা) আলোকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হলো।
“একইসঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী, উপজাতি-ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ, যদি অন্যান্য থাকে, কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব, আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র জারি করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।”
রায়ে হাই কোর্ট বলেছে, প্রয়োজনে উল্লিখিত শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এ রায় বিবাদীদের জন্য কোনো বাধা তৈরি করবে না। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করায় সরকারের স্বাধীনতা রয়েছে।
২০১৮ সালের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।
সেই আবেদনের চূড়ান্ত শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল গত ৫ জুন।
সেই রায়ের অপারেটিভ বা বাস্তবায়নের অংশ প্রকাশিত হয় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।
তার আগেরদিন বুধবার কোটার বিরোধিতায় আন্দোলনের মধ্যে সব পক্ষকে চার সপ্তাহ স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।
কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত ওইদিন বলেছে, কোটা নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল বিভাগ আবার বিষয়টি শুনবে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৭ অগাস্ট।
হাই কোর্টের আংশিক প্রকাশিত রায়ে বলা হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে যে ২০১৮ সালে যে পরিপত্র সরকার জারি করেছিল, তা ‘অবৈধ এবং আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’।
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য যে কোটা সরকার বাতিল করেছিল, তা পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে।
সেই সঙ্গে জেলা কোটা, নারী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা এবং উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও জাতিগোষ্ঠীর জন্যও কোটা বহাল করতে হবে।
এই এ রায় পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে কোটা পুনর্বহালে আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সেই সঙ্গে হাই কোর্ট বলেছে, সরকার যদি ওইসব কোটার শতকরা হার বা অনুপাত বাড়াতে, কমাতে বা পরিবর্তন করতে চায়, এই রায় সেক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না।
পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে কোনো নির্ধারিত কোটা পূরণ না হলে সরকার মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ দিয়ে সেই পদ পূরণ করতে পারবে।
হাই কোর্টের রায়ের পর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। প্রথম কয়েক দিন মিছিল, মানববন্ধনের মত কর্মসূচি থাকলেও গত সপ্তাহ থেকে শুরু হয় তাদের অবরোধ কর্মসূচি, যার নাম তারা দিয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা শুরুতে চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করলেও এখন তাদের দাবি এক দফায় এসে ঠেকেছে।
তাদের দাবি হল- সব গ্রেডে সব ধরনের ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে৷
আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোববার গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন ও রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। পরে তারা জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটা সংস্কারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন।
কোটা সংস্কার: রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
কোটা সংস্কারের পথ খুলল হাই কোর্টের রায়ে
সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে 'স্থিতাবস্থা' জারি