আদালত অবমাননার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকার সাজা মানলেও জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
Published : 11 Jun 2015, 12:45 AM
উল্টো এ রায়কে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতির ‘মানসিক অসুস্থতার ফল’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বুধবার ব্রিটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের জরিমানা করার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ায় ৫০ ব্যক্তির মধ্যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং কাঠগড়ায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল। সাত দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা না দিলে তাকে আরও এক মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত বাকি ২২ জনকে প্রথমবারের মতো এ ধরনের আচরণ করায় সতর্ক করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
গত ১ এপ্রিল এই ২৩ জনের বিরুদ্ধে অবমাননার অভিযোগ এনে রুল জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার আদালত অবমাননার বিষয়ে আদেশের পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী রায়ের অনুলিপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কাঠগড়ায় যাবেন না বলে তার সিদ্ধান্তে দীর্ঘসময় ধরে অনড় থাকেন। এসময় তার সহঅভিযুক্তরাও আদালত কক্ষে অবস্থান নিয়ে হইচই করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে সহঅভিযুক্ত এবং তাদের সঙ্গে আগতরা বেরিয়ে এজলাসকক্ষের বাইরে অবস্থান নেন।
পরে রায়ের কপি হাতে দেওয়া হলে দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে স্বেচ্ছায় কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ান জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সাজাভোগ শেষে দুপুর ১টা ৪৯ মিনিটে আদালতের বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন,“আজকের আদালত অবমাননার রায়টা তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। তিনজন বিচারপতির মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। যেখানে বিচারপতিরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না,সেখানে ন্যায়বিচার হয় না।
“যখন তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, তখন যুক্তি থাকে না বলেই তারা আইনের আড়ালে আত্মগোপন করেন। এখানে এই মামলাটার বোঝার বিষয় আছে। আদালত অবমাননার মামলায় তিনটির একটি বিষয় প্রমাণ করতে হয়। স্ক্যান্ডালাইজিং দ্য কোর্ট,কোর্টের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা,অবস্ট্রাকশন অব দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব দ্য জাস্টিস,বিচারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, আদালতের ডিগনিটি ক্ষুণ্ন করা।
“বিচারপতিরা আদেশের কোথাও সুস্পষ্টভাবে বলেননি, কোন জায়গাতে আমরা বা বিশেষত আমি এই তিনটির কোনো বিষয় ভঙ্গ করেছি। তাদের যুক্তি নাই বলেই তিন বিচারপতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন এ মামলার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত।”
আদেশের সময় এজলাসকক্ষে অভিযুক্তদের দাঁড় করিয়ে রাখাটা ‘অভদ্রতা’ মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ বলেন,“পৃথিবীর মধ্যে এটা অভদ্রতাজনিত ব্যবহার। যখন রায় পড়েন তখন সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে রাখা অর্থহীন। এটা প্রাগৈতিহাসিক, মধ্যযুগীয় ঘটনা। কিন্তু তারা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। তারপর বলেছেন বয়স, কিন্তু বয়সের সম্মান আমি তাদের কাছে কামনা করি না।”
এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন,“আমি আপিল করব বলেই বলেছি, যখন তারা আমাকে, একজনকে ভিনডিকটিভ করা, যুক্তি না থাকলে হঠাৎ একজনকে খুঁজে বের করা হয়। আমার বিরুদ্ধে কোনো কিছু নাই।
“আমি তো উচ্চ আদালতে আপিল করব। এখন বিষয়টা আপনারা বিবেচনা করেন।”
জরিমানা না দিলে সেটা কি আদালত অবমাননা হবে না-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি কোনো জরিমানা দেব না। আপিল করব। আপিলে যা হয় দেখা যাবে।
“আমি কোথাও অন্যায় করিনি, কোথাও ভুল করিনি। সমালোচনা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা আজকে একজন নাগরিক গণতান্ত্রিক দেশে কথা বলতে পারব না? যেই দেশের জন্য আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেই দেশের ব্যাপারে কোনো বক্তব্য রাখতে পারব না,তাতো হয় না।”
কাঠগড়ায় দাঁড়ানো নিয়ে বিলম্বের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন,“এখানে আমি পরিষ্কার করে বলেছি, আপনাদের রায়ের কপি দেন আমাকে। আপনারা দেখেন, জজ সাহেবরা ভুলটা কোথায় কোথায় করেছেন। বক্তব্য না শুনে হঠাৎ দ্রুত বের হলেন। যদি দেখা যায়, উচ্চতর কোর্টে দেখা যায় যে, আমার বিরুদ্ধে দেওয়া তাদের এ রায়টা ভুল হয়েছে…যদি…তাহলে তারা কি আমার এই জীবনের সময়টা ফিরিয়ে দিতে পারবেন? না কি তিনজন বিচারপতি আমার এই জায়গায় এসে বসে থাকবেন এক ঘণ্টা? আমি সেই প্রশ্নটা করার জন্য তাদের বিবেচনাটাই কামনা করেছি।”
জাফরুল্লাহ বলেন,“সম্পূর্ণ রায়টাই যদি পড়ে দেখেন, পুরোটাই উষ্মা আর রাগ। ডেভিড বার্গম্যানের যে রায়ে ১০৫টি প্যারাগ্রাফ আছে তার মধ্যে ৩১টি প্যারাগ্রাফে বার্গম্যানকে ছোট করা হয়েছে। অথচ সেটি ছিল মুক্তিযুদ্ধে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে, অথচ তা নিয়ে কোনো ডাইরেক্টিভ (নির্দেশনা)নাই।
“এত সময় অপব্যয় করার পরেও এই জাতীয় কথার প্রয়োজন আছে। আমরা বিবৃতিদাতারা বোঝাতে চেয়েছি,দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থেই আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন আছে।”
রায় না মানা আদালত অবমাননার শামিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন,“আমি বলেছি, আমাকে লিখিত দেখান। আমি একপলক দেখে নিলেই তো হবে। তারাই তো দেরি করেছেন লিখিত আনতে। লিখিত আনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি আসামির কাঠগড়ায় উঠেছি।”