ভারতের শিলংয়ে গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে চিকিৎসার জন্য ‘তৃতীয় কোনো দেশে’ নিয়ে যেতে চান তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।
Published : 19 May 2015, 10:10 AM
তবে অবৈধ অনুপ্রবেশ মামলার আসামি সালাহ উদ্দিনের এখনই ছাড়া পাওয়ার কোনো সুযোগ দেখছে না ভারতীয় পুলিশ।
দুই মাস আগে ঢাকায় ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর গত ১১ মে শ খানেক কিলোমিটার দূরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিবের সন্ধান মেলে।
আচরণ অসংলগ্ন মনে হওয়ায় বাংলাদেশের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে প্রথমে একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে স্থানান্তর করা হয় শিলং সিভিল হাসপাতালে। সেখানেই সোমবার রাতে তার সঙ্গে দেখা করেন সাবেক এমপি হাসিনা।
বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধের মধ্যে ‘নিখোঁজ’ স্বামীর সন্ধান জানার পর ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন হাসিনা। ভিসা পাওয়ার পর রোববার রাতে বিমানে কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন তিনি।
কলকাতা থেকে সোমবার সকালে রওনা হয়ে শিলং পৌঁছে সন্ধ্যায় হাসপাতালে যান সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী। পুলিশের অনুমতি মেলার পর রাত ৯টার দিকে স্বামীর সঙ্গে ১৫ মিনিট কথা বলার সুযোগ পান তিনি।
সাক্ষাতের সময় উপস্থিত বিএনপি নেতা আব্দুল লতিফ জনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একসঙ্গে হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় দুজনই কাঁদছিলেন।
স্ত্রীর কাছে সালাহ উদ্দিন জানতে চান সন্তানদের খবর। তিনি বলছিলেন, সন্তানদের দেখতে তিনি ঢাকায় ফিরতে চান।
হাসিনার সঙ্গে জনি ছাড়াও ছিলেন তার ভগ্নিপতি মাহবুব কবির ও আরেকজন আত্মীয়।
হাসিনা তার স্বামীর সন্ধানের জন্য ভারত সরকার ও মেঘালয় পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
বেরিয়ে আসার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের হাসিনা বলেন, “আমার স্বামী খুব বেশি অসুস্থ। আমরা চেষ্টা করব, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে তৃতীয় কোনো দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
বিএনপি নেতা জনি শিলংয়ে পৌঁছান তিনদিন আগে। দলীয় নেতাকে দেখে এসে তিনি রোববার বলেছিলেন, সালাহ উদ্দিনের ‘স্মৃতিভ্রম’ হচ্ছে। সোমবার সকালে সালাহ উদ্দিনের সিটি স্ক্যানও করা হয়েছে।
৫৪ বছর বয়সী সালাহ উদ্দিন নিজেও দাবি করেছেন, অচেনা এক দল লোক তাকে তুলে নিয়েছিল। এরপর থেকে আর কিছুই তিনি মনে করতে পারছেন না।
স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর হাসপাতালের বারান্দায় সালাহ উদ্দিনের সঙ্গেও কথা বলার সুযোগ পান সাংবাদিকরা।
তিনি বলেন, “দেশে তো এখন রেড এলার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল। এটা উচিৎ হয়নি। আমি তো কোনো সাজাপ্রাপ্ত দাগি আসামি নই। তো কেন করেছে আমি তো জানি না।”
তবে ইস্ট খাসি হিল জেলার পুলিশ সুপার এম খাড়খাড়ং বলছেন, পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন সালাহ উদ্দিনের এখনই ছাড়া পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এখন তার ছাড়া পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি।”
হাসপাতাল থেকে যদি পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে আদালতে হাজির করে, তাহলে বাংলাদেশের এই নেতাকে ভারতের কারাগারে যেতে হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড।
আইনজীবীরা বলছেন, আদালতে হাজির করার পর যদি সরকার তাকে ফেরত পাঠানোর আবেদন করে, আদালত তা বিবেচনা করতে পারে।
বিএনপি জোটের লাগাতার অবরোধের মধ্যে লুকিয়ে থেকে বিবৃতি পাঠিয়ে আসা সালাহ উদ্দিনকে গত ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয় বলে তার পরিবারের দাবি। এজন্য হাসিনা আহমেদ ও বিএনপি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়ী করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই তা অস্বীকার করা হয়।